কুলাউড়া প্রতিনিধি:
সিলেট-আখাউড়া রেলপথের কুলাউড়া রেলওয়ে জংশনের উত্তর ও দক্ষিণ কলোনিতে প্রায় ২৫০ টি কোয়ার্টারের মধ্যে পরিত্যক্ত শতাধিক কোয়ার্টার অবৈধভাবে ভাড়া দেয়া হয়েছে। পাশাপশি কোয়ার্টারগুলোতে রয়েছে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ। রান্নার কাজে এসব বাসায় ব্যবহার করা হয় বিদ্যুতিক হিটার বা চুলা। এসব কোয়ার্টার থেকে ভাড়া ও বিদ্যুৎ বিলের নামে প্রতি মাসে লক্ষাধিক টাকা তুলে হাতিয়ে নিচ্ছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র।
জানা যায়, শতাধিক বাসায় অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ ও বৈদ্যুতিক হিটার ব্যবহারের ফলে অতিরিক্ত লোড পড়ে স্টেশন এলাকায় স্থাপিত বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমারের উপর। অতিরিক্ত বিদ্যুতের চাপে গত ২৬ অক্টোবর বিকল হয় ট্রান্সফরমারটি। যার ফলে ২৬ থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত বিদ্যুৎহীন ছিল গোটা স্টেশন এলাকা। প্লাটফর্ম ও ওয়েটিংরুমসহ আশপাশ এলাকা অন্ধকারে থাকায় চরম নিরাপত্তাহীনতা ও বিপাকে পড়েন যাত্রী সাধারণ।
রেলওয়ের একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, অবৈধভাবে কোয়ার্টার ভাড়া ও বিদ্যুৎ সংযোগ এটা নতুন কিছু নয়। দখল করা এসব কোয়ার্টারের প্রায় ঘরেই জ¦লে বিদ্যুতের হিটার চুলা। অবৈধ কোয়ার্টার ভাড়া ও বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে রেলের একটি চক্র দীর্ঘদিন থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। কুলাউড়া রেলওয়ে জংশনের উপর থেকে নিচ পর্যন্ত কিছু অসাধু কর্মকর্তারা বিদ্যুৎ ও কোয়ার্টার থেকে নিয়মিত মাসোয়ারা পেয়ে থাকেন। এ কাজে বিদ্যুৎ বিভাগের চিহ্নিত কতিপয় উর্ধ্বতন কর্মকর্তা-কর্মচারী ও রেলের একটি সিন্ডিকেট জড়িত রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরেই এ অবৈধ কাজ চললেও প্রভাবশালী এ সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কেউ কিছু বলার সাহস পায় না। যার ফলে প্রতি বছর ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে বলে এ সূত্রটি জানায়।
এ বিষয়ে জানতে মিটার রাইডার আব্দুর রহিমের মোবাইলে (০১৭১৪-৩৩০৮৪৬) একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
অনুসন্ধান ও রেলওয়ের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, রেলের বিদ্যুৎ বিভাগের মিটার রাইডার আব্দুর রহিমের নেতৃত্বে, লাইনম্যান খলিলুর রহমান ও জহির মিয়ার সহযোগিতায় প্রতি মাসে লাখ টাকারও বেশি বিদ্যুৎ বিল উত্তোলন করা হয়। এই টাকার একটি বড় অংশ আইডাব্লিউ জুয়েল হোসাইনসহ বিভিন্ন কর্মকর্তার পকেটে যায়। তাছাড়া রেলের খালি কোয়ার্টারগুলোও ভাড়া দেয় এই চক্রের লোকজন। এসব অবৈধ বাসাতে রাত-বিরাতে মদ-জোয়া, পতিতাবৃত্তিসহ নানা অসামাজিক কার্যকলাপ চলে। আয় হয় মোটা অঙ্কের টাকা। মাস শেষে আয়কৃত টাকা থেকে একটি ভাগ চলে যায় কুলাউড়া রেলওয়ে জংশনের কিছু অসাধু কর্মকর্তার কাছে। যার ফলে এসব বিষয় নিয়ে তারা জেনেও না জানার ভান করেন।
এব্যাপারে উর্দ্বতন উপ সহকারী প্রকৌশলী কুলাউড়া (আইডাব্লিউ) মো. জুয়েল হোসাইন নিজের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, কুলাউড়া রেলওয়ে জংশন এলাকায় ২৫০ টির মত কোয়ার্টার আছে। এরমধ্যে প্রায় ১৫০টি বরাদ্ধ দেয়া আছে। বাকি ১০০ টি কে বা কারা ব্যবহার করছে আমি জানিনা। তবে লিজ বা উপ ভাড়া দেয়া হচ্ছে এমনটি আমার জানা নেই, খোঁজ নিয়ে দেখবো। যদি অবৈধভাবে কেউ কোয়ার্টার ভাড়া দিয়ে থাকে তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিদ্যুতের বিষয় দেখা আমার ব্যাপার না, বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজন আছে তারা দেখে।
সিলেটের উদ্ধর্তন উপ সহকারী প্রকৌশলী আসাদ দৌলা জানান, আমি এখানে নতুন এসেছি। এখনো সবকিছু গুছিয়ে উঠতে পারিনি। তবে এ বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। উদ্ধর্তন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। প্রভাবশালী সিন্ডিকেট রয়েছে যাদের নেতৃত্বে অবৈধ বাসা দখল করে বিদ্যুৎ সংযোগ দিচ্ছে। তবে এরা যতই প্রভাবশালী হোক কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। এক প্রশ্নের জবাবে বলেন বাসা দখলমুক্ত করা আমার কাজ না। কুলাউড়া থেকে মাসোয়ারা পান কিনা জানতে চাইলে বলেন, আমার আগে দীর্ঘ ১৩ বছর কাজ করেছেন সিরাজুল ইসলাম খন্দকার। এব্যাপারে উনি ভালো বলতে পারবেন।
বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) প্রকৌশলী মো. আবদুল হাই জানান, রেলের জায়গায় যেসব অবৈধ বস্তি ও কোয়ার্টার বাসা রয়েছে, সেগুলো উচ্ছেদের কার্যক্রম পর্যায়ক্রমে চলছে। তাছাড়া অবৈধভাবে যারা বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছে এবং নিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।