ষ্টাফ রিপোর্ট:
কৃষি ব্যাংক মৌলভীবাজারের রাজনগর শাখা থেকে উৎকোচ ছাড়া লোন পাচ্ছেন না প্রান্তিক কৃষকরা। এ সিন্ডিকেটে ব্যাংকের স্টাফ, কতিপয় জনপ্রতিনিধি এবং ব্যাংক কর্তৃক মনোনীত উপজেলার বিভিন্ন এলাকার দালাল জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। এমন অনিয়মে অর্থনীতিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়েছেন উপজেলার প্রান্তিক কৃষকরা। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে যাঁদের লোনের প্রয়োজন নেই, এমনকি মাঠে জমিও নেই, তাঁদের নামেও লোন পাস হচ্ছে। ত্রিমুখি সিন্ডিকেটে এ উপজেলায় সরকারের কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
কৃষকরা জানান, মাঠ পর্যায়ে কৃষি ব্যাংক কর্মকর্তাদের দুর্নীতির জাল পাতা রয়েছে। জমি আছে ও অস্বচ্ছল কৃষকরা আবেদন করলে নানা অজুহাত দেখিয়ে তাদের লোন দেয়া হয়নি। বাধ্য হয়ে কৃষকরা সিন্ডিকেটের ধারস্থ হয়ে মোটা অংকের ঘুষ দিয়ে লোন নিতে হচ্ছে। আবার কেউ কেউ হয়রানির স্বীকার হয়ে স্থানীয় দাদন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে চড়া সুদে টাকা নিয়ে কৃষি জমি আবাদ করছেন। এতে করে কৃষকরা লাভের চেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন বেশি। পুরো বছর কৃষকরা সুদের দেনা পরিশোধ করে সর্বশান্ত হচ্ছেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সেপ্টেম্বর মাসে উপজেলার পাঁচগাঁও ইউনিয়নের মতিন ওরফে মামুকে ভাতা দেয়ার কথা বলে ব্যাংকে নেন উপজেলার পাঁচগাঁও ইউনিয়নের ইউপি সদস্য তারেক আহমদ কর্ণেল। এক পর্যায়ে মতিন মিয়া জানতে পারেন ভাতার পরবর্তে তার নামে ২ লক্ষ টাকার লোন পাস হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে মতিন মিয়া আপত্তি জানালে ব্যাংক ব্যবস্থাপক এ লোন বাতিল করেন। মতিন মিয়া বলেন, “লোন তোলার জন্য আমার জমিও নেই। লোন তোলার প্রয়োজনও নেই। ঘটনার পরের দিন ইউপি সদস্য তারেক আহমদ কর্ণেল ও তার ভাই জয়নাল মিয়া আমার বাড়িতে এসে হাতে মুখে ধরে ক্ষমা চান”।
ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রায় ২’শ জন গ্রাহকের মধ্যে ১ কোটি টাকার শস্য লোন দেয়া হয়েছে।
গ্রাহক সেজে লোনের জন্য কৃষি ব্যাংক রাজনগর শাখার সিকিউরিটি গার্ড শাহিন এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, “কৃষি জমির কাগজ থাকলে ২ লাখের মতো লোনের ব্যবস্থা করে দেয়া যাবে। এ জন্য শাহিন প্রতিবেদকের কাছে ৩৫ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন। ব্যাংক মনোনীত উপজেলার রক্তা গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য আকামত মিয়ার সাথে কথা হলে তিনি প্রতিবেদককে বলেন, কাগজপত্র থাকলে ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত লোনের ব্যবস্থা করে দেয়া যাবে। ৩০/৩৫ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন আকামত।
কৃষি ব্যাংক রাজনগর শাখা থেকে লোন গ্রহীতা উপজেলার পাঁচগাঁও ইউনিয়নের বাপ্পি বলেন, “দুই লক্ষ টাকা লোনের জন্য ইউপি সদস্য তারেক আহমদ কর্ণেল’কে ৫৫ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। অপর লোন গ্রহীতা মিন্নত আলী বলেন, ২ লক্ষ টাকা লোন আনতে ৩৫ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে। আমাদের এলাকার যারা লোন নিয়েছেন সবাইকে আমার মতো ঘুষ দিতে হয়েছে।
ইউপি সদস্য তারেক আহমদ কর্ণেল বলেন, মতিন মিয়ার নামে আমার কিছু জায়গা আছে। ওই জায়গার কাগজপত্র দিয়ে এমন মিয়া লোন তুলার জন্য মতিন মিয়াকে নিয়ে কৃষি ব্যাংকে যান। প্রথমে সম্মত হলে পরের দিন মতিন মিয়া সম্মতি না দেয়ায় লোন তুলা হয়নি। ইউপি সদস্য কৃষকদের কাছ থেকে লোনের কথা বলে ঘুষ নেয়ার কথা অস্বীকার করেন।
কৃষি ব্যাংক রাজনগর শাখার মাঠ কর্মকর্তা আজহারুল ইসলাম বলেন, তদন্ত করে মতিন মিয়ার নামে লোন পাস করা হয়েছিল। পরবর্তীতে মতিন মিয়া সম্মত না হওয়ায় লোন বাতিল করা হয়। কৃষকদের আবেদনের প্রেক্ষিতে তদন্ত করে লোন পাস করা হয়। বাহিরে কে কাকে টাকা দেয়, সেটা আমার জানা নেই।
কৃষি ব্যাংক রাজনগর শাখার ব্যবস্থাপক এস এম আমিনুল ইসলাম বলেন, আমিও শুনেছি এরকম হচ্ছে। কিন্তু লিখিত কোনো অভিযোগ কিংবা প্রমাণ না থাকায় ব্যবস্থা নিতে পারছিনা। তিনি আরও বলেন, মতিন মিয়া যখন বলেন তিনি লোন নিতে আসেননি। তাকে ভাতার কথা বলে ব্যাংকে আনা হয়েছে। এ কথা শুনার পর তার লোন বাতিল করি এবং লোনের তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজহারুল ইসলামকে সাময়িকভাবে মাঠের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।
কৃষি ব্যাংক মৌলভীবাজার মুখ্য আঞ্চলিক কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক মোমিনুল ইসলাম বলেন, আপনার মাধ্যমে আবগত হলাম বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখে ব্যবস্থা গ্রহন করছি।