ড. মোহাম্মদ আবু তাহের
বাংলা সাহিত্যকে বিশ্বের দরবারে মর্যাদার আসনে যে সব কবি সাহিত্যিক প্রতিষ্ঠিত করেছেন তাদের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রধান ভূমিকা রেখেছেন। অনেক বিশেষণে তাকে বিশেষায়িত করা যায়। তিনি একাধারে কবি, নাট্যকার, সাহিত্যিক, ছোট গল্পকার, গীতিকার, সুরকার ইত্যাদি। তিনি কলকাতার জোঁড়াসাকোর বিখ্যাত ঠাকুর পরিবারে ১২৬৮ বঙ্গাব্দের ২৫ শে বৈশাখ জন্মগ্রহন করেন। ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের ২২ শে শ্রাবন তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মাত্র ১৪ বছর বয়সে তাঁর প্রথম কবিতার বই বনফুল প্রকাশিত হয়। দীর্ঘ সাহিত্য জীবনে তিনি অসংখ্য কবিতা, গান, উপন্যাস ও প্রবন্ধ রচনা করেছেন। রবীন্দ্রনাথ শুধু শিল্প সাহিত্যে নন, তিনি প্রতিটি বাঙ্গালীর চিন্তা চেতনায় এবং মননে, সমগ্র সত্তা জুড়ে প্রবলভাবে বিরাজমান। তাই তার জন্মদিন ২৫ বৈশাখ এলেই প্রতিটি বাঙ্গালী উচ্ছসিত হয়, উদ্দীপ্ত হয়, অনুপ্রাণিত হয়, ভালবাসায় সিক্ত হয়, শ্রদ্ধায় অবনত হয়। ২৫ শে বৈশাখ সাহিত্য প্রেমিক মানুষদের অত্যন্ত গৌরবের অসম্ভব আবেগের। রবীন্দ্রনাথকে অসংখ্যবার পড়ে ও শেষ করা যায় না। এক অসীম মহাসাগরের মতো তাঁর সৃস্টিকর্ম। এক অপার বিস্ময় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। আকাশের সূর্যের মতোই আমরা তাঁর আলোর ছোয়ায় নিজেদের ভেতরকার অন্ধকার দূর করতে গর্ববোধ করি। সূর্য যেমন সবার তেমনি রবীন্দ্রনাথকে ও দেশ বা কালের গন্ডিতে আবদ্ধ করা যাবে না। এমন ঘটনা পৃথিবীতে বিরল একজন কবি দুটি স্বাধীন দেশের জাতীয় সংগীতের রচয়িতা। রবীন্দ্রনাথের কবিতা ও গান কোটি কোটি মানুষকে নতুনভাবে বাঁচিয়ে তোলে জাগিয়ে তোলে, প্রেরণা যোগায়। ঐ মহামানব আসে, দিকে দিকে রোমাঞ্চ লাগে/ মর্ত্যধুলির ঘাসে ঘাসে/ সুরলোকে বেজে ওঠে শংখ/ নবলোকে বাজে জয়ডংক/ এল মহাজন্মের লগ্ন। বাঙ্গালীর বিস্ময় প্রতিভা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এভাবেই নিজের অমরত্তের বার্তা জানিয়েছিলেন। বাঙ্গালীর আত্মিক মুক্তি, বাংলাভাষা ও সাহিত্যের উৎকর্ষের মূলনায়ক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তিনি ছিলেন বাঙ্গালীর সংস্কৃতির প্রতীক। রবীন্দ্রনাথ এমন এক ব্যক্তিত্বের নাম যাকে নিয়ে সারা পৃথিবীর মানুষ গর্ব করতে পারে, তিনি মানবতাবাদী কবি। রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে আমাদের গর্ব যে তিনি কলকাতায় জন্মগ্রহন করেছেন। এশিয়া মহাদেশে জন্মগ্রহন করেছেন। বিশ্বজয়ী কালজয়ী রবীন্দ্রনাথ ১৬১ বছর পর ও বাঙ্গালীর কাছেই নয় পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষাভাষী এমনকি ক্ষুদ্র আঞ্চলিক জাতিসত্তার কাছে ও প্রাসঙ্গিক। সুদীর্ঘ ৪০০ বছরের বেশি সময় পর ও ফরাসীদের কাছে ভিক্টর হুগো জীবন্ত হয়ে আছেন, ইংরেজদের কাছে অমর হয়ে আছেন ডিকেন্স চার্লস, রবীন্দ্রনাথ তেমনি ভারতীয় উপমহাদেশের প্রাণ হয়ে রয়েছেন। শিল্পানুভূতিকে নানারূপে প্রকাশ করার এক অলৌকিক ক্ষমতা ছিল রবীন্দ্রনাথের। তিনি শুধু এক বিস্ময়কর প্রতিভাই নন, তিনি তাৎপর্যপূর্ন অর্থে একেবারেই ব্যতিক্রমধর্মী। প্রায় প্রতিদিন প্রতিমূর্হুতে বিশ্বের আর কোন মহান লেখকের সাহিত্য চিন্তা চেতনা সংশ্লিষ্ঠ জনগোস্টিকে এত বেশি উদ্দীপ্ত ও আলোড়িত করে বলে মনে হয় না। বিশ্বের সকল মানুষের মধ্যে সম্প্রীতি ও মুক্ত চিন্তার এক মানবিক সমাজ সৃষ্টি ছিল তার মূল লক্ষ্য। তিনি ছাত্রসমাজের আর্দশ। তিনি যুবসমাজের আর্দশ। তিনি সকল মানুষের আর্দশ। তাঁর প্রতিটি লেখা/বাণী শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করে এক মহান শক্তি হিসেবে কাজ করে, সকল মানুষকে উদ্দীপ্ত করে। বর্তমানে আমরা জ্ঞান বিজ্ঞানে এগিয়ে যাচ্ছি কিন্তু মানবতাবোধে পিছিয়ে যাচ্ছি। রবীন্দ্রনাথ মানবতাবোধ জাগ্রত করার কথা বলেছেন, তাঁর অমর বাণী
কে লইবে মোর কার্য কহে সন্ধ্যারবি
শুনিয়া জগত কহে নিরূত্তর ছবি।
মাটির প্রদীপ ছিল সে কহিল স্বামী
আমার যে টুকু সাধ্য করিব তা আমি
এই মাটির প্রদীপের দায়িত্ব পালন করতে রবীন্দ্রনাথ আহবান করেছেন। রবীন্দ্রনাথ একে অন্যের মিলনকেও সাহিত্য আখ্যায়িত করেছেন। ভারত বর্ষের রামায়ন-মহাভারতের রচয়িতা ঋষি বাল্মিকী ও বেদব্যাস, পারস্যের ওমর খৈয়াম, আরবের কবি ইমরুল কায়েস, শেখ সাদী, বাংলার রবীন্দ্রনাথ, প্রমুখ অতিপ্রাকৃত এবং মহাজাগতিক শক্তি সম্পর্কে প্রায় একই কথা অভিন্ন সুরে বলেছেন। রবীন্দ্রনাথের স্টে বার্ডস বইয়ের অসাধারন পংত্তি হলো if you shed tears when you miss the sun you also miss the stars, অর্থাৎ সূর্য নেই বলে তুমি যদি অশ্রুপাত করো তাহলে তুমি তারাদের ও পাবে না। এই বইয়ে তিনি আর ও বলেছেন Man does not reveal himself in his history he struggles up through it. মানুষ নিজেকে ইতিহাসের মধ্য দিয়ে প্রকাশ করেনা সে সংগ্রাম করে ইতিহাস ফুঁড়ে বেরিয়ে আসে। এভাবেই রবীন্দ্রনাথ মানুষকে বিজয়ী হওয়ার অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। ব্যক্তিগত জীবনে রবীন্দ্রনাথের সুখের চেয়ে দুঃখ ছিল বেশী। মাত্র ১৪ বছর বয়সে মা সারদা সুন্দরী দেবীকে হারান। স্ত্রী মৃনালিনীর মৃত্যু হয় ৩০ বছর বয়সে। রবীন্দ্রনাথ নতুন উদ্যমে সফলতার পানে এগিয়ে যেতে উদ্বুদ্ধ করতেন, তিনি বলেছেন দুর হলো দৈন্যদন্ধ/ ছিন্ন হইলো দুঃখবন্ধ/ উৎসবপতি মহানন্দ। রবীন্দ্রনাথ মনে প্রাণে ধারন করতেন মানুষের হৃদয়ের মাঝে বেঁচে থাকাই সত্যিকারের বেঁচে থাকা, এ জন্য হয়তো তিনি তাঁর যৌবনকালেই বলেছেন মরিতে চাহিনা আমি সুন্দর ভুবনে মানবের মাঝে আমি বাঁচিবারে চাই।
রবীন্দ্রনাথের একটি গান আছে মাঝে মাঝে তব দেখা পাই/ চিরদিন কেন পাইনা। রবীন্দ্রনাথ মনে করতেন তিনি তাঁর গানের মধ্য দিয়ে বেঁচে থাকবেন। রবীন্দ্রনাথের এ আশাবাদ সত্য প্রমাণিত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের কবিতায় পাওয়া যায় হরেক রকমের অনুভূতির নির্যাস। মৃত্যুর দুই দিন পূর্বেও তিনি বিছানায় শুয়ে রচনা করেছেন- তোমার সৃষ্টির পথ রেখেছ আকীর্ণ করি/বিচিত্র ছলনাজলে হে ছলনাময়ী/ অনায়াসে যে পেরেছে ছলনা সহিতে/ সে পায় তোমার হাতে শান্তির অক্ষয় অধিকার। বাংলা সাহিত্যের পরতে পরতে রবীন্দ্রনাথের সৃজনশীলতা বাংলাভাষাকে করেছে মহিমান্বিত। রবীন্দ্রনাথ একবার বলেছিলেন মানুষকে বিস্মিত করনা, মানুষকে মুগ্ধ করো। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন আমি এক জীবনে দুই জীবনের কাজ করে গেলাম। রবীন্দ্রনাথ নারী মুক্তির পক্ষে শক্তিশালী অবস্থান গ্রহন করেছেন। নিম্নবর্ণের মানুষের প্রতি শুধু করুনা নয় সমাজে তাদের বৈষম্যহীন ও শক্তিশালী অবস্থান সৃস্টির লক্ষ্যে তিনি তার ভাবনাকে প্রকাশ করেছেন। সামাজিক অগ্রগতির পথ নির্দেশ করে গেছেন। ভারত বাংলাদেশের এখনো মুল শক্তি কৃষক সমাজ, সেই কৃষক শ্রমিক সমাজকে অনুপ্রাণিত করে তিনি লিখেছেন-
চাষি ক্ষেতে চালাইছে হাল
তাতি বসে তাত বোনে, জেলে ফেলে জাল
বহুদুর প্রসারিত এদের বিচিত্র কর্মভার
তারই পরে ভর করে চলিতেছে সমস্ত সংসার
আমরা আমাদের যে কোন শুভ অনুষ্ঠান বা জাতীয় উৎসবে যেভাবে রবীন্দ্রনাথকে স্মরণে নেই তাতে বুঝা যায় বাঙ্গালী জাতি সত্তার সংগে গভীরভাবে রবীন্দ্রনাথকে মিশিয়ে নিয়েছেন। রবীন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতন সম্পর্কে এক জায়গায় বলেছেন আমাদের বিদ্যালয়ের ছাত্ররা একটা বড় জিনিস লাভ করেছে। যেটা ক্লাসের জিনিস নয়, সেটা হচ্ছে বিশ্বের মধ্যে আনন্দ। প্রকৃতির সঙ্গে আত্মীয়তার যোগ। সেটা যদিও পরীক্ষায় সহায়তা করেনা, কিন্তু জীবনকে স্বার্থক করে। আমাদের ছেলেরা বৃষ্টিতে ছুটে বেড়ায়, জাৎস্না রাত্রিতে আনন্দ ভোগ করে আর রৌদ্রকে ডরায়না। এগুলোকে আমি সামান্য জিনিস মনে করিনি। সেই আসামান্য অসাধারন কাজগুলো ধারাবাহিকভাবে করে যাচ্ছেন ব্যারাকপুর রাস্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথ কলেজ কর্তৃপক্ষ। রবীন্দ্রনাথের ১৬২ তম জন্মবাষিকী উপলক্ষে রবীন্দ্রজয়ন্তী উদযাপন অনুষ্ঠানের আয়োজন নি:সন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে। কলেজ কর্তৃপক্ষ রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী উদযাপনের মাধ্যমে এক মহান কর্মযজ্ঞ সম্পাদন করেছেন। ব্যারাকপুর রাস্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথ কলেজের প্রিন্সিপাল প্রফেসর ডক্টর মনোজিৎ রায় একজন আর্দশ শিক্ষক, মানবতাবাদী মানুষ। সমাজ জীবনে অবক্ষয়ের সময়ে যারা সমাজকে সঠিক পথে পরিচালনার জন্য হাল ধরেন তাদের অন্যতম পুরোধা হলেন শিক্ষক সমাজ। একদিকে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেয়া অন্যদিকে সেই আলোতে সমাজকে আলোকিত করা। এমন কঠিন ও মহৎ কাজটি করে থাকেন আমাদের শিক্ষক সমাজ। আর যেসব শিক্ষক সর্বক্ষেত্রে সমাজের নৈতিকতার বিষয়টি উচু করে ধরে রাখেন তারা শিক্ষকদের ও আর্দশ। তেমনি একজন শিক্ষক হলেন আমাদের প্রফেসর ডক্টর মনোজিৎ রায় মহাশয়। প্রিন্সিপাল মনোজিৎ রায়ের জ্ঞান, প্রজ্ঞা, দক্ষতা, মানবিকতা, মানসিক ঔদার্যের বিশালতা আমাকে মুগ্ধ করেছে। তার অসাধারণ নেতৃত্বে সমুদ্রের স্রোতধারার মতো ব্যারাকপুর রাস্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথ কলেজ সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। কলেজের সর্বস্তরের শিক্ষার্থীদের তিনি জ্ঞান দক্ষতা নেতৃত্বের যোগ্যতা অর্জনের মাধ্যমে মানবিক গুনাবলী সম্পন্ন মানুষ হয়ে সাংগঠনিক দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে মানবসম্পদে রূপান্তরের জন্য তিনি নিরলস প্রচেষ্ঠা চালিয়া যাচ্ছেন।
বিখ্যাত বিজ্ঞান সাময়িকী সায়েন্টিফিক আমেরিকান এর এক রিপোর্ট থেকে জানা যায় যতবেশী মানুষের সাথে মানুষের সখ্য হবে ততই বাড়বে মানুষের বুদ্ধিমত্তা। জন্মের পর থেকে মৃত্যু পযর্ন্ত মানুষের মস্তিষ্কে নিউরণ সংখ্যা একই থাকে বাড়ে শুধু নিউরাল কানেক্টিভিটি বা সংযোগায়ন। নিউরোনে নিউরোনে যত বেশি সংযোগ ঘটবে ততই বাড়বে মস্তিষ্কের সামর্থ্য। মানুষ ভাবতে শিখবে নানা দৃষ্ঠিকোন থেকে মানুষ হয়ে ওঠবে চৌকস ও মেধাদীপ্ত। প্রিন্সিপাল ডক্টর মনোজিৎ রায় তার শিক্ষার্থীদের চৌকস ও মেধাদীপ্ত করার জন্য পাঠ্যসূচীর বাইরে বহুমূখী প্রশংসনীয় পদক্ষেপ চলমান রেখেছেন। রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন কোনো প্রতিষ্ঠানের ওপরে তাঁর কোন আস্থা নেই। কিন্তু সেই মানুষগুলোর ওপর তাঁর আস্থা আছে যাদের অন্তত তিনটি গুণ আছে ১. যারা সঠিকভাবে চিন্তা করতে পারে ২. মহান অনুভব যাদের চিত্তে সবসময় থাকে ৩. জগৎ ও জীবনের স্বার্থে যারা সঠিক র্কম সম্পাদন করতে পারে। এই তিনটি গুন সম্বলিত মানুষ দেশ ও সমাজ এবং প্রতিষ্ঠানের জন্য সম্পদ। আমি ব্যারাকপুর রাস্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথ কলেজের প্রিন্সিপাল প্রফেসর ডক্টর মনোজিৎ রায় মহাশয়কে এরকম মানুষ মনে করি। সফল নেতৃত্বের জন্য যে তিনটি গুন সবচেয়ে বেশি দরকার তা হলো কমিটমেন্ট অর্থাৎ চেতনার প্রতি বিশ্বাস দ্বিতীয় ক্যাপাসিটি অর্থাৎ চেতনাকে বিকশিত করার সামর্থ এবং তৃতীয়ত কমিউনিকেশন অর্থাৎ চেতনার বিস্তৃতির জন্য কার্যকর জনসংযোগ। এ গুনগুলো ডক্টর মনোজিৎ রায় মহাশয় অর্জন করেছেন বলে আমার কাছে মনে হয়েছে। পৃথিবীতে কোন কিছুই সঠিক নেতৃত্ব ছাড়া হয়না। সঠিক নেতৃত্বের কারণে একটি প্রতিষ্ঠান একটি সমাজ একটি দেশ এমনকি একটি নতুন পৃথিবী সৃষ্টি হতে পারে। সুতরাং নেতৃত্বের বিকাশ দরকার। শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হল মনের দিগন্তকে বড় করা। ক্ষুদ্রতার উর্দ্ধে ওঠা, সুন্দর মানুষ হওয়া, মানবিক হওয়া, সত্যিকারের মানুষ হওয়া, চৌকস মানুষ হওয়া। সবকিছুতে খাপ খাইয়ে নেয়ার যোগ্যতা অর্জন করা। শিক্ষার্থীদের এ সমস্ত যোগ্যতা অর্জনের জন্য ব্যারাকপুর রাস্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথ কলেক কর্তৃপক্ষ আসাধারন কার্যক্রম ও উদ্যোগ গ্রহন এবং বাস্তবায়ন করছেন যা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবী রাখে। মির্জা গালিবের একটি মহামূল্যবান উক্তি হলো When a drop of rain falls in river it becomes a river when a did is done well it becomes a future অর্থাৎ এক বিন্দু বৃষ্টি নদীতে পড়লে তা নদীর অংশ হয়ে যায়। আর একটি কাজ ভালভাবে সম্পাদন করলে তা ভবিষ্যতের অংশ হয়ে যায়। ব্যারাকপুর রাস্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথ কলেজের শিক্ষা দানের পাশাপাশি উদ্যোক্তা উন্নয়ন, সাহিত্য সংস্কৃতি ও পরিবেশের উন্নয়ন, বিজ্ঞান উৎসব ইত্যাদি বিভিন্ন জীবনমুখী কার্যক্রম অব্যাহত থাকলে সারা ভারতবর্ষে একটি অনন্য কলেজ হবে এটা নিঃসন্দেহে বলা যায়। বর্তমানে নন অটোনমাস ক্যাটাগরিতে এই কলেজ পশ্চিমবঙ্গে প্রথম স্থানে রয়েছে। এবং সারা ভারতবর্ষে সেরা ১০টি কলেজের মধ্যে রয়েছে। ব্যারাকপুর রাস্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথ কলেজের ধারাবাহিক অগ্রগতি ও সফলতা কামনা করছি।
বাংলাদেশের খ্যাতিমান সংগঠক শিহাব রিফাত আলমের প্রতিষ্ঠিত সংগঠন জাগ্রত সাহিত্য পরিষদের সাথে ব্যারাকপুর রাস্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথ কলেজের সাহিত্য চর্চায় সংযুক্তির চুক্তি সাক্ষর ব্যারাকপুর রাস্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথ কলেজ ও জাগ্রত সাহিত্য পরিষদের জন্য মাইলফলক হয়ে থাকবে বলে আমি বিশ্বাস করি। জাগ্রত সাহিত্য পরিষদের একজন উপদেষ্ঠা হিসেবে আমি আনন্দিত ও গর্ব বোধ করছি। এ চুক্তির মাধ্যমে জ্ঞানের বিনিময় হবে সংস্কৃতির বিনিময় হবে। ভারত বাংলাদেশের রয়েছে শত শত বছরের অভিন্ন ইতিহাস ঐতিহ্য। এই চুক্তির মাধ্যমে দুই দেশের সংস্কৃতির বিনিময়ের মাধ্যমে দেশ দুটির কবি, সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ দের সম্পর্ক আরও জোরদার হবে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। ভারত ও বাংলাদেশ এক অনন্য বন্ধন ও বিশেষ সম্পর্কের অংশীদার। দেশ দুটি সীমান্ত দ্বারা বিভক্ত হলেও অভিন্ন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে ও মূল্যবোধের এবং উজ্জ্বল ভবিষৎ প্রত্যাশার বন্ধনে আবদ্ধ। বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠতর করা ইতিহাসের দাবি। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষকে ভারত অপরিমেয় সাহায্য সহযোগিতা করেছে। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন বাঁচো সকলের সঙ্গে, একা বাঁচার কোন অর্থ নেই, স্বার্থ মগ্ন যেজন বিমুখ বৃহৎ জগত হতে সে কখনো শেখেনি বাঁচিতে। শিহাব রিফাত আলম জাগ্রত ব্যবসায়ী জনতা ও জাগ্রত সাহিত্য পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান সহ বাংলাদেশের অনেক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা। একজন আলোকিত মানুষ। নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ুন আহমদ এর একটি মূল্যবান উক্তি যার মধ্যে অন্ধকার থাকে সে কখনো আলো নিয়ে খেলতে পারে না। শিহাব রিফাত আলমের মধ্যে সেই অন্ধকারটুকু নেই তা চোখ বন্ধ করে বলা যায়। আর নেই বলেই তিনি সংগঠন নিয়ে কাজ করাটা রীতিমত অভ্যাসে পরিনত করেছেন। ভোরের আলো যেমন অন্ধকার দূর করে পৃথিবীকে আলোকিত করে তেমনি মেধাবীরাও সমাজ ও দেশকে আলোকিত করেন। শিহাব রিফাত আলম কবি সাহিত্যিক ও লেখকদের সংগঠিত করে একটি ন্যায় ভিত্তিক জ্ঞানভিত্তিক ও মানবিক সমাজ বিনির্মানে প্রশংসনীয় ভূমিকা রাখছেন। শিহাব রিফাত আলম একজন বড়মাপের সংগঠক। তিনি কাজের মানুষ তাকে কোন অহমিকা স্বর্শ করতে পারেনি। আসলে সমাজে আমরা সবাই পথ চলি, পথ দেখায় কেউ কেউ। কিছু মানুষ জীবনটা কাটিয়ে দেয় প্রতিষ্ঠান, কাজ আর সংগঠন নিয়ে আর কিছু মানুষের জীবন চলে অন্যের সমালোচনা, কুৎসা রটনা, হিংসা নিন্দা আর পরচর্চা করে। একটা কথা আমাদের সবাইকে মনে রাখতে হবে সমালোচনা করা হিংসা নিন্দা করা খুবই সহজ কিন্তু মানুষের পাশে দাঁড়ানো মানবতার জন্য কাজ করা অনেক কঠিন। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন সত্য যে কঠিন, কঠিনেরে ভালবেসেছিলাম, সে কখনো করেনা বঞ্চনা। এ কঠিনকে যারা জয় করতে পারে তারা সামাজিকভাবে সর্বজনীনভাবে সম্মান অজন করে। ব্যারাকপুর রাস্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথ কলেজের সাথে জাগ্রত সাহিত্য পরিষদের সাহিত্য চর্চার সংযুক্তির কঠিন ও মহৎ উদ্যোগের ধারাবাহিক সফলতা কামনা করছি।
লেখক, প্রাবন্ধিক, শিক্ষাবিদ, আইনজীবী ও সাংবাদিক
বাংলাদেশ।