ষ্টাফ রিপোর্টারঃ
হাওর অধ্যুষিত মৌলভীবাজার জেলা। এ জেলায় রয়েছে এশিয়ার বৃহত্তর হাকালুকি হাওর, কাউয়াদিঘি, বাইক্কাবিল, হাইল হাওর, করাইয়ার হাওর ও বড় হাওর সহ ছোট বড় বেশ কয়েকটি বাওর। হাওর জুড়ে শোভা পাচ্ছে সোনালী ধান। যে দিকে চোখ পড়ে শুধু ধান আর ধান। এখনও আধাপাকা ধান শোভা পাচ্ছে চারিদিকে। ধান গোলায় তোলার স্বপ্নে বিভোর জেলার ১ লক্ষ ২৫ হাজার কৃষক। ধানের ফলন ভাল হওয়ায় কৃষকের চোখে মুখে ফুটে উঠেছে হাসির ঝিলিক। বিশেষ করে হাওর পারের কৃষকরা হাওর গুলোতে উৎপাদিত এক ফসলি এই বোর ধানের উপর অনেকটা নির্ভরশীল। বোর ধানের আয় দিয়ে চলে তাদের সারা বছরের সংসার ও ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ। তবে এ বছর আগাম বৃষ্টির কারণে কৃষকের মনে ফসল হারানোর শঙ্কায়। গত কয়েক দিনের অতিবৃষ্টিতে কৃষকদের মনে পানি বাড়ার আশষ্কা সৃষ্টি হয়েছে। যার কারনে ফসল হারানোর শঙ্কায় কৃষকেরা আধাপাকা বোরো ধান কাটা শুরু করেছেন।
চলতি মৌসুমে ৫৩ হাজার ১৬২ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়েছে। গত বছর ৫৪ হাজার ১২ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছি। গত বছরের চাইতে ৮৫০ হেক্টর জমিতে আবাদ কম হয়েছে। আবাদ কম হওয়ার কারণ হিসাবে কৃষি অফিস বলেছে সময়মতো বৃষ্টি কম হওয়ায় এবছর পিছিয়ে থাকার কারণ।
মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলায় ৪৯ হাজার ৮৩৫ হেক্টর জমিতে উফশী ও স্থানীয় জাতের ৩২১ হেক্টর এবং হাইব্রিড জাতের ধান চাষ হয়েছে ২৪৬৬ হেক্টর জমিতে। এবার বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৩ হাজার ১১৬ হেক্টর। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪২ হেক্টর বেশী আবাদ হয়েছে।
মৌলভীবাজার সদর উপজেলায় বোরো চাষাবাদ হয়েছে ১০৩০৬ হেক্টর। এর মধ্যে হাইব্রিড ৩৫৫, উফশী ৯৯৫১ হেক্টর। শ্রীমঙ্গল উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯৩৩০-এর মধ্যে চাষাবাদ হয়েছে হাইব্রিড ৪৩ এবং উফশী ৯২৮৭ হেক্টর। কুলাউড়া উপজেলায় চাষাবাদ হয়েছে ৬৮০০। হাইব্রিড ১৮০, উফশী ৬৬০০ ও স্থানীয় ২০ হেক্টর জায়গা আবাদ হয়েছে। রাজনগর উপজেলায় আবাদ হয়েছে ১২৬৯৩ হেক্টর। ৯৩০ হাইব্রিড ১১৭১৯ উফশী, স্থানীয় ৪৪ হেক্টর। কমলগঞ্জ উপজেলায় চাষাবাদ হয়েছে ৪১০৩ হেক্টর। এর মধ্যে হাইব্রিড ৩ ও উফশী ৪১০০ হাজার হেক্টর। বড়লেখা উপজেলায় চাষাবাদ হয়েছে ৪৪৪০ হেক্টর। এর মধ্যে হাইব্রিড ২৬০, উফশী ৪০৬৫ ও স্থানীয় ১১৫ হেক্টর। জুড়ি উপজেলায় আবাদ হয়েছে ৫৪৯০ হেক্টর। এর মধ্যে হাইব্রিড ৬৯৫, উফশী ৪৬৫৩ ও স্থানীয় ১৪২ হেক্টর জমি।
হাকালুকি হাওর পাড়ের কুলাউড়া উপজেলার বরমচালের আলীনগর গ্রামের মুহিব আলী রাজা, সেলিম মিয়া সহ অনেকেই জানান, বোর ধান আমাদের হাওর পাড়ের কৃষকদের জীবিকা নির্বাহের একমাত্র ভরসা। বোর ধানের আয় দিয়ে চলে আমাদের সংসার ও ছেলে মেয়েদের লেখা পড়ার খরচ। কৃষক সেলিম বলেন, আমি ১৬ বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করেছি। যদি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হই তবে পরিবারের লোকজন নিয়ে চরম বিপাকে পড়বো তাই, ফসল হারাতে চাইনা। এছাড়া জেলার বিভিন্ন স্থানে ধান কাটছে কৃষকরা। কাউয়া দিঘি হাওর পারের কৃষক মিজান মিয়া, খায়রুল আলী সহ একাধিক কৃষক বলেন, এ বছর ধান ভাল হয়েছে। আগাম বৃষ্টির কারণে ধানের নিচে পানি জমে গেছে। আমাদের দাবি কাশিমপুর পাম্প যাতে সময়মতো পানি সেচ দিতে পারে।
কুলাউড়া উপজেলা কৃষি অফিসার জগলুল হায়দার বলেন, বোরো ধান পাকতে আরও সাপ্তাহখানেক সময় লাগবে। তবে হাওয়রে বিচ্ছিন্নভাবে আগাম প্রজাতির ধান কাটা শুরু হয়েছে। মূলত ফসল হারানোর ভয়ে কৃষকরা এটা করছেন। চৈত্র বৈশাখ মাসে এ রকম কিছু বৃষ্টি হয়। এতে শঙ্কায়ের কিছু নেই। এবছর ফসল অনেক ভালো হয়েছে।
মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. শাহজাহান বলেন, বৃষ্টিতে বোরো ধানের তেমন কোন ক্ষতি হয়নি। এবছর কৃষকরা ঘরে ফসল তুলতে পারবে বলে আমরা আশা করছি।