স্টাফ রিপোর্টারঃ প্রবাসী অধ্যুষিত মৌলভীবাজারে ক্রমান্বয়ে জনপ্রিয় হচ্ছে এজেন্ট ব্যাংকিং। ফলে হিসাব খোলা ও জমা অর্থের পরিমাণ উভয়ই বাড়ছে। বিশেষ করে মৌলভীবাজার অঞ্চলের প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের বড় অংশ এজেন্ট ব্যাংক থেকে তুলতে পারছেন প্রবাসীদের স্বজনরা। অনেক প্রবাসী পরিবার এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে বড় অংকের ডিপোজিটও রাখছেন। ব্যাংকের সাথে সম্পৃক্ত থাকায় এই মাধ্যমে অবৈধ লেনদেন যেমন সম্ভব নয়, তেমনি সম্ভব নয় হুন্ডির মাধ্যমে রেমিট্যান্সের টাকা পৌঁছানোও। এসব দিক বিবেচনায় এখন অনেকেই বেছে নিচ্ছেন এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা। ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে মৌলভীবাজারে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে লেনদেন বাড়ছে।
ব্যাংকিংয়ের নানান ঝামেলা এড়াতে এবং হাতের নাগালে পাওয়ায় গ্রাহকরা ঝুঁকছেন এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের দিকে। এর ফলে একদিকে যেমন নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা কাটছে, সেই সাথে বাড়ছে ব্যাংকিং সেবার পরিধিও। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে হিসাব খোলা, টাকা জমা ও উত্তোলন, টাকা স্থানান্তর (দেশের ভেতর), রেমিট্যান্স উত্তোলন, বিভিন্ন মেয়াদি আমানত প্রকল্প চালু, ইউটিলিটি সার্ভিসের বিল পরিশোধ, বিভিন্ন প্রকার ঋণ উত্তোলন ও পরিশোধ এবং সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় সরকারি সকল প্রকার ভর্তুকি গ্রহণ করা যায়।
জানা যায়, সুবিধাবঞ্চিত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে ব্যাংকিং সুবিধার আওতায় আনতে এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ পদ্ধতিতে বাড়তি চার্জ গুনতে হয় না গ্রাহককে। ফলে দ্রুত মৌলভীবাজারে জনপ্রিয় হয়ে ওঠায় ব্যাংকগুলো এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে মনোযোগ দিচ্ছে। সিনিয়র ব্যাংকাররা বলছেন, গ্রামের সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর কাছে ব্যাংকিং সুবিধা পৌঁছে দিতে এজেন্ট ব্যাংকিং চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সঠিকভাবে পরিচালনা করলে দেশের প্রত্যেক ঘরে এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দেয়া সম্ভব। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের এসব আউটলেটের মধ্যে অনেকে যুক্ত হয়েছে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের (ইউডিসি) সঙ্গে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মৌলভীবাজার জেলায় ব্যাংক এশিয়া, ইসলামী ব্যাংক, ডাচ বাংলা ব্যাংক ও এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকীক চালু করেছে। পাশাপাশি আরো বেশ কয়েকটি ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং চালু করার পরিকল্পনা করছে। ব্যাংক এশিয়ার সিলেট বিভাগীয় অফিস থেকে জানা যায়, মৌলভীবাজার ৬২ ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের (ইউডিসি) উদ্যোগতাগণ এবং ৪ ব্যক্তি ব্যাংক এশিয়ার এজেন্ট নিয়েছেন। এখানে ৪ হাজার ২’শ ৫০ জন গ্রাহক একাউন্ট খোলেছেন এবং ১ কোটি ৫০ লক্ষ টাকার ডিপোজিট রেখেছেন।
এবিষয়ে মৌলভীবাজার ব্যাংক অফিসার এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি মোঃ আবু তাহের বলেন, ব্যাংক খাতে ডিজিটালের ছোয়া লেগেছে। তথ্য প্রযুক্তির উন্নতির কারনে গ্রাহকরা গ্রামে বসে অনেক সুবিধা পাচ্ছেন। বিশেষ করে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স সহজে বসে গ্রাম থেকেই উত্তোলন করা যাচ্ছে। সার্বিক দিক বিবেচনায় এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের সুফলই গ্রাহকরা বেশি ভোগ করছেন।
কুলাউড়া উপজেলার রবিরবাজারে ইসলামী ব্যাংক আউটলেটের আমিনুর রহমান বলেন, “এখান থেকে ইসলামী ব্যাংকের সব ধরনের সেবা গ্রাহকদের দিতে পারছি। যার ফলে গ্রাহকরা বাড়ির পাশেই সময় ও অর্থ বাচিয়ে সেবা নিতে পারছেন। বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির যোগে এটা খুবই উপযোগী।
ব্যাংক এশিয়ার সিলেট বিভাগীয় টিম লিটার সৈয়দ আমির আজম বলেন, ‘ব্যাংক এশিয়ার রয়েছে আধুনিক ডিজিটাল ব্যাংকিং প্রযুক্তি ও দেশব্যাপী বিস্তৃত নেটওয়ার্ক। গ্রামীণ অর্থনীতিতে যে পরিবর্তন এসেছে সেখানে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের ভুমিকা অন্যতম। এ ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে গ্রামীণ এলাকায় আরো অনেক কিছু করা সম্ভব। এটাকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে হবে।