কমলগঞ্জ প্রতিনিধি:
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় শিক্ষার্থীর উপস্থিতি কম হওয়ার কারণে যে কোন সময় বন্ধ করে দেয়া হতে পারে দু’টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়।
শিক্ষক আছেন ক্লাসরুম আছে কিন্তু শিক্ষার্থীর অভাবের কারনে বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নের শুকুরউল্ল্যারগাঁও সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও আদমপুর ইউনিয়নের পশ্চিম জালালপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি।
বুধবার(২৩ জানুয়ারী) সরেজমিন দুটি বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা ও স্থানীয় এলাকাবাসীর সাথে আলাপকালে জানা যায়, দুটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ক্ষুদ্র-নৃ- গোষ্টী পাঙাল (মুসলিম) মনিপুরি অধ্যুষিত এলাকায় প্রতিষ্টিত হওয়া আর গ্রামগুলোতে জনসংখ্যা বৃদ্ধি না থাকার দরুন এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এলাকা গুলো ঘনবসতি না হওয়ায় ও জন্মনিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম এ এলাকায় শিক্ষার্থী সংকট দেখা দিয়েছে। অনেকে আবার শিক্ষার্থী কম হওয়ার পেছনে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনার জন্মনিয়ন্ত্রণের কার্যক্রমকেই দায়ী মনে করছেন। মাধবপুর ইউনিয়নের শুকুরউল্যারগাঁও সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ১৯৭২ সালে জাতীয় করণ হওয়া ও আশ পাশে তেমন কোন বিদ্যালয় না থাকার কারণে প্রথম প্রথম এ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মত। কিন্তু পর্যায়ক্রমে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি কমতে শুরু করে।
শুকুরউল্যারগাঁও সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা তৃষ্ণা রাণী জানান, গত ২০১৫ সালের পর থেকে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমতে শুরু করে। গত বছর শিশু শ্রেণী থেকে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিলো ৩৪ জন। কিন্তু চলতি বছর তা এসে দাঁড়িয়েছে ৩০ এর কোটায়। শিক্ষার্থীর উপস্থিতি কমে যাওয়ার পেছনে কারণ ৮০ পরিবারের ছোট গ্রাম এবং তার উপর জনসংখ্যাও কম আবার অনেক অভিবাবক তাদের সন্তানদের কেজি স্কুল অন্যদিকে মুসলিম মনিপুরি অধ্যুষিত এলাকা হওয়ায় অনেকে তাদের সন্তানদের মাদ্রাসায় ভর্তি করে দিয়েছেন। তিনি আরো জানান, স্কুলটি বন্ধ হলে শিক্ষার্থীরা ঝড়ে পরবে শিক্ষার আলো থেকে। আমরা প্রতিষ্টানটি রক্ষা করতে শিক্ষার্থী বৃদ্ধির আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি।
এ ব্যাপারে স্থানীয় এলাকাবাসী, আব্দুল বাছিদ,রমিজ উদ্দিন, নুরুল ইসলাম এর সাথে আলাপকালে এরা অভিযোগের সুরে বলেন, আমাদের গ্রামে জনসংখ্যা কমে গেছে একমাত্র পরিবার পরিকল্পনার জন্মনিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম এর কারণে। অন্যদিকে স্কুলেও ঠিকভাবে পাঠদান করানো হয়না তাই অনেকে তাদের সন্তানদের অন্যত্র ভর্তি করে দিয়েছেন প্রায় ২৫/৩০ জনের মত ছাত্র-ছাত্রী কেজি স্কুল ও মাদ্রাসায় লেখা পড়া করছে।
অভিবাবক সুরমা বেগম জানান, এই স্কুলটা বন্ধ হলে আমাদের ছেলে মেয়েরা লেখা পড়া থেকে বঞ্চিত হবে। তিনি শিক্ষার্থী কম হওয়ার পেছনে কারণ হিসাবে বলেন এই গ্রামটি ক্ষুদ্র-নৃ- গোষ্টী পাঙাল (মুসলিম) মনিপুরি অধ্যুষিত এলাকা এখানে সবাই মুসলিম শিক্ষার্থী কিন্তু বিদ্যালয়ে ৫ জন শিক্ষিকাই হলেন হিন্দু, ইসলাম ধর্মশিক্ষা পাঠদানের মত কোন মুসলিম শিক্ষক বা শিক্ষিকা নেই। যারা আছেন এরাও ঠিকমত বিদ্যালয়ে আসেন না।
স্কুল পরিচালনা কমিটির সাবেক অভিবাবক সদস্য খইরুন নেছা বলেন, গ্রামে প্রায় ৭০/৮০ জন ছেলে মেয়ে আছে কিন্তু এত কম সংখ্যক শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে যাচ্ছে তার কারণ গুলো কি তা চিহ্নিত করতে পারলে সমাধান করা সম্ভব হতো।
এদিকে আদমপুর ইউনিয়নের পশ্চিম জালালপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টিও ক্ষুদ্র-নৃ- গোষ্টী পাঙাল (মুসলিম) মনিপুরি অধ্যুষিত এলাকায় থাকায় সেখানেও একি অবস্থা বিরাজ করছে। বিদ্যালয়টি ১৯৯২ সালে প্রতিষ্টিত হলেও বর্তমানে সেখানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা শিশু শ্রেণী থেকে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত ৩০ জন।
এ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা বিভা রাণী সিনহা বলেন,তিনি শিক্ষার্থীর উপস্থিতি কম হওয়ার পেছনে কারণ হিসাবে বলেন, গ্রামটি ক্ষুদ্র-নৃ- গোষ্টী পাঙাল (মুসলিম) মনিপুরি অধ্যুষিত এলাকা হওয়ায় সেখানে জনসংখ্যা কম তাই শিক্ষার্থী পাওয়া যাচ্ছেনা।
কমলগঞ্জ উপজেলার সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জয় কুমার হাজরার সাথে আলাপ কালে তিনি বলেন, এই দুটি বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী কম হওয়ার কারন জানতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে নোটিশ দেয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, উপরোক্ত এলাকায় জনসংখ্যা কম ও মুনিপুরী (পাঙ্গাল)মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা হওয়া অনেকেই তাদের সন্তানকে বিভিন্ন মাদ্রায় ভর্তি করানোর করানে ও জন্ম নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের কারনে শিশু না থাকা কারনেই শিক্ষার্থীর উপস্থিতি কম।
যে কোন সময় বন্ধ হতে পারে দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয়
