ষ্টাফ রিপোর্টারঃ
মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার টেংরা বাজারে একটি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নামকরণ নিয়ে গত ৫ মাস ধরে দু’পক্ষের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ বুধবার সকাল থেকে স্কুল পার্শ্ববর্তী এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় দুটি পক্ষ মুখামুখি অবস্থানে রয়েছে। যে কোনো সময় বড় ধরনের দূর্ঘটনার আশষ্কা করছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে উপজেলার টেংরা বাজারে অব্যবহৃত একটি আশ্রয় শিবিরে অস্থায়ীভাবে ‘টেংরা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। এ নামেই ওই আশ্রয় শিবিরে ২০১৯ শিক্ষা বর্ষের পাঠদান কার্যক্রম শুরু হয় এবং ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত ২৫০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। পরবর্তীতে একই ইউনিয়নের শালন গ্রামের আমেরিকা প্রবাসী আরজান খান ভূমি দানের শর্তে ‘আরজান খান আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়’ নামকরনের প্রস্তাব দেয়া হয়। সে আলোকে বর্তমান চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে সভা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হলে আরজান খান বিদ্যালয়ের নামে ৭৫ শতাংশ জমি (৫০৫/১৯ নং দলিলে) দান করেন। পরে বিদ্যালয়ের সাইনবোর্ড পরিবর্তন করে ‘আরজান খান আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়’ নামে লাগানো হয়। এদিকে বিদ্যালয়ের নাম পরির্তন নিয়ে এলাকায় পক্ষে বিপক্ষে দুটি গ্রুপ তৈরি হয়। চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে নতুন নামের বিরোধীতা করে বিদ্যালয়ের আরজান খান নামের নতুন সাইনবোর্ড নামিয়ে দেয় একটি গ্রুপ। আবার একটি গ্রুপ ‘আরজান খান আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়’ নাম থাকার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। এঘটনায় বিদ্যালয়ের বিভিন্ন আসবাবপত্র ভাংচুরসহ ১০ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবীর অভিযোগ এনে বিদ্যালয় অবকাঠামো উন্নয়ন কমিটির সভাপতি ও ভুমি দাতা প্রবাসী আরজান খানের শ্বশুড় আবুল ফয়েজ ৭ এপ্রিল মৌলভীবাজার আদালতে পিটিশন (নং ১০৪/২০১৯) দায়ের করেন। এ মামলায় টেংরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান টিপু খান ও তার দুই ভাইসহ ৭ জনকে আসামী করা হয়। এঘটনাকে কেন্দ্র করে উভয় পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি মামলা হয়েছে।
জানা যায়, আমেরিকা প্রবাসী আরজান খান তার দানকৃত নতুন জায়গায় নিজস্ব অর্থায়নে ভবন তৈরি করে কয়েক দিন যাবত পাঠদান শুরু করেছেন। অপর দিকে ইউপি চেয়ারম্যানের কিছু লোক আশ্রয় শিবিরে টেংরাবাজার আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় নামে আরেকটি স্কুলের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। দুটি স্কুল আলাদা হওয়ার পর সকল শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা আরজান খান উচ্চ বিদ্যালয়ে চলে যান। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত কয়েক দিন যাবত স্থানীয়দের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। স্থানীয়রা জানান, শিক্ষার্থীরা টেংরাবাজার আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে আরজান খান উচ্চ বিদ্যালয়ে আসতে চাইলে তাদেরকে রাস্তায় আটকানো হয়। আরজান খানের বাড়ির রাস্তায় চেয়ারম্যানের লোকের মাধ্যমে বেড়া দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।
পুলিশ জানায়, বুধবার সকালে আরজান খান উচ্চ বিদ্যালয়ে একটি মতবিনিময় সভা হওয়ার কথা ছিল। এই মতবিনিময় সভাকে কেন্দ্র করে দুটি বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করলে সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত স্কুল পার্শ্ববর্তী এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়।
স্থানীরা বলেন, দুটি পক্ষই ২’শ ৫০ জন শিক্ষার্থীর জীবন নিয়ে চিনিমিনি খেলছেন। এটা সমাধান না হলে কুমলমতি শিক্ষার্থীদের জীবন ধ্বংস হয়ে যাবে।
রাজনগর থানার ওসি (তদন্ত) আবুল কালাম বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ১৪৪ ধারা জারি করেছি। বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা চলছে।