কমলগঞ্জ প্রতিনিধি:
২৩ নভেম্বর শুক্রবার দুপুরে উৎসবস্থল মাধবপুরের শিববাজার উন্মুক্ত মঞ্চ প্রাঙ্গণে হবে গোষ্ঠলীলা বা রাখাল নৃত্য। রাতে জোড় মন্ডপে রাসের মূল প্রাণ মহারাসলীলা। তাই মণিপুরী পল্লীর বাড়ির উঠোনে ছেলেমেয়েরা নাচছে। নাচের প্রশিক্ষণ চলছে। প্রশিক্ষক দেখিয়ে দিচ্ছেন নাচের ভঙ্গিসমূহ। কোনো জায়গায় চলছে রাসনৃত্যের মহড়া। কোনো জায়গায় রাখালনৃত্যের। এগুলো এখন শেষ সময়ের প্রস্তুতি। নৃত্যকে নিখুঁত করার ঘষামাজার শেষ পর্যায়ে। মণিপুরী সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় মহোৎসব“ রাসমেলা”।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ও আদমপুরের মণিপুরী অধ্যুষিত গ্রামের পাড়ায় পাড়ায় এখন রাস উৎসবের রং ফুটছে। মন্ডপে মন্ডপে চলছে রং চড়ানোর কাজ। হাওয়ায় এখন নীরব সুর বাজছে। রাস আসছে। রাস আসছে। এবারের রাস আগামী ২৩ নভেম্বর। মাধবপুর জোড় মন্ডপে পূর্ণ হচ্ছে ১৭৬তম রাস উৎসব। মাধবপুরের রাসমেলার আয়োজক হচ্ছে মণিপুরী মহারাসলীলা সেবা সংঘ। মণিপুরী বিষ্ণুপ্রিয়া সম্প্রদায়।
২৩ নভেম্বর শুক্রবার দুপুরে উৎসবস্থল মাধবপুরের শিববাজার উন্মুক্ত মঞ্চ প্রাঙ্গণে হবে গোষ্ঠলীলা বা রাখাল নৃত্য। রাতে জোড় মন্ডপে রাসের মূল প্রাণ মহারাসলীলা।
অন্যদিকে ১৯৮৬ সাল থেকে কমলগঞ্জের আদমপুরে মণিপুরী মৈতৈ সম্প্রদায় আয়োজন করছে পৃথক রাসমেলার। আদমপুরে পাশাপাশি দুটি স্থানে হবে এবার রাস উৎসব। আদমপুর জোড় মন্ডপ ও মণিপুরি কালচারেল কমপ্লেক্সে। এখানেও থাকবে যথারীতি রাখাল নৃত্য ও রাসলীলা।
তবে মণিপুরী বিষ্ণুপ্রিয়া ও মণিপুরী মৈতৈ এরা আলাদা স্থানে আয়োজন করলেও উৎসবের অন্ত:স্রোত, রসের কথা, আনন্দ-প্রার্থণা সবই একই। উৎসবের ভেতরের কথা হচ্ছে বিশ্বশান্তি, সম্প্রীতি ও সত্যসুন্দর মানবপ্রেম। আয়োজকরা জানিয়েছেন, রাস উৎসবকে সফল করতে প্রায় মাস খানেক ধরে ছয়টি বাড়িতে রাসনৃত্য এবং রাখালনৃত্যের প্রশিক্ষণ ও মহড়া চলছে। ৩টিতে রাসনৃত্য ও ৩টিতে রাখাল নৃত্য। মাধবপুরে ৩টি জোড় মন্ডপের আওতায় এই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। একেকটি মন্ডপে আছেন একজন পুরোহিত। সেই পুরোহিতের পরামর্শে একজন প্রশিক্ষক ধর্মীয় বিধিবিধান মতো গোপী বা শিল্পীদের প্রশিক্ষণ দেন। গোপীবেশী এই শিল্পীদের বয়স ১৬ থেকে ২২ বছর। শুধুমাত্র রাধার বয়স পাঁচ থেকে ছয় বছর। নৃত্যের প্রতিটি দলে ন্যূনতম ১২ জন অংশ নিয়ে থাকে। একইভাবে রাখাল নৃত্যেরও প্রতিটি দলে ২০ থেকে ২২ জন ১৪ থেকে ১৫ বছর বয়সী বালক অংশ নিয়ে থাকে।
মাধবপুর ও আদমপুরে রাসমেলার আয়োজকরা জানিয়েছেন, মহারাসলীলাল মূল উপস্থাপনা শুরু হবে সকাল ১১টা থেকে ‘গোষ্ঠলীলা বা রাখালনৃত্য’ দিয়ে। গোষ্ঠলীলায় রাখাল সাজে কৃষ্ণের বালকবেলাকে উপস্থাপন করা হবে। এতে থাকবে কৃষ্ণের সখ্য ও বাৎসল্য রসের বিবরণ। গোধূলি পর্যন্ত চলবে রাখালনৃত্য। রাত ১১টা থেকে পরিবেশিত হবে মধুর রসের নৃত্য বা শ্রীশ্রীকৃষ্ণের মহারাসলীলানুসরণ। এই রাসনৃত্য ভোর (ব্রাহ্ম মুহূর্ত) পর্যন্ত চলবে। এই রাসনৃত্যে গোপিনীদের সাথে কৃষ্ণের মধুরলীলাই কথা, গানে ও সুরে ফুটিয়ে তুলবেন শিল্পীরা।
মণিপুরী মহারাসলীলা সেবা সংঘের সাধারণ সম্পাদক শ্যাম সিংহ বলেন, ‘আমাদের প্রস্তুতি প্রায় সম্পূর্ণ। এখন পুরো এলাকায় উৎসবের আমেজ। আদমপুর মহারাস উদ্যাপন কমিটির নেতা ইবুংহাল সিংহ শ্যামল বলেন, ‘আমাদের সকল আয়োজন এখন শেষপর্যায়ে। উৎসব সুন্দরভাবেই সম্পন্ন হবে।’
কিভাবে যাবেন:
ঢাকা থেকে সরাসরি কমলগঞ্জ যাওয়া যায় ট্রেনে। সিলেটগামী পারাবত, উপবন ও জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস কমলগঞ্জ (ভানুগাছ) রেল স্টেশনে থামে। এছাড়া অন্যান্য ট্রেনে কমলগঞ্জ (শমসেরনগর) রেল স্টেশনে এসেও সেখান থেকে সহজেই মাধবপুর ও আদমপুর আসা যায়। ঢাকার কমলাপুর থেকে মঙ্গলবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে ছেড়ে যায় আন্তঃনগর ট্রেন পারাবত এক্সপ্রেস। দুপুর ২টায় প্রতিদিন ছাড়ে জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস। বুধবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন রাত ১০টায় ছাড়ে উপবন এক্সপ্রেস। ভাড়া ১১৫ থেকে ৭৬৫ টাকা।
এছাড়া ঢাকার ফকিরাপুল ও সায়দাবাদ থেকে হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী পরিবহন, সিলেট এক্সপ্রেস ইত্যাদি পরিবহনের নন এসি বাস যায় শ্রীমঙ্গল। ভাড়া ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা। শ্রীমঙ্গল থেকে কমলগঞ্জ (ভানুগাছ) যাওয়া যায় বাস কিংবা অটো রিকশায়। সেখান থেকে একইভাবে যাওয়া যাবে মাধবপুর ও আদমপুরে।
কোথায় থাকবেন:
কমলগঞ্জে থাকার তেমন কোনো ভালো ব্যবস্থা নেই। কাছাকাছি থাকার জন্য ব্যবস্থা হল লাউয়াছড়া বনের পাশে বেসরকারি সংস্থা ‘হীড বাংলাদেশ’র বাংলো (০১৭১৩২৭৪৭৪২)। এছাড়া কমলগঞ্জের কাছাকাছি থাকার জন্য আরও কয়েকটি ভালো জায়গা আছে। এছাড়া শমশেরনগর বিমানবন্দরের পাশে অবস্থিত ‘সুইস ভ্যালী’ রিসোর্টে আছে বেশ কয়েকটি আধুনিক কটেজ। এ রিসোর্টের কটেজগুলোতে ২ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকায় নানারকম কক্ষ আছে। যোগাযোগ: সুইস ভ্যালী রিসোর্ট, শমশেরনগর, মৌলভীবাজার। ফোন-০১৭৮৬৪৯৩৭০০। এছাড়াও আপনি স্বল্প খরছে থাকতে পারেন ভানুগাছ বাজার এলাকার স্থানীয় আবাসিক হোটেল ও গেষ্ট হাউজগুলিতে।