ঐক্য প্রক্রিয়ায় জড়িত বাংলাদেশের দুই প্রবীন এবং অপেক্ষাকৃত পরিচ্ছন্ন রাজনীতিক ড. কামাল হোসেন ও ডাঃ বদরুদ্দোজা চৌধুরী দুজনেই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হতে চান। সে কথাটি রোববার ফাঁস নয়তো সেচ্ছায় ফাসঁ করা মাহি-মান্নার ফোনালাপে মাহির বেদনাহত কন্ঠে খানিকটা স্পষ্ট হয়েছে।
বিকল্পধারা বা কার্যত জনবিচ্ছিন্ন বিকল ধারার জাতীয় ঐক্য থেকে শেষ মুহুর্তে সরে অাসার পর্দার অন্তরালের কারন এটি। বিকল্পধারা ভারসাম্যের নামে জোটে বিএনপিকে দেড়শ অাসন দিতে চায়। প্রস্তাবটি ভারসাম্যের বিচারে শ্রুতিমধুর হলেও পুরোটাই অন্তঃসারশুন্য। কারন, এ জোটে বাকী দেড়শ অাসন তর্কের খাতিরে ধরলাম
বিএনপি ছেড়ে দিল জোটের অংশীদারদের। কিন্তু, দশ-পনেরোটি বাদে বাকী অাসনে এসব প্রার্থীরা যে জামানত ফেরৎ পাবার মতো ভোট টানতে পারবেন, দেশের মানুষ তা বিশ্বাস করে না।
অার, বৃদ্ধ পিতাকে অামাদের বাস্তবতায় কিভাবে পুত্রের হাতে নিয়ন্ত্রিত হতে হয় তার একটি উদাহরনও অামরা দেখলাম মাহি বি চৌধুরীর সাম্প্রতিক কর্ম-কুশলতায়।
দুই
দেশের সাধারন মানুষের সমর্থন অাদায়ের চেয়ে বিএনপির বৃহত্তর ঐক্যের প্রয়োজন এক ধরনের ভাবমুর্তির প্রয়োজনে। বিশেষ করে ২১ অাগষ্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় ও সরকার পরিচালিত ‘বিএনপি সন্ত্রাসের লালনকারী’ এমন প্রচারনার বিপরীতে।
কিন্তু,গনমাধ্যমে প্রচারিত খবরের সুত্রে দেশের মানুষ জেনেছে, মাহমুদুর রহমান মান্নাকে ড. কামাল হোসেন ঐক্য প্রক্রিয়ায় নিতে বা গুরুত্ব দিতে চাননি। না চাইবার অবশ্য সঙ্গত কারনও অাছে। তার দলে কতজন নেতাকর্মী অাছেন, তার চেয়েও বড় প্রশ্ন মান্না সাহেবদের ভাবমুর্তি। ভাবমুর্তির সংকটে থাকা ভাইবার মান্নাদের নিয়ে ড. কামালের নেতৃত্বাধীন
বিএনপির জোট কতখানি ভাবমুর্তি উজ্জল, বা ভাবমুর্তি সংকট কাটাতে পারবে, সেটি এখন দেখবার বিষয়।
তিন
গতকাল শনিবার মালয়েশিয়ায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী অানোয়ার ইব্রাহিম উপ-নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন । বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে অনেকে মালয়েশিয়ার গত নির্বাচন ও তৎপরবর্তী বাস্তবতাকে উদাহরন হিসেবে টানছেন।
গত মে মাসের নির্বাচনে অাধুনিক মালয়েশিয়ার জনক, সাবেক ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ড.মাহাতির মোহাম্মদের নেতৃত্বে অানোয়ার ইব্রাহিমের দল জয়লাভ করে। বয়োবৃদ্ধ
ড. মাহাতির বহুদিন দেশটির রাজনীতির মুলস্রোত থেকে দুরে থেকেও পুনরায় প্রধানমন্ত্রী হতে পেরেছিলেন। এর মুল কারন, মালয়েশিয়ার জনগনের কাছে তাঁর গগনচুম্বি জনপ্রিয়তা অার অাস্থা। গোটা এশিয়া মহাদেশে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে গনতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী থাকার রেকর্ডটি এখনো মাহাতির মোহাম্মদের।
তারপরও মালয়েশিয়ার মে মাসের নির্বাচনে মাহাতির-অানোয়ার জোট গঠনের প্রধান শর্ত ছিল, বিজয়ী হলে মাহাতির অানোয়ার ইব্রাহিমকে কারাগার থেকে মুক্ত করবেন অাইনী প্রক্রিয়া মেনে। অার দুবছর নিজে প্রধানমন্ত্রী থেকে সে সময়ের মধ্যে একটি অাসনে উপ-নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে অাসতে পারলে দুবছর পর অানোয়ার ইব্রাহিমকে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়ে নিজে অবসর নেবেন। অামাদের বাস্তবতায় বিএনপির বহু নেতাকর্মী খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সাথে অানোয়ার ইব্রাহিমের উদাহরন ও তুলনামুলক অালোচনায় এক ধরনের কনফিডেন্স খুজেঁ পান।
একসময় ড. কামাল হোসেন খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের কট্টর সমালোচক ছিলেন। অপরদিকে মালয়েশিয়ায় মাহাতির বনাম তাঁরই এক সময়ের শিষ্য অানোয়ার ইব্রাহিমের বিরোধ ছিল তার চেয়েও বহু ক্ষতচিহ্নে জর্জরিত। তারপরও তাদের ঐক্য হয়েছে, টিকে অাছে। কিন্তু, অামাদের বাস্তবতায় ড. কামাল হোসেন একজন শ্রদ্বেয় ও গ্রহনযোগ্য রাজনীতিক হলেও মাহাতির মোহাম্মদের জন ও ভোটের রাজনীতির উচ্চতার বিচারে তিনি অনেক পিছিয়ে। তারপরও, রাজনীতিতে অসম্ভব বলে কিছু নেই। তেমনি এখন যদি ড. বি চৌধুরী কাদের সিদ্দীকির সাথে গাটঁ-ছড়া বেধেঁ অাওয়ামীলীগ ও ড. কামালের নেতৃত্বাধীন জোটের মাঝখানে একধরনের প্রচ্ছন্ন সরকারী সমর্থন নিয়ে উদয় হন; তাতে অবাক হবার কিছু থাকবে না।
সরকারের প্রশাসনের নিয়ন্ত্রন ও পারস্পারিক নির্ভরতা,উপমহাদেশের ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতা এখনো বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে সরকারী দল সুবিধাজনক অবস্থায়। প্রধানমন্ত্রী যখন নির্বাচনী ইশতেহার প্রায় তৈরী করে ফেলেছেন, তখন বিরোধী শিবির ব্যাস্ত জোট-যটের বিরোধে। দ্বিতীয়ত, ডিসেম্বরে নির্বাচন হলে বিরোধী শিবিরের জনগনের কাছে যাবার যাবার সময়ও খুব একটা নেই।
তবে গতকাল শনিবার জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট যে সাত দফা দাবী ও ১১ টি লক্ষ ঘোষনা করেছে, দেশের বাস্তবতার বিচারে সেগুলো সেগুলো যুক্তিসংগত ও ন্যায্য।
সরকার এবং বিরোধী, দুই শিবিরেই নাম ও ব্যাক্তিসর্বস্ব দলের ছড়াছড়ি। জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট বা সরকার কোন পক্ষ রাজনীতির কূট-কৌশলের খেলায় সফল হবে, এটা নিয়ে বেশি অাগ্রহ দু্-ধারার নেতাকর্মী, সমর্থকদের। অার সাধারন
মানুষ নিজেদের ভোটটি দেবার সুযোগ সুযোগ পাবেন কিনা, ভোটের ফল বদলে যাবে কি-না; সেটি নিয়েই ভাবতে বেশি অাগ্রহী।
যুক্তরাজ্য প্রবাসী সাংবাদিক মুনজের আহমদ চৌধূরীর ফেইসবুক ওয়াল খেকে