জামিল আহমদ, বড়লেখা থেকেঃ
বড়লেখা উপজেলার হাকালুকি হাওরের মালাম বিল ঘেষা এলাকায় ৩০ শতক পরিমাণ জমি কিনেন অরুপ দাস নামের এক স্থানীয় ব্যক্তি। প্রায় ৯ বছর আগে ঐ জমিটি কিনে নামজারিসহ অদ্যাবোধি খাজনা পরিশোধ করে আসছেন তিনি। কিন্তু সম্প্রতি জমিটি নিজের কেনা বলে দখল করেছেন আওয়ামীলীগের এক প্রভাবশালী নেতা ও তার সহযোগিরা।
আসাদুজ্জামান সরকার নামের এক ব্যক্তির নিকট থেকে ৪ লক্ষ টাকা দিয়ে হাওরপাড়ে ঐই জমিটি কিনেছিলেন অরুপ দাস। অথচ জমিটি জোর করে দখলে নিয়েছেন আওয়ামীলীগের এক নেতা।
ভুক্তভোগী অরুপ দাস বলেন,‘ক্ষমতাসীন দলের নেতা জোর করে আমার জায়গাটি দখল করে আছেন। এর বাইরে তার নিকট কোনো কাগজপত্র নেই।
সরেজমিন ঘুরে ও অনুসন্ধানে জানা গেছে,শুধুমাত্র অরুপ দাসের এই জায়গাটিই নয়,হাওর পাড়ের হিন্দু সম্প্রদায় ও অসহায় লোকদের লক্ষ টাকা মূল্যের একাধিক জমি জোর করে দখলে রেখেছেন আওয়ামীলীগ,যুবলীগ,ছাত্রলীগ,স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ বিভিন্ন অংগ-সংঙ্গঠনের নেতাকর্মীরা। এমনকি উপজেলা আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী এক নেতা ও বর্ণি ইউনিয়নের কয়েকজন বাসিন্দা ভূমিদস্যূতার নেতৃত্ব দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। আওয়ামীলীগ
নেতাদের এ ভূমিদস্যুতা নিয়ে একাধিক ব্যক্তি খোদ বন ও পরিবেশ মন্ত্রী শাহাব উদ্দিনের কাছে অভিযোগও করেছেন। মন্ত্রী কোনো কোনো অভিযোগের সুরাহা করতে পারছেন,কোনোটির পারছেন না। ফলে জমির জোরপূর্বক দখল নিয়ে বিবাদ বাড়ছেই।
জমি মালিকরা অভিযোগ করে জানিয়েছেন,হাওরজুড়ে জমির দালাল নামে অন্তত ১৫/১৬ জন ব্যক্তি মানুষের জমি দখল করছে। বাধা দিলে মামলা সহ বিভিন্ন রকমের ভয় ভীতির হুমকি দিচ্ছে। তাঁরা কেউ কেউ জিরো থেকে এখন কোটিপতিও হয়ে গেছে শুধু মানুষের জমি দখল করে। সাধারণ মানুষকে ভয় ভীতি দেখিয়ে কমমূল্যে জমি বিক্রি করতে বাধ্য করার অভিযোগও রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। এসব দালালদের কারণে কোনো ব্যক্তি সহজে জমি কেনাবেচা করতে পারছেন না। তাদের মোটা অংকের কমিশন না দিলে জমি কেনা-বেচা করতে গেলেই বাধা দেওয়া হচ্ছে।
এসব ভূমিদস্যুদের নেপথ্যে
শক্তি হয়ে কাজ করছেন সরকারী দলের প্রভাবশালী এক নেতা। জমির মূল মালিকদের পক্ষে থানায় অভিযোগ করা হলেও সরকারী দলের ঐ নেতার প্রভাবে উল্টো অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পুলিশ দখলকারীদের পক্ষাবলম্বন করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে অহরহ।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়,হাকালুকি হাওরপাড়,বিশেষ করে বর্ণি ইউনিয়নে এমন ভূমিদস্যূদের দাপট বিরাজ করছে। বিবাদমান কোনো জমির সন্ধান পেলেই ভূমিদস্যুরা হুমলে পড়ছে। কখনো কখনো নিজেরাই দখল করে নিচ্ছে দুই পক্ষের দ্বন্দ্বের সুযোগে। ইউনিয়নের নোয়াগাও,কাজিরবন্দ-ছালিয়া,পাকশাইল,সৎপুর সহ প্রায় সবকটি গ্রামেই ভূমিদস্যূরা বহাল তবিয়তে রয়েছেন। যারা সরকারী দলের সমর্থক ও প্রভাবশালী হিসেবে নিজ নিজ এলাকায় পরিচিত।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ,স্থানীয় আওয়ামীলীগ,যুবলীগের নেতাকর্মীরা জমি দখলের বাণিজ্যে লিপ্ত রয়েছেন। আবার কখনো কখনো তারাই সমঝোতার নাম করে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা।
হাকালুকি হাওরপাড়ের এসব জমি দখল বাণিজ্য নিয়ে জানতে চাইলে বড়লেখা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃইয়াছিনুল হক বলেন,’সাম্প্রতিক সময়ে থানায় জমি নিয়ে দ্বন্ধের অনেক অভিযোগ আসছে। এগুলো দেওয়ানী মামলার আওতাভুক্ত অভিযোগ। তারপরও এলাকার আইনশৃঙ্খলা শান্ত রাখার স্বার্থে পুলিশের দ্বারা যেগুলো সুরাহা সম্ভব সেগুলো আমরা সুরাহা করছি। যেগুলোতে জটিলতা বেশি সেগুলোর সমাধানে আমরা ভুক্তভোগীদের ভূমি অফিস কিংবা আদালতে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি।’
ভুমি দখলে সরকারী দলের নেতাদের জড়িত থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে বড়লেখা উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃআনোয়ার উদ্দিন বলেন,’হাওর এলাকায় একটি কুচক্রিমহল জমি দখল ও বাণিজ্যে জড়িত রয়েছে বলে খবর পেয়েছি। তবে এই চক্রের সাথে আওয়ামীলীগের কেউ জড়িত এমন কোনো অভিযোগ আমাদের কাছে আসেনি। আওয়ামীলীগের কোনো নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ এলে তদন্ত সাপেক্ষে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।