হোসাইন আহমদঃ
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের জাতীয় সংসদ দেশের সর্বোচ্চ আইন প্রনয়নকারী। স্বাধীনতার পর থেকে সেখানেই আইন প্রনয়ন, সংশোধন ও পরিমার্জিত হয়ে আসছে। দেশের অর্থনীতি, সমাজনীতি ও রাজনীতি জাতীয় সংসদ থেকেই পরিচালিত হয়। সর্বোপরি দেশের উন্নয়নের জন্য জাতীয় সংসদের ভুমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, দেশকে বিশ্বের ধরবারে তুলে ধরা, মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন এবং দেশের সার্বিক ক্ষেত্রে জাতীয় সংসদের ভুমিকা কোনো অংশে কম নয়।
এখানকার নির্বাচিত সদস্যরা দেশের আইন প্রনয়নের সর্বোচ্চ ব্যক্তি। তাদের হাতেই দেশের আনই বিভাগ অনেকটা নির্ভরশীল। ওই সকল ব্যক্তিদের নির্বাচিত করার ক্ষেত্রেও তাদের মেধা, যোগ্যতা, সততা ও পরিশ্রমতাকে গুরুত্ব দেয়া একান্ত প্রয়োজন।
কিন্তু বিস্মৃত হলাম আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া সম্ভাব্য ব্যক্তিদের নাম শুনে। মনোনয়ন প্রত্যাশিদের অনেকেই ইউনিয়ন পরিষদের ওয়ার্ড নির্বাচনেও বিজয়ী হতে পারেননি। মনোনয়ন প্রত্যাশিদের তালিকায় আছেন অনেক জনপ্রিয় খেলোয়াড়, নায়ক, নায়িকা, গায়ক, গায়িকা, অভিনেতা, অভিনেত্রী, চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীর স্ত্রী, অবসরপ্রাপ্ত সরকারী আমলাসহ আরো অনেকেই। তাদের প্রার্থী হওয়ার খবর শুনে মনে হয় জাতীয় সংসদ সদস্য একটি তামাসার জায়গা। এমনও আছে মনোনয়ন প্রত্যাশিদের মধ্য থেকে অনেকের যোগ্যতা ইউনিয়নের একটি ওয়ার্ড সদস্যদের চেয়ে অনেক অংশে কম। যার ইচ্ছা সেই জাতীয় সংসদের সদস্য হতে চাচ্ছে। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের সকল সর্ত পূরন করে যে কোনা প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তি প্রার্থী হতে দেশের সংবিধান অনুযায়ী বাঁধা নেই। তবে তার জন্য প্রয়োজন মেধা, যোগ্যতা, সততা ও ন্যায়পরায়নতা। প্রত্যেক ব্যক্তির আলাদা আলাদা গুন থাকে। একেক গুনে একক লোক গুনানিত্ব। দেশকে বিশ্বের ধরবারে তুলে ধরার জন্য খেলোয়াড়দেরও অবদান অতুলনীয়। তাদের পরিশ্রম ও আন্তরিকতার ফলে দেশ অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারে। যার কারনে সরকার তাদের পিছনে প্রতিনিয়ত জাতীয় আয়ের বড় একটি অংশ ব্যয় করে। কিন্তু পলোবন দিয়ে বর্তমানে সেই খেলোয়াড়, গায়ক, চিত্রনায়িকা ও সরকারী আমলাসহ নানা পেশার লোককে রাজনীতির মাঠে নামানো হচ্ছে। এটা মেরুদন্ডহীন জাতির একটি লক্ষন মাত্র। বিনোদনের জন্যও গায়িকা, নায়িকা ও বিনোদন কর্মী প্রয়োজন। সুস্থ্য ও নৈতিকতা সম্পন্ন সাংস্কৃতি বিকাশে সংস্কৃতি কর্মীদের ভুমিকা অতিতেও ছিল এখনও আছে। কারন দেশে সুস্থ্য সংস্কৃতি চর্চা হলে সাধারন মানুষ নৈতিকতা বিপর্ষিত হয়না। কিন্তু আজকে তাদেরকেও রাজনীতির মাঠে নামানো হচ্ছে। পর্যালোচনায় দেখা গেছে এভাবে অনেক দল থেকে এমন লোকও প্রার্থী হয়েছেন যারা ইউপি সদস্য হওয়ারও যোগ্যতা রাখেননি।
আবার দেখা গেছে বাংলাদেশের বৃহত্তম দল আওয়ামীলীগ ও বিএনপি থেকে অনেক নেতাও মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। যাদের নূন্যতম কোনো যোগ্যতা নেই। অক্ষর জ্ঞান কিংবা স্বশিক্ষিত। দেশের শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীকে মনোনয়ন দিতে না পারায় তার স্ত্রীকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। আবার দেখা গেছে অনেক এমপি কিংবা মন্ত্রী মারা গেলে তাদের স্ত্রীকে দেয়া হচ্ছে। মনে হচ্ছে এটা উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া বুনিয়াদী সম্পদ। মনে হচ্ছে এটা যেন পীরের ছেলে পীর হওয়ার মতো। এর পিছনে রহস্যটা কি এমনটাই প্রশ্ন দেশের সচেতন ভোটারদের।
এই যদি হয় দেশের পবিত্রতম স্থান জাতীয় সংসদের মনোনয়ন প্রত্যাশিদের অবস্থা। তাহলে যাদের ভ্যাট ও টেক্সের টাকায় দেশ চলে তারা তাদের কাছ থেকে কি প্রত্যাশা করতে পারে? ওই নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের কাছ থেকে দেশ ও জাতি কি আসা করতে পারে? দেশকে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে তারা কি ভুমিকা রাখতে পারে?
লেখকঃ সংবাদকর্মী