কুলাউড়া প্রতিনিধি:
কুলাউড়া উপজেলার বরমচাল ইউনিয়নের ইমন হত্যাকান্ড নিয়ে এলাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনার পর থেকে দক্ষিণ নন্দনগর ও খাদিমপাড়া গ্রামের ১৫টি পরিবার পুরুষশূন্য রয়েছে। সেই সুযোগে একটি চক্র পুরুষশূন্য বাড়িঘরে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে একটি ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টির পাঁয়তারা চালাচ্ছে। এদিকে নিহত ইমন কুলাউড়া থানায় ডাকাতিসহ ৩টি মামলার এজহারভুক্ত পলাতক আসামী। এলাকায়ও অনেকটা বেপরোয়া প্রকৃতির মানুষ হিসেবে পরিচিত ছিলো। ইমন হত্যাকান্ড মুলত একটি ক্ষোভের বহি:প্রকাশ।
সরেজমিন বরমচাল ইউনিয়নে গিয়ে এবং থানা থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, খাদিমপাড়া গ্রামের মো. বাতির মিয়ার ছেলে নাসিরুল আলম ইমন একজন বেপরোয়া প্রকৃতির মানুষ। যার বিরুদ্ধে ২০১০ সালে কুলাউড়া থানায় প্রথম মামলা (নং- ০৪, তাং ০২/০৯/১০ইং, ধারা ৫০৬/৪৪৭/৪২৭/ ৪৪৮) দায়ের হয়। এরপর ২০১২ সালে মামলা (নং-১৮, তাং ২৩/০১/২০১২ইং, ধারা ৩৯৫/৩৯৭) এবং চলতি বছর দায়েরকৃত মামলা (নং-২৩, তাং ১২/০৯/২০১৮ইং, ধরা ১৫ (৩) (১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইন) চলমান আছে।
ইমন ও তার পরিবারের সাথে একই বাড়ির বাসিন্দা সেলিনা ইয়াসমিন সিপার সাথে জমিজমা নিয়ে বিরোধ রয়েছে। সিপার স্বামী কাতার প্রবাসী রিপুল মিয়া। জমিজমা ও খেলা নিয়ে দক্ষিণ নন্দনগর গ্রামের লুৎফুর রহমানের অরুনের সাথে বিরোধ ছিল ইমনের। খাদিমপাড়ার আব্দুল হাসিমের সাথে জমিজমা নিয়ে বিরোধ রয়েছে। তাছাড়া ২য় বিয়ে করায় পিতা বাতির মিয়ার সাথে ছেলে ইমনের বিরোধ রয়েছে। তাদের বিরোধ নিয়ে এলাকাবাসীও অতিষ্ঠ। নিজের পিতাকেও একাধিকবার মারধর করেছে ইমন। ঘটনার দিন ১৬ নভেম্বর এসব বিরোধের জের ধরে ইমন দা নিয়ে আক্রমন চালায় লুৎফুর রহমানের অরুনের উপর। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। অরুনের উপর হামলার খবর পেয়ে তার আত্মীয় স্বজনরা ক্ষিপ্ত হয়ে ইমনের বাড়িতে যান। এসময় ইমন ঘর থেকে দা নিয়ে বেরিয়ে ফের হামলা চালায়। এতে অরুনের ভাতিজা নোমান মিয়া ও চাচাতো ভাই দিপু মিয়া মারাত্মক আহত হন। এসময় ক্ষুব্দ আত্মীয়-স্বজন ইমনের হাতের দা কেড়ে নিয়ে তাকে কুপিয়ে হাত পা বিচ্ছিন্ন করে ফেলে যায়। অতিরিক্ত রক্ষক্ষরণে ইমনের মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে কুলাউড়া থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে। ঘটনার পর ইমনের পিতা বাতির মিয়া ১১ জনের নামোল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৪/৫ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করলে পুলিশ অরুন, নোমান, দিপু ও সিপাকে আটক করে।
এঘটনার পর থেকে বরমচালের দক্ষিণ নন্দনগর ও খাদিমপাড়া গ্রামের আসামী ও তাদের আত্মীয় স্বজনসহ প্রায় ১৫ পরিবার পুরুষশূন্য। সেই সুযোগে নিহত ইমনের পরিবার ও আত্মীয় স্বজনরা সিপা বেগমের বাড়ির সীমানায় নির্মিত পিলার ভেঙে ফেলে। বাড়ির মহিলারা অভিযোগ করেন, রাত নামলেই তাদের ঘরে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে কে বা কারা। রাতে ভীতির সৃষ্টি করে। এদিকে সিপার ৫ সন্তানকে নিরাপত্তার অভাবে অনত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে। পুরুষশূন্য বাড়িঘরের নারীরা চরম আতঙ্কে রয়েছেন বলে জানান।
কুলাউড়ায় ইমন হত্যাকান্ড : দু’টি গ্রামের ১৫ পরিবার পুরুষশূন্য
