মৌলভীবাজার প্রতিদিন ডেস্ক:
বাংলাদেশের কওমি মাদ্রাসাগুলোর দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্স সমমানের স্বীকৃতি দেয়ায় রবিবার ৪ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানানোর শোকরানা মাহফিল করে হেফাজতে ইসলাম। ঐ শোকরানা মাহফিলে সভাপতি ছিলেন হেফাজতে ইসলামের আমির আহমদ শফি।
অথচ এই সংগঠনটিই পাঁচ বছর আগে সরকারের বিরুদ্ধে ঢাকা অবরোধের ডাক দিয়ে শাপলা চত্বর অবস্থান নিয়ে ছিলো – যাতে সমর্থন জানিয়ে ছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া।
পাঁচ বছর পর সেই হেফাজত ইসলামের আমিরের সভাপতিত্বেই বিশাল সমাবেশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ দেয়া হলো।
এতে অংশ নিয়েছে হাজার হাজার মাদ্রাসা শিক্ষক শিক্ষার্থী। এ অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনাকে ‘কওমি জননী’ উপাধি দেয়া হয়েছে। এমন সময় এর আয়োজন করা হলো, যখন বাংলাদেশে সংসদ নির্বাচন একেবারেই কাছে।
পাঁচ বছরের ব্যবধানে এ ছিল এমন এক পরিবর্তনের চিত্র যা বাংলাদেশে আসন্ন নির্বাচনের ঠিক আগে রাজনীতিতে এক ব্যাপক আলোচনা ও বিতর্কের বিষয়।
তাই প্রশ্ন উঠেছে নির্বাচনকে সামনে রেখে বিশেষ এ আয়োজন থেকে আসলে সরকারি দলই লাভবান হতে চাইছে কি-না।
হেফাজতের এক সমর্থক বলেন, “দাওরায়ে হাদিসের মাস্টার্স সমমান স্বীকৃতি দিয়ে সরকার ভালো কাজ করেছে। আর কেউ ভালো কাজ করলে তিনি তার ফল পাবেন। যেহেতু এতো বড় কাজ হয়েছে – সেহেতু কৃতজ্ঞতার সাথেই মানুষ স্মরণ করবে”।
হেফাজতের অনেক সমর্থক বলছেন সরকার তাদের অনেক দাবি পূরণ করেছে তাই তারা চান বর্তমান প্রধানমন্ত্রীই আবার ক্ষমতায় আসুক।
অনেকে আবার বলছেন, “নির্বাচনের বিষয়ে আমাদের বড়রা যেভাবে বলবেন আমরা সেভাবেই কাজ করবো”।
এখানে ‘বড়রা’ বলতে কওমি সংগঠনগুলোর নেতাদেরই বুঝিয়েছেন তারা। আর এ কওমি সংগঠনগুলোর বড় অংশেরই নিয়ন্ত্রক হেফাজতে ইসলাম।
অনুষ্ঠানের সভাপতি আহমদ শফির লিখিত বক্তৃতা হেফাজতে ইসলামের একজন নেতা শোকরানা মাহফিলে পড়ে শোনান। সেখানে দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্স সমমান দিয়ে আইন কার্যকর করায় প্রধানমন্ত্রীর অকাতরে প্রশংসা করলেও সরাসরি কোন রাজনৈতিক বক্তব্য দেননি তিনি।
প্রধানমন্ত্রী অবশ্য তার বক্তৃতায় কওমি মাদ্রাসার সনদের স্বীকৃতি দেয়ার ক্ষেত্রে তার যুক্তি তুলে ধরে নির্বাচনের কথা উল্লেখ করেছেন – কিন্তু ‘ক্ষমতায় আসার বিষয়টি আল্লাহর হাতেই ছেড়ে দিয়েছেন তিনি’।
তিনি বলেন, “আমি যখনি সরকারে এসেছি কিছু করার চেষ্টা করেছি। শিক্ষা নীতিমালায় ধর্মীয় নীতিমালাকে স্বীকৃতি দিয়েছি। …. সামনে নির্বাচন আপনাদের দোয়া চাই। আল্লাহ চাইলে আবার বাংলাদেশের জনগণের খেদমত করার সুযোগ আমাকে দেবেন। আর যদি আল্লাহ না চান, দেবেন না। কারণ আমি সবকিছু আল্লাহর ওপরই ছেড়ে দিয়েছি”।
এ অনুষ্ঠানেই উদ্বোধনী বক্তব্য দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল জয়নুল আবেদীন। কওমি বিভিন্ন সংগঠনের নেতাদের কয়েকজনও তাদের বক্তব্যেও প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের পাশাপাশি জয়নুল আবেদীনেরও প্রশংসা করেছেন। আর সরাসরি আলেম ওলামাদের সহযোগিতা চেয়েছেন আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক শেখ আব্দুল্লাহ।
কিন্তু এসব কি আসলে ভোট বা নির্বাচনে সুবিধা নেয়ার জন্যই? ধর্মীয় রাজনীতি বা সংগঠনের বিষয়ে আওয়ামী লীগের এখনকার অবস্থান দলটির ঐতিহ্যগত সেক্যুলার বা ধর্মনিরপেক্ষ নীতির সাথে কতটা খাপ খায়?
বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, নির্বাচনের কি প্রতিফলন হলো বা না হলো – সেটি তারা দেখছেন না।
“কওমি মাদ্রাসায় ২২ লাখের মতো বেশি শিক্ষার্থী। তাদের ভবিষ্যৎ। এদেশে হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ খ্রিস্টান অনেকে আছে। শুধু আলেমদের জন্য কিছু করলেই নিরপেক্ষতা হারিয়ে যাচ্ছে- এটা তো একটা ভুল ব্যাখ্যা। এটা তা হতে পারেনা”।
তবে নির্বাচনের ঠিক আগে হেফাজত ও আওয়ামীলীগের এখনকার সখ্যতা নিয়ে নানা ধরণের আলোচনা-সমালোচনায় এখন রীতিমত সরগরম হয়ে উঠেছে ফেসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো।
বিবিসি বাংলা অবলম্বনে