স্টাফ রিপোর্টারঃ শিক্ষকদের বাণিজ্যিক মনোভাবে এবারও এইচএসসি’র ফলাফলে সিলেট বিভাগে পিছিয়ে পড়েছে মৌভলীবাজার জেলা। শিক্ষকরা নিয়মীত ক্লাসে উপস্থিত না হওয়ায় এমন বিপর্যয় হয়েছে বলে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের অভিযোগ। এদিকে অধিকাংশ শিক্ষকরা সরকারের আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে নিয়মীত কোচিং বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন। শিক্ষার্থীদের কোচিং মুখি করে গড়ে তুলছেন তারা।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে এবার সিলেট শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে মৌলভীবাজার জেলা। ক্রমান্বয়ে নানা কারণে বিগত বছরগুলোর চেয়ে ফলাফলে এবারও পিছিয়ে পড়ছে ঐতিহ্যবাহী এ জেলা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, এইচএসসি’র ফলাফল অন্যান্য জেলার চেয়ে তুলনামূল খারাপ হওয়ার পিছনে শিক্ষকদের আন্তরিকতার অভাব, সময়মতো ক্লাসে না আসা, বাণিজ্যিক মনোভাব, কোচিং বাণিজ্য এবং শিক্ষার্থীরা ক্লাসের সময় ফাস্ট ফুডের দোকান ও চায়নিজ রেস্টুরেন্টে বসে বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা, ক্লাসের সময়ে পৌর পার্কে ফুচকার স্টলে বসে সময় পার, স্মার্ট ফোন ও ইন্টারনেটের অতিরিক্ত ব্যবহার, সৃজনশীল প্রশ্ন সম্পর্কে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ধারণার অভাব এবং ক্লাসে অমনযোগীসহ বিভিন্ন কারণে এবারের এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে এ বিপর্যয় ঘটেছে।
জানা যায়, মৌলভীবাজার মহিলা কলেজ থেকে ১৫’শ ৩৩ জন পরীক্ষার্থী অংশ গ্রহণ করে উত্তির্ণ হয়েছে ৮’শ ৭৯জন। এর মধ্যে এপ্লাস পেয়েছে মাত্র ১জন। সরকারি কলেজে ১৪’শ ৭৮ জন পরীক্ষার্থী অংশ গ্রহণ করে উত্তির্ণ হয়েছে ১২’শ ৪৫জন। এর মধ্যে এপ্লাস পেয়েছে মাত্র ৩৭জন। শাহ মোস্তফা কলেজে ৮’শ ৪৬ জন পরীক্ষার্থী অংশ গ্রহণ করে উত্তির্ণ হয়েছে ৩’শ ৫৮জন। এর মধ্যে একটিও এপ্লাস নেই। কাশিনাথ আলাউদ্দিন স্কুল এন্ড কলেজ থেকে ৩’শ জন পরীক্ষার্থী অংশ গ্রহণ করে উত্তির্ণ হয়েছে ১’শ ৩৮ জন। এর মধ্যে একটিও এপ্লাস নেই। রাজনগর সরকারি কলেজ থেকে ৪’শ ৬৮জন পরীক্ষার্থী অংশ গ্রহণ করে উত্তির্ণ হয়েছে ১’শ ৯০ জন। এর মধ্যে একটিও এপ্লাস নেই। কুলাউড়া সরকারি কলেজ থেকে ৭’শ ২৮জন পরীক্ষার্থী অংশ গ্রহণ করে উত্তির্ণ হয়েছে ৩’শ ৪৭ জন। এর মধ্যে এপ্লাস পেয়েছে মাত্র ১জন। ইয়াকুব-তাজুল মহিলা কলেজ থেকে ৩’শ ৭০জন পরীক্ষার্থী অংশ গ্রহণ করে উত্তির্ণ হয়েছে ২’শ ২১ জন। এর মধ্যে এপ্লাস পেয়েছে মাত্র ২জন। এছাড়াও জেলার বড়লেখা, জুড়ী, কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গল উপজেলার একই অবস্থা। তবে সার্বিক দিক বিবেচনায় জেলার শহরের কলেজের শিক্ষার্থীদের চেয়ে গ্রামের কলেজের শিক্ষার্থীরা ভালো ফলাফল করেছে।
জেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, এবার জেলায় মোট পরীক্ষার্থী ছিল ১৫ হাজার ৯’শ ১৫ জন। এর মধ্যে ৬ হাজার ৯’শ ৬৯ জন ছেলে এবং ৮ হাজার ৯’শ ৪৬ জন মেয়ে। জেলায় সর্বমোট পাশ করেছে ৯ হাজার ৭’শ ১ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ৪ হাজার ১’শ ২১ জন ছেলে এবং ৫ হাজার ৫’শ ৮০ জন মেয়ে। সেই হিসেবে জেলায় পাশের হার ৬০ দশমিক ৯৬ শতাংশ। আর এ জেলায় জিপিএ-৫ পেয়েছে ২শ’ ৭ জন শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে ১শ’ ১০ জন ছেলে এবং ৯৭ জন মেয়ে।
ফলাফল খারাপ নিয়ে জেলার শিক্ষাবীদ, অভিবাবক ও সচেতন নাগরিকবৃন্দের মধ্যে দেখা দিয়েছে বিরূপ প্রতিক্রিয়া। তারা ফল বিপর্যয়ের জন্য শিক্ষকদের দায়ী করছেন। তারা বলেন, নিয়মিত কলেজে ক্লাস না হওয়া এবং শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্যের মানুষিকতার কারণে এ ফল বিপর্যয় হয়েছে। শিক্ষার্থীরা লাগাতার ক্লাসে উপস্থিত না হলেও কলেজের পক্ষ থেকে অভিভাবকদের সাথে যোগাযোগ করা হয়নি। যার ফলে মেধাশূন্য হওয়ার পাশাপাশি উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে এ অঞ্চল পিছিয়ে পড়ছে। এতে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় শিক্ষাসহ চাকরি’র ক্ষেত্রে অনেকটা পিছিয়ে পড়বে মৌলভীবাজার। তবে অভিভাবকদের অভিযোগ, শিক্ষকরা ক্লাসে পাঠদানের চেয়ে কোচিংকে বেশি গুরুত্ব দেন। কোচিং বাদ দিয়ে ক্লাসে পাঠদানকে গুরুত্ব দেয়া হলে এতো খারাপ ফলাফল হতো না।
জানা যায়, ২০১৮ সালে মৌলভীবাজার জেলায় পাসের হার ছিল ৫৫ দশমিক ২৫ শতাংশ। ১৪৪৯৬ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে উত্তীর্ণ হয়েছে ৮২৫৮জন। এর মধ্যে জিপিএ ৫ পেয়েছে ১ শত ১৮ জন শিক্ষার্থী। ২০১৭ সালে পাসের হার ৬৫ দশমিক ৮৩ শতাংশ। জিপিএ-৫ পায় ৭৩ জন। ২০১৬ সালে পাশের হার ৬০ দশমিক ৬২ শতাংশ, ২০১৫ সালে পাসের হার ছিল ৬৬ দশমিক ৮ শতাংশ।
এবিষয়ে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আবু সাঈদ মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, ফলাফল বিপর্যয়ে এককভাবে কেউ দায়ী নয়। ফল বিপর্যয়ে ছাত্র, শিক্ষক ও অভিবাবকদের ঘাটতি রয়েছে। কিছু কলেজে বছরের অধিকাংশ সময় বিভিন্ন পরীক্ষা থাকে। ফলে ঠিক মতো ক্লাস হয়না। যার কারণে ফলাফল খারাপ হয়েছে। কিছু দিন আগেও আমরা শিক্ষার মানন্নোয়নে বিদ্যালয় প্রধানদের নিয়ে মতবিনিময় করেছি।
এবিষয়ে মৌলভীবাজার মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আজিজুর রহমান বলেন, “আমার কলেজে তুলনামূলক কম জিপিএ নিয়ে মেয়েরা ভর্তি হয়। দূর দূরান্তের মেয়েরা এখানে ভর্তি হওয়ায় নিয়মীত ক্লাসে উপস্থিত হতে পারে না। যার কারনে তারা ভালো ফলাফল করতে পারেন। শিক্ষক সংকটও অন্যতম কারন।
শিক্ষকদের বাণিজ্যিক মনোভাবে এবারও সিলেট বিভাগে পিছিয়ে মৌলভীবাজার
