বিশেষ প্রতিনিধিঃ দায়িত্ব নেয়ার সাড়ে ৩ বছরের মাথায় মৌলভীবাজার পৌরসভার চেহারা আগের চেয়ে অনেকটা বদলেছে। অনেকাংশে জলাবদ্ধা মুক্ত হয়েছে পৌরসভা। শহরের একাধিক রাস্তা সম্প্রসারণ করতে শতাধিক দেয়াল ভেঙ্গে প্রসংশিত হয়েছেন পৌর মেয়র আলহাজ্ব মোঃ ফজলুর রহমান। সাবেক মেয়রের রেখে যাওয়া ১৩ কোটি টাকার ঋণও পরিশোধ করেছেন তিনি। ইতিমধ্যে পৌরসভার শিক্ষার মানোন্নয়নে বিভিন্ন প্রদক্ষেপ নিয়েছেন ডায়নামিক এই জননেতা। তবে সব প্রতিকূলতা কাটিয়ে নির্বাচনকালিন সময়ে দেয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন মেয়র আলহাজ্ব মোঃ ফজলুর রহমান।
১৮৮৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় মৌলভীবাজার পৌরসভা। পৌরসভার আয়তন ১০.৩৬ বর্গ কিলোমিটার। ৯টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত ওই পৌরসভা। ১৯৩২ সালে প্রথম চেয়ারম্যান নির্বাচন হন খান বাহাদুর দেওয়ান আলাউদ্দিন আহমদ চৌধুরী। পরবর্তীতে ১৯ ডিসেম্বর ১৯৯৩ সালে ক শ্রেণীতে উন্নতি হয়। পৌরসভার মোট ভোটার ৩৫ হাজার ৯৯ জন। এর মধ্যে পুুরুষ ভোটার ১৮ হাজার ৯’শ ৮৬ জন এবং নারী ভোটার রয়েছেন ১৬ হাজার ১’শ ১৩ জন।
২০১৬ সালের ৪ঠা ফেব্রুয়ারী আ’লীগ থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেন আলহাজ্ব মোঃ ফজলুর রহমান। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বিএনপি মনোনীত ধানের শীর্ষের অলিউর রহমানকে ৬ হাজার ২’শ ৭ ভোটে পরাজিত করেন তিনি। বিজয়ী এ নেতা এই প্রথম বারই কোনো নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করে বিপুল ভোটে বিজয়ী হন।
পৌরসভা প্রতিষ্ঠার পর থেকে ধারাবাহিকভাবে অনেকেই পৌরসভার মসনদে বসেছেন। কিন্তু বর্তমান পৌর মেয়রের মতো ঝুঁকি নিয়ে পৌরসভার উন্নয়নে কাজ করা অনেক মেয়রের পক্ষে সম্ভব হয়নি। এমনটিই মন্তব্য করেন পৌর নাগরিকবৃন্দ। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দিনের পুরো সময়টাই পৌরবাসীর উন্নয়নে ব্যয় করছেন এই পৌর পিতা।
মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়র আলহাজ্ব মোঃ ফজলুর রহমান পৌরসভার দায়িত্ব পালন করার পাশাপশি জেলা আ’লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে তিনি জেলা ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
নাগরিকরা বলেন, পৌরবাসীর যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম এম সাইফুর রহমান রোড। ওই রোডেই এমবি ক্লথ ষ্টোর ও বিলাস ডিপার্টমেন্টাল ষ্টোর নামে বড় দুটি শপিং মহল মুখামোখি অবস্থানে থাকায় প্রতিনিয়ত চরম যানজট লেগে থাকে। বিশেষ করে কোনো উৎসবের সময় ওই রোড দিয়ে চলাচল অনেকটা অসম্ভব হয়ে পড়ে। একটি বিশ্বস্থ সূত্র জানায়, প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের ম্যানেজ এবং বিশেষ সময়ে তবরুকের মাধ্যমে দুটি প্রতিষ্ঠান চালিয়ে যাচ্চে তাদের রমরমা বাণিজ্য। জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্তারা অনেকটা দেখেও না দেখার ভান করছেন। এনিয়ে পৌর নাগরিকদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
পৌরসভা কার্যালয়ে গত সাড়ে বছরের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে একান্ত আলাপকালে পৌর মেয়র আলহাজ্ব মোঃ ফজলুর রহমান প্রতিবেদককে বলেন, দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে পৌর জনমিলন কেন্দ্রে শহরের সিনিয়র সিটিজেনদের জন্য বিনোদন কেন্দ্র স্থাপন করেছি। এখান থেকে সিনিয়র নাগরিকরা বিনোদনের পাশাপাশি চিকিৎসা সেবাও নিতে পারবেন। সর্বদা তাদের জন্য একজন এমবিবিএস ডাক্তার রাখা হবে। পাশাপাশি তাদের জন্য বড় একটি লাইব্রেরী গড়ে তুলা হয়েছে। এখানে বসে বই পড়তে পারবেন আবার ইচ্ছা করলে বাড়িতেও নিতে পারবেন। সর্বোপরি সকল ধর্মের মানুষের ইবাদত করার জন্য নির্ধারিত জায়গা তৈরি করেছি। ওই বিনোদন কেন্দ্রের সৌন্দর্য্য মন্ডিত করনে নানা জাতের ফুলের গাছ লাগানো হয়েছে। এবিষয়ে হাওর বাঁচাও, কৃষক বাঁচাও ও কৃষি বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও মৌলভীবাজার পৌরসভার সিনিয়র নাগরিক সিরাজ উদ্দিন আহমদ বাদশাহ বলেন, এটা পুরো দমে চালু হলে এখানে বসে অবসর সময় কাটাতে পারব। আশা করি এই বিনোদন কেন্দ্র সিনিয়র নাগরিকদের মনের খোরাক হবে।
পৌর শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে আপনার ভুমিকা কি ছিল এমন প্রশ্নের জবাবে মেয়ের বলেন, ২০১৮ ও ২০১৯ সালে মৌলভীবাজার পৌর শহরে জলাবদ্ধতা হয়নি। এর একমাত্র কারণ সকল নাগরিকদের সহযোগীতায় শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত কুদালিছড়া খনন করেছি। এটা খননের আগে প্রতি বছরই শহরে জলাবদ্ধতা হতো। অল্প বৃষ্টিতেই রাস্তায় পানি জমে যেতো। তখন দুর্ভোগের অন্ত ছিলনা পৌর নাগরিকদের। কিন্তু ওই ছড়াটি খননের পর থেকে এক দিনের জন্যও এখন জলাবদ্ধতা হয়নি। গত বর্ষা মৌসুমে ওই ছড়া দিয়ে নৌকা চলেছে। পৌর এলাকার রাস্তা বড় করার জন্য মেয়র ধড়কাপন, শ্যামলি, টিবি হাসপাতাল রোড, মুসলিম কোয়াটার, কে বি আলাউদ্দিন রোড, আকিকুল ইসলাম রোড, সোনাপুর রোড, পশ্চিম ধড়কাপন, শেখের গাঁও, বড় বাড়ি ও শাহ মোস্তফা কলেজ এলাকা সহ অনেক রাস্তার পার্শ্ববর্তী বাড়ির সিমানা প্রাচীর ও বাড়ির দেয়াল ভেঙ্গে ৮ ফুটের রাস্তা ১২ ফুট, ১০ ফুটের রাস্তা ১৪ ফুট ও ১৪ ফুটের রাস্তা ১৮ ফুট করেছি। যার ফলে প্রতিটি রাস্তায় দুটি গাড়ি অনায়াসে অতিক্রম করতে পারছে। পাশাপাশি কলেজের শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য কোর্ট এলাকা থেকে কলেজ পর্যন্ত কলেজের বাউন্ডারি ভেঁঙ্গে ফুটপাত নির্মাণ করেছি। এটা করায় শিক্ষার্থীরা স্বাচ্ছন্দ্যে কলেজে যেতে পারছে। তবে দেয়াল ভাঙ্গতে গিয়ে আমি কোনো রাজনীতিক প্রতিবন্ধকতার সম্মুখিন হইনি। মেয়র বলেন, শহরের কুসুমবাগ এলাকার যানজট নিরসনের জন্য ওই এলাকা থেকে সিএনজি স্ট্যান্ড স্থানান্তর করা হয়েছে। ফলে অনেকটাই যানজট মুক্ত হয়েছে ওই এলাকা। তিনি আরও বলেন, শহরের বিতর থেকে সিএনজিকে নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য আমাদের চেষ্টা অব্যাহত আছে। বাসা বাড়ি থেকে ময়লা অপসারনেও তিনি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। প্রতিদিন সকালেই গাড়ি দিয়ে শ্রমিকরা বাসা বাড়ির ময়লা নিয়ে যায়। এর ফলে অনেকটা দুর্গন্ধমুক্ত থাকে পুরো শহর। মেয়াদের মধ্যে কিশোর-যুবকদের বিনোদনের জন্য পৌর শহরের শান্তিভাগ এলাকায় মনুনদীর পারে বিনোদন কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে মেয়রের। এখানে ফুল বাগান, টয়লেট, ফ্রি ওয়াইফাই ও বসার জায়গা অন্যান্য সুবিধাসহ বিনোদন কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে পৌর অভিভাবকের।
মেয়র ফজলুর রহমান আরও বলেন, শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য ইতি মধ্যে পৌরসভার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের নিয়ে মতবিনিময় সভা করেছি। এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের পরিকল্পনা রয়েছে তার। তবে অনুসন্ধানে দেখা গেছে বাস্তবে তা হচ্ছে না। অনেক বিদ্যালয়ে ঠিক মতো পাঠদান হচ্ছে না। বিদ্যালয়ে পাঠদান না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা কোচিং মুখি হয়ে পড়েছেন। পৌর শহরে অনেকটা ব্যাঙের ছাতার মতো কোচিং সেন্টার গড়ে উঠেছে। ফলে পৌরসভার মধ্যে অবস্থিত বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তেমন ভালো ফলাফল করতে পারছে না। পাবলিক পরীক্ষায় অর্ধেকেরও বেশি শিক্ষার্থীরা ফেল করছে। গত দিন বছর যাবত ধারাবাহিক ফলাফলের দিক দিয়ে পিছিয়ে রয়েছে ওই শহর। এনিয়ে মৌলভীবাজার মহিলা কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, ইংরেজি ও গণিত বিষয়ে ক্রাস প্রোগ্রাম হাতে নিতে হবে। শিক্ষকদের জবাবদিহির আওতায় আনা হলে ভালো ফলাফল সম্ভব। পাশাপাশি অভিভাবকদের সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ২০১৬ সালের ৪ঠা ফেব্রুয়ারী আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে একজন খাদিম হিসেবে কাজ করে যাচ্ছি। নিজের চেয়ার এবং দলীয় পদবীর অপব্যহার করে কখনও নীতিবহির্ভূত কাজ করিনি এবং আগামীতেও করবনা। তিনি বলেন, রাজনীতিকভাবে পৌরসভায় বিভিন্ন দলের কর্মী এবং সমর্থকরা বসবাস করলেও পৌরবাসীর উন্নয়নে দল-মতের উর্ধ্বে উঠে সকল দলের কর্মীদের সহযোগীতা পেয়েছি। দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে কোনো কাজকে মূল্যায়ন করিনি। দলীয় কারনে আজ পর্যন্ত কাউকে হয়রানিও করিনি।
আপনার দেয়া প্রতিশ্রুতি কতটুকু বাস্তবায়ন করতে পেরেছেন এমন প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে জনগণের গুরুত্ব অনুযায়ী যেটা আগে প্রয়োজন সেটা করেছি। বাকী কাজ গুলো ধারাবাহিক ভাবে করছি। আশা করি মেয়াদের মধ্যে বাকী কাজ সম্পন্ন করতে পারব।
প্রাকৃতিক জলাশয় বেরীলেইকের উন্নয়নের বিষয়ে পৌর মেয়র বলেন, ওই জলাশয়ে নাগরিকদের আনন্দের ব্যবস্থা, ট্রাক টার্মিনাল ও পৌরসভার বহুতল অফিস ভবন নির্মাণের জন্য বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ করেছি। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারলে শহরের সুন্দর্য বহুগুনে বেড়ে যাবে। স্থানটি একনজর দেখতে শহরের বাহির থেকেও পর্যটকরা আসবেন। শহরের সুন্দর্য বর্ধনের জন্য উচ্ছেদ করা হয়েছে বিল বোর্ড। পৌরসভার অনুমতি ব্যতিত কোনো জায়গায়ই বিল বোর্ড লাগাতে দেয়া হচ্ছে না। এক্ষেত্রে পৌরসভার সুন্দর্য বৃদ্ধির পাশাপাশি আয়ও বাড়বে। এছাড়া পৌর মেয়র, টাউন ঈদগাহ, পশ্চিমবাজার পৌর মার্কেট, মসজিদ, মন্দির, বিদ্যালয় ও মাদ্রাসার ভবন উন্নয়নের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
দেয়াল ভেঙ্গে রাস্তা সম্প্রসারণ করে ইতিহাস স্থাপন করেছি
