স্টাফ রিপোর্টার:
চায়ের রাজধানী খ্যাত মৌলভীবাজারের ৪টি আসনেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের জয় পরাজয়ে চা শ্রমিকদের ভোটই প্রধান ফ্যাক্ট। এ কারনে প্রতীক বরাদ্দের পর থেকেই চা বাগানগুলোতে চষে বেড়াচ্ছেন নৌকা ও ধানের শীষের প্রার্থীরা। বরাবরের মতো চা শ্রমিকদের দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। তবে চা শ্রমিকরা আগের চেয়ে এখন অনেক সচেতন। যে প্রার্থী তাদের জীবনমান ও শিক্ষার উন্নয়নে ভুমিকা রাখবেন তাকেই তারা ভোট দিবেন।
জেলা নির্বাচন অফিস থেকে জানা যায়, মৌলভীবাজার জেলার ৭টি উপজেলায় ১১৪টি চা বাগান রয়েছে। এর মধ্যে বড়লেখায় ১৫টি, জুড়ীতে ১১টি, কুলাউড়ায় ২১টি, রাজনগরে ১৪টি, সদরে ২টি, কমলগঞ্জে ১৮টি ও শ্রীমঙ্গলে ৩৩টি।
জেলার ৪টি আসনে মোট চা শ্রমিক ভোটার ১ লক্ষ ৪৫ হাজার ৫শ’ ৫৯ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ৭১ হাজার ৯’শ ৮০ জন এবং পুরুষ ভোটার ৭৩ হাজার ৫’শ ৭৯ জন। মৌলভীবাজার-১ (বড়লেখা ও জুড়ী) আসনে ২০ হাজার ২’শ ২ জন, মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া) আসনে ২০ হাজার ৮’শ ৩৭ জন, মৌলভীবাজার-৩ (সদর ও রাজনগর) আসনে ১৭ হাজার ৭৫ জন ও মৌলভীবাজার-৪ (কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গল) আসনে ৫১ হাজার ৫’শ ৩ জন। মৌলভীবাজার-৪ আসনেই প্রায় অর্ধেক ভোটার। ওই আসনে স্বাধীনতার পর থেকে গত নির্বাচন পর্যন্ত প্রত্যেকবারই নৌকার প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়েছে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে মৌলভীবাজার-১ আসনে আ’লীগ ৬, বিএনপি ১ ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী ১ বার নির্বাচিত হয়েছে। মৌলভীাজার-২ আসনে আ’লীগ ৩ বার, মুসলিমলীগ ১বার ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী ৩ বার নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু ওই আসনে একবারও বিএনপি নির্বাচিত হতে পারেনি। মৌলভীবাজার-৩ আসনে আ’লীগের প্রার্থী ৫ বার ও বিএনপি প্রার্থী ৩ বার নির্বাচিত হয়েছেন।
১৯৭৩ সালের নির্বাচন থেকে শুরু করে গত নির্বাচন পর্যন্ত ফলাফল পর্যালোচনা করে দেখা গেছে ৪টি আসনেই বিএনপির চেয়ে আ’লীগরে প্রার্থীরা বেশি জয়ী হয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, মৌলভীবাজারে চা শ্রমিকদের ভোট ব্যাংক থাকায় অতীতে নৌকার প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। এবার এরকম হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন, “আগের চেয়ে চা শ্রমিকরা অনেক সচেতন। নতুন প্রজন্মের অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত লেখাপড়া করছে। যার কারনে আমাদের মনে হয় যে প্রার্থীরা তাদের বেশি সুবিধা দিবেন থাকেই চা শ্রমিকরা ভোট দিবে।
এবিষয়ে তাদের অভিমত জানতে মৌলভীবাজার-১ আসনের জুড়ী উপজেলার ধামাই চা বাগানের চা শ্রমিক ভোটার মাখন বলেন, এখনও ভোটের অনেক দিন বাকী। বাগানের সবাই বসে সিদ্ধান্ত নেব কাকে ভোট দেয়া যায়। তবে নৌকাতেই ভোট দেয়ার সম্ভাবনা বেশি।
মৌলভীবাজার-২ আসনের বরমচাল বাগানের পাঞ্চায়েত সভাপতি আগনু দাস বলেন, আমরা এবারও নৌকায় ভোট দেব। বাসস্থান, শিক্ষা ও বেকারদের চাকুরি দেয়ার জন্য আমরা নৌকার প্রার্থীদের কাছে দাবি জানিয়েছি।
মৌলভীবাজার-৩ আসনের রাজনগর উপজেলার ইটা চাবাগানের পাঞ্চায়েত সভাপতি নাছিম আহমদ বলেন, অতীতেও আমরা নৌকায় ভোট দিয়েছি এবং তারই ধারাবাহিকতায় এবারও দেব। ছেলে সন্তানদের শিক্ষার জন নৌকার প্রার্থীর কাছে বাগানে মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপনের দাবি জানিয়েছি আমরা।
মৌলভীবাজার-৪ আসনের চা শ্রমিক নেতা ও শ্রীমঙ্গল উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান সাগর হাজরা বলেন, বঁঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাছিনা আমাদের ভোটের অধিকার দিয়েছেন। তাই বরাবরে মতো এবারও আমরা নৌকায় ভোট দেব।