কমলগঞ্জ প্রতিনিধি:
মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলায় ১টি পৌরসভা ও ৯টি ইউনিয়নে প্রায় ৩ লক্ষাধিক মানুষের বসবাস। উপজেলার একমাত্র স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৫০ বছর পর ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও চিকিৎসকের শূণ্যপদ পূরণ হয়নি। চিকিৎসক সংকট, থেকেও এক্স-রে মেশিন বিকল ও সনোলজিষ্টের সংকটের কারণে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে। তাছাড়া সহকারী মেডিকেল অফিসার এসিষ্টেন্টদের দিয়ে স্বাস্থ্য সেবা থেকে শুরু করে ফার্মাসিষ্টের দ্বায়িত্ব পালন করানো হচ্ছে।
কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের উপস্থিতিতে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি গত ১০মার্চ ২০১৮-তে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যার কার্যক্রম শুরু করা হয়।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৫০ শয্যায় উন্নিত হওয়ার সময় প্রধান অতিথি সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম অশ্বাস দিয়েছিলেন এখানের শূণ্যপদে চিকিৎসকসহ অন্যান্য কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হবে। দীর্ঘ ১০ মাস অতিবাহিত হওয়ার পরও ২০ টি চিকিৎসক পদে কোন নিয়োগ দেওয়া হয়নি। ৪ জন ডাক্তার দিয়ে সবদিক পরিচালনা করতে না পারায় ডিএমএফ ডাক্তার দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে অন্ত:বিভাগ ও বহি:বিভাগ। এতে করে চিকিৎসার সংকটের কারণে এখানকার মানুষরা স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে।
সরেজমিন ঘুরে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিভিন্নপদে ২৪ জন এমবিবিএস ডাক্তার থাকার কথা থাকলেও ২০টি চিকিৎসকের পদই শূণ্য রয়েছে। এছাড়া ১১ উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে মেডিক্যাল অফিসার, ২জন নার্স, ১জন পরিসংখ্যানবিদ, ৪ জন ফার্মাসিস্ট, ১ জন উপ-সহকারী মেডিক্যাল অফিসার, ১ জন এম.টি ল্যাবরেটরী, ১ জন এম.টি রেডিও, ১ জন সহকারী নার্স, ২ জন স্বাস্থ্য পরিদর্শক,১ জন সহ-স্বাস্থ্য পরিদর্শক, ১ জন অফিস সহায়ক, ১ জন কুকের শূণ্যপদ রয়েছে । এসময় ডাক্তার মুন্না সিনহা বলেন, প্রয়োজনীয় চিকিৎসক নিয়োগ না দেওয়ার তাদের উপর চাপ বেড়েছে। শূণ্যপদে চিকিৎসক কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে ও বিকল এক্স-রে মেশিন চালু করলে ও সনোলজিষ্ট নিয়োগ দিলে চিকিৎসা সেবার মাণ নিয়ে আর কোন প্রশ্ন উঠবে না।
চিকিৎসক ও কর্মচারীদের সাথে কথা বলে আরও জানা যায় ফার্মাসিষ্ট না থাকায় ফার্মাসিষ্টের কাজ চালাচ্ছেন হাসপাতালের পিয়ন ও ডিএমএফ ডাক্তার। সরকারি সব সুযোগ-সুবিধা থাকার পরেও ডাক্তার সংকটের কারণে ব্যাহত হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তার সংকটের কারণে দীর্ঘদিন ধরে পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা না থাকায় মূল্যবান যন্ত্রপাতিগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্বাস্থ্যসেবা না পাওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছেন হতদরিদ্র মানুষ।
এ বিষয়ে কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া জানান, অবকাঠামো ও আবাসিক ব্যবস্থা সম্পূর্ণ প্রযোজনীয় যন্ত্রপাতি ও উপকরণ সরবরাহ কার্যক্রম চলমান তবে ডাক্তার স্বল্পতা বিদ্যমান। ২৪ জন ডাক্তারের মধ্যে ৪ জন কর্মরত রয়েছেন। শূণ্যপদে জনবল নিয়োগের প্রক্রিয়া চলমান আছে। নার্স এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী পর্যাপ্ত সংখ্যক রয়েছে। ২টি এম্বোলেন্স সচল আছে। এক্সরে সামান্য যান্ত্রীক ত্রুটির কারণে ও ট্যাকনিশিয়ানের অভাবে মেশিনটি অচল অবস্থায় পড়ে আছে। সনোগ্রামের মেশিন থাকলেও সনোলজিষ্ট না থাকায় তা ব্যবহার করা যাচ্ছে না। নিরাপদ ডেলিভারী সংখ্যা সন্তোষ জনক,আরো বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। বহি:বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ৩০০-৪০০ রোগী চিকিৎসা গ্রহণ করে। ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত হওয়ার পর থেকে সরকার নির্ধারিত সীমিত সার্ভিস চার্জ গ্রহণ করা হয়। চিকিৎসক স্বল্পতার কারণে চিকিৎসা ব্যবস্থা ব্যাহত হচ্ছে। উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে অবগত করা হয়েছে বলে তিনি জানান। মাঠ পর্যায়ে ২৫টি কমিনিউটি ক্লিনিক ও ৩টি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা পরিচালিত হচ্ছে। উপজেলাবাসীর চিকিৎসা সেবার স্বার্থে কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তার সংকট সহ সকল প্রকার সমস্যা সমাধান করা জরুরী ।
এক্স-রে বিকল ও সনোলজিষ্ট না থাকায় স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত
