কমলগঞ্জ প্রতিনিধি:
যতদুর চোখ যায় শুধু সবুজ আর সবুজের সমারোহ। একেঁ বেঁকে মোঠোপথ চলেছে বিভিন্ন দিক দিয়ে। কোন পথ বাগানের ভিতরে প্রবেশ করেছে,কোনটি আবার বসত বাড়ির দিকে। মধ্যে দিয়ে পিচ ঢালা পথ ও রয়েছে যা শহরে সাথে যোগাযোগ স্থাপন করেছে। সাধারনত এই দিয়ে চা বাগানের কাজে ব্যবহ্রত গাড়ি ছাড়া দামী কোন গাড়ি তেমন একটা চলেনা। কিন্তুু সেই দৃশ্য এখন অনেকটাই পাল্টে গেছে। কারন নির্বাচন। নির্বাচনের কারনে প্রতিদিনই কি দিন কি রাত্রি সব সময় ভোটের প্রচার গাড়ি ছাড়া ও ভোটের প্রার্থী এবং তাদের নির্বাচনী পরিচালনা কমিটির লোকজন দামী গাড়ি হাঁকিয়ে শ্রমিকদের সাথে মিশছেন এবং উঠান বৈঠক করে তাদের প্রার্থীর পক্ষে সাফাই গাইছেন। শ্রমিকদের দিচ্ছেন নানান প্রতিশ্রুতি।
বাগান এলাকায় প্রবেশ করে দেখা যায় পথের ধারে কোথাও সারি সারি ঘর ,কোথাও বা দোকানপাঠ। এই বাড়ি সামনের ও দোকানপাঠে ভোটের প্রার্থীদের ছবি ও প্রতিক দিয়ে পোষ্টার সাঠানো আছে। কুয়াশা ভেদ করে ভোরে আলো ফুটতেই দেখা যায় সারি বেঁধে নারীদের দল জোর পায়ে চা বাগানে প্রবেশ করছেন চা পাতা চয়ন করতে। কথা বলার চেষ্টা করলে কাজের তাড়া দেখিয়ে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।
এরই ফাঁকে কমলগঞ্জ উপজেলার ডানকান ব্রাদার্স শমশেরনগর চা বাগানের নারী শ্রমিক লছমি রানী রাজভর তাদের ভাষায় বলেন,“নির্বাচন আইলে নেতারা কত কথা বলে। আমরারে সব দিলাইবো। শিক্ষা, চিকিৎসা, ঘর, ভূমির অধিকার, বেকারত্ব সব সমাধানের কথা কয়। নির্বাচনে পাশ করলে আর তাদের নাগাল মিলে না। এখন নির্বাচন আইছে যে পাশ করবো তাদের কাছে আমরা চা শ্রমিকদের ভূমির অধিকার ও মজুরি বাড়ানোর দাবি কইলাম।
আগামী ৩০ ডিসেম্বর আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যে সরকার নির্বাচিত হবে তারা যেন চা শ্রমিকদের ভূমির মালিকানা, মজুরি বৃদ্ধি ও বেকারত্ব দূরীকরণের মতো জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করে। শমশেরনগর চা বাগানের নারী চা শ্রমিকরা ক্ষোভের সঙ্গে তারা এসব দাবি তোলে ধরেন। জনগুরুত্বপূর্ণ এসব দাবি বাস্তবায়নে যে দলের সরকার নির্বাচিত হয় তাদের কাছে এসব দাবি বাস্তবায়নেরও আহ্বান জানান। পাতি উত্তোলনকারী নারী শ্রমিকরা বলেন, পরিবারে পাঁচ-সাত জন সদস্য নিয়ে ১০২ টাকা মজুরি দিয়ে সংসার চালানো কোনমতেই সম্ভব নয়। সপ্তাহান্তে ৭১৪ টাকার স্থলে কারেন্ট বিল, ফান্ডের টাকা, মন্দিরের টাকা, ইউনিয়ন চাঁদা কর্তন করে পাঁচশ’ ছয়শ’ হারে টাকা পাওয়া যায়। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে উপবৃত্তি উঠে যাওয়ায় সন্তানদের শিক্ষাদানও সম্ভব হচ্ছে না। বাগানে চিকিৎসা ব্যবস্থাও নাজুক বলে তারা দাবি জানান। পঞ্চাশোর্দ্ধ বয়সের নারী চা শ্রমিক সরলা বাউরী বলেন, ‘সরকার চা শরমিকদের কথা ভাবে না। এতো দিনেও আমরার ভূমির অধিকার পাইলাম না। সরকার কই আছে, আমরা তো চোখে দেখি না। যা রুজি করি তা দিয়েই বাচ্চাইনতরে লিয়া (নিয়ে) খাইতেছি। এখন বাচ্চা-কাচ্চা লিয়া চলা অসম্ভব।’ লছমি রানী রাজভর, হেরকি আমা, আপ্পিয়ামাসহ কয়েকজন নারী শ্রমিক জানান, এখন ভোটের জন্য প্রার্থী ও তাদের নেতাকর্মীরা আসছেন। তাদের কাছে আমরা চা বাগানের শ্রমিকদের দাবি যে নির্বাচিত হবে সেই সরকার চা শ্রমিকদের নুন্যতম দৈনিক মজুরি ২৫০ টাকা, ভূমির অধিকার ও বেকারদের চাকুরীর ব্যবস্থা করা। তারা আরও বলেন, যুগ যুগ ধরে চা বাগানে বসবাস করলেও চা শ্রমিকদের আজও ভূমির মালিকানা নেই। আমাদের ভূমির মালিকানা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব।