স্টাফ রিপোর্টারঃ সামাজিক সংগঠনের আড়ালে গ্রামের সহজ-সরল মানুষের টাকা আত্মসাৎ মামলায় মৌলভীবাজার গণপূর্ত অফিসের পিয়ন স্বপ্ন দেব ও রাজনগর উপজেলার মশুরিয়া গ্রামের মোঃ ময়জুল হককে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। জেলার রাজনগর উপজেলার শ্বাসমহল গ্রামের অজয় দত্তের দায়ের করা টাকা আত্মসাৎ মামলায় ২৯ সেপ্টেম্বর মৌলভীবাজার সিনিয়র চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্টেট আদালতে হাজিরা দিতে গেলে সিনিয়র চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্টেট নাসির উদ্দিন তাদের জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠান।
জানা যায়, হাজতে থাকা আসামী মৌলভীবাজার গণপূর্তের পিয়ন স্বপ্ন দেব ও রাজনগর উপজেলার মশুরিয়া গ্রামের মোঃ ময়জুল হক জেলার রাজনগর উপজেলা সমাজ সেবা অফিস থেকে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হিসেবে মানব উন্নয়ন সমাজ কল্যাণ সংস্থা (মাউসস) নিবন্ধন নেন (নিবন্ধন নং ৪৩৬/১৭৮)। সংস্থার খাতা কলমে স্বপ্ন দেব কোষাধক্ষ্য ও মোঃ ময়জুল হক সভাপতি থাকলেও স্বপ্ন দেব নিজেকে সাধারণ সম্পাদক বলে গ্রাহকদের কাছে পরিচয় দিতেন। পরবর্তীতে তারা সমাজ উন্নয়ন মূলক কোনো কার্যক্রম পরিচালনা না করে সামাজিক সংগঠনের আড়ালে সঞ্চয় ও আমানত সংগ্রহ শুরু করেন।
স্থানীয়রা জানান, সংগঠনের নিবন্ধন নেয়ার পর থেকেই এই চক্র পরিকল্পিতভাবে এলাকার ধনাঢ্য পরিবারের লোকদের সদস্য করে টাকা সংগ্রহ করে। এক পর্যায়ে ২০১১ সাল থেকে ৬ বছর মেয়াদে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার সাধারণ দরিদ্র মানুষের কাছ থেকে মাসিক টাকা সংগ্রহ শুরু করে। চক্রটি উপজেলা জোড়ে নেটওয়ার্ক তৈরি করে দুই শতাধিক সদস্য করে দিগুণ লাভের কথা বলে টাকা সংগ্রহ শুরু কর। একটি দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, ইতিমধ্যে তারা ২৫ লক্ষ টাকার আমানত সংগ্রহ করেছে। অনেকে মেয়াদ শেষে এখন টাকা ফেরত চাইতে গেলে টালবাহানা করেছে সংস্থাটির নেতারা।
২০১১ সালে একই উপজেলার শ্বাসমহল গ্রামে উঠান বৈঠক করে ২৭ জন সদস্য নিয়ে ওই সংস্থার ‘গ্রাম সংগঠন’ গড়ে তুলেন। ঋণ দেয়া হবে বলে সদস্যসের কাছ থেকে মাসিক ও বাৎসরিক বিভিন্ন পরিমাণে সঞ্চয় সংগ্রহ করে। ৬ বছর মেয়াদ পূর্তিতে সঞ্চিত টাকার মুনাফাসহ দ্বিগুন টাকা ফেরত দেয়া হবে বলে তাদেরকে ফাঁদে ফেলে তারা। সদস্যদের কারো ২০১৬ সালে আবার কারো ২০১৭ সালে মেয়াদ শেষ হলেও দীর্ঘদিন ধরে দৌড়ঝাঁপ করেও টাকা ফেরত পাচ্ছেন না।
মামলার এজহার সূত্রে জানা যায়, মামলার বাদী ২০১১ সাল থেকে ১১ নভেম্বর ২০১৭ইং পর্যন্ত ওই সংস্থার কাছে ১৬ হাজার ৬০ টাকা জমা করেন। পরবর্তীতে ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য তিনি সংস্থার কাছে ৪ লক্ষ টাকা ঋণ চাইলে আসামীরা আরও ১ লক্ষ টাকা এককালিন জমা করার কথা বলে। অজয় দত্ত আত্মীয় স্বজনদের কাছ থেকে হাওলাদ এনে ১ লক্ষ টাকা দেন। ওই ১ লক্ষ টাকা নিয়ে ১ সপ্তাহ পরে ঋণের ৪ লক্ষ টাকা দিবেন এবং পাস বইয়ে ওই ১ লক্ষ টাকা তুলবেন বলে সংস্থার নেতারা তাদের বিদায় করেন। ১ সপ্তাহ পরে অজয় দত্ত ঋণের টাকা আনতে তাদের কাছে গেলে আসামীরা বলেন, ঋণ দিতে আরও দেরি হবে। এসময় বাদী রেখে যাওয়া তার পাস বই হাতে নিয়ে দেখতে পান ১ লক্ষ টাকা তোলা হয়নি। পাস বইয়ে টাকা না তোলার কারণ জানতে চাইলে আসামীরা অজয় দত্তকে হত্যার হুমকি দিয়ে বলেন, “কিসের টাকা, কিসের ঋণ এবং কিসের সঞ্চয়”। এভাবে আসামীরা মামলার ২৫ জন স্বাক্ষী’র কাছ থেকে বিভিন্ন হারে টাকা নিয়েছেন। কিন্তু একজনকেই টাকা ফেরত দেননি এবং তাদের কাউকেই কোনো ঋণও দেননি। এদিকে রাজনগর কার্যালয়ে সেলাই প্রশিক্ষণের নামে বিভিন্ন এলকার নারীদের টার্গেট করে সদস্য করা হয়। এসব সদস্যের কাছ থেকেও মাসিক ও বার্ষিক কিস্তিতে বিভিন্ন হারে সঞ্চয় সংগ্রহ করা হয়।
শ্বাসমহল গ্রাম সংগঠনের সদস্য শিবানী রানী দে বলেন, আমি বার্ষিক ৬২৪০ টাকা হারে ৬ বছর সঞ্চয় করি। ২০১৬ সালে মেয়াদ শেষ হলে তাদের সাথে যোগাযোগ করলে তারা নানা অজুহাত দেখাতে শুরু করে। পরিবারের শেষ সঞ্চয়ের টাকাগুলো পাবো কিনা তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছি।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সুমন দেবনাথ বলেন, গত ২০১৭ সালে তাদের সর্বশেষ কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে। সম্প্রতি তারা অনুদানের আবেদন করলে আমরা জেলা অফিসকে তাদের কমিটি ও অডিট রিপোর্ট না পাওয়ার বিষয়টি জানিয়েছি।
জেলা সমাজ সেবা অফিসের উপ-পরিচালক আদিল মুত্তাকিন বলেন, সামাজিক সংগঠন হিসেবে তাদের অনুমোদ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা এই কাজ না করে সম্পূর্ণ নিয়ম বহির্ভূতভাবে সঞ্চয় সংগ্রহ করছে। তবে এব্যাপারে আমি কোনো অভিযোগ পাইনি।