কমলগঞ্জ প্রতিনিধি:
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের কৃষকরা আমন ধান কেটে ঘরে তুলতে এখন মাঠেই ব্যস্ত রয়েছেন। প্রথমবারের মত কমলগঞ্জের ফসলের মাঠে যান্ত্রীকভাবে ধান কেটে মাড়াই দিয়ে বস্তায় ভরছে কৃষকরা। ধানা কাটা ও মাড়াইয়ে নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার কৃষকদের মাঝে সাড়া ফেলেছে।
মঙ্গলবার (৪ ডিসেম্বর) আলীনগর ইউনিয়নের জালালিয়া গ্রামে আমনের বীজ ধানের মাঠে যন্ত্র ব্যবহার করে ধান কাটার সাথে বস্তায় ভরে সাথে সাথে পরিবহনে করে বাড়ি নিয়ে যেতে দেখা যায়। শমশেরনগর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের মাওলানা মোবাশ্বির আলী একজন মসজিদ ইমাম। পাশাপাশি দক্ষতার সাথে কৃষি কাজ করে এখন কমলগঞ্জের একজন সফল কৃষক। কৃষি কাজে দক্ষতা বৃদ্ধিতে তিনি ইতিমধ্যে সরকারি উদ্যোগে চীন ভ্রমণ করেছিলেন। তিনি কৃষকদের সংগঠন গোবিন্দপুর সিআইপি সমবায় সমিতি লি:-এর মাধ্যমে উপজেলা কৃষি বিভাগের সহায়তায় ধান কাটার ও মাড়াই দেবার একটি যন্ত্র ক্রয় করেন। এর মূল্য ৭ লাখ টাকা হলেও ভর্তূকির মাধ্যমে ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা পরিশোধ করে এ যন্ত্রটি ক্রয় করেন। তিনি বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের ফেঞ্চুগঞ্জ গোদামের জন্য উন্নত ধান বীজ উৎপাদনে জালালিয়া গ্রামের কয়েকজন কৃষকের কাছ থেকে ২০ একর জমি বন্ধক নিয়ে ব্রি-৩২ ধান, ব্রি-২২ ধান ও বীনা -৭ ধান চাষ করেন। প্রতি একরে তিনি শুকনো অবস্থায় ৪০ থেকে ৪৫ মন বীজ ধান পেয়েছেন। আর ভিজা অবস্থায় ৫০ থেকে ৫৫ মন বীজ ধান পাচ্ছেন। মঙ্গলবার সকাল থেকে তার বন্ধকী জমির বীজ ধান কাটা শুরু করেন যান্ত্রীকভাবে। ছোট আকারের একটি ট্রাক্টরের মত ৪ চাকার যন্ত্রের নিচের কাটারের মাধ্যমে ধান কেটে এক দিকে ধানের খড় নিচে জমিতে ফেলে দেয়া হয়। অন্য দিকে যন্ত্র চালকের বাম দিকে রাখা বস্তায় মাড়াই হওয়া ধান ভরে যাচ্ছে। ধানে বস্তা ভরে গেলেই সাথে সাথে সে ধান মজুররা নিয়ে যাচ্ছে রাস্তায় থাকা পিকআপে। এভাবে ধানি জমিতে মেশিনে ধান কেটে মাড়াই দিয়ে ধান বস্তায় ভরাব দৃশ্য দেখছেন আগ্রহী অন্যান্য কৃষক ও উৎসাহী লোকজন। আলাপকালে সফল কৃসক মোবাশ্বির আলী জানান, তাদের গ্রামের কৃষক সমিতির (গোবিন্দপুর সিআইপি সমবায় সমিতি লি:) মাধ্যমে ধান কাটার ও মাড়াই দেবার যন্ত্রটি কৃষি ভর্তুকির মাধ্যমে ক্রয় করেছেন। এতে তাদের সময় বাঁচার সাথে সাথে কম মজুর ব্যবহার করে ফসল ঘরে তুলতে পারছেন। তিনি বিএডিসির একজন তালিকাভুক্ত ধান বীজ উৎপাদনকারী। গত বছর শুকনো অবস্থায় বিএডিসিতে প্রতি কেজি আমন ধানের বীজ বিক্রয় করেছিলেন ৪১ টাকা দরে। আর বোরোর সময়ে ব্রি-২৮ ও ব্রি-২৯ ধান বীজ ধান প্রতি কেজি ৩৯ টাকা দরে। তবে বিআইডিসিতে ধানের বীজ বিক্রয়ের সময়ে গ্রেডিং, ক্লিনিং ও ট্রাকের শ্রমিকদের মজুির কর্তন করে নেওয়া হয়। তাছাড়া আদ্রতার জন্য প্রতি ৭৫ কেচি বীজ ধানে সর্বোচ্চ ১২০ টাকা করে কর্তন করা হয়। কৃষক মোবাশ্বির আলী আরও বলেন, এখন কৃষকরা উৎসাহী হয়ে উঠছে। আগামীতে ধান কাটা ও মাড়াই যন্ত্র আরও কিনে এনে কৃষকরা ব্যবহার করবেন বলে তিনি আশাবাদী।
কমলগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রঘু নাথ নাহা বলেন, উপজেলা কৃষি বিভাগের সহায়তায় অর্ধেক মূল্যে গোবিন্দপুর কৃষক সিআইডি সমবায় সমিতি এই ধান কাটা ও মাড়াই যন্ত্র কিনেছেন। তিনি মঙ্গলবার জালালিয়া গ্রামে এই যন্ত্র ব্যবহারে বীজ ধান কাটার ও মাড়াই দেওয়া দেখতে গিয়েছিলেন। সেখানে কৃষকদের মাঝে বেশ উৎসাহ দেখতে পেলেন।