বিশেষ প্রতিনিধিঃ সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী একই কর্মস্থলে ৩ বছরের বেশি সময় থাকার বিধান নেই। অথচ মৌলভীবাজারের বিভিন্ন সরকারী দপ্তরে একই কর্মস্থলে কর্মকর্তারা ১০/১৫ বছর চাকুরি করছেন। আবার কেউ কেউ এর বেশি সময় ধরেও। যার ফলে গতি আসছেনা কাজে। অনেকটা বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন ওই সব কর্মকর্তারা। দীর্ঘ দিন একই কর্মস্থলে চাকুরির সুবাধে ডালপালা মেলেছেন তারা। তাদের অধিপত্যে অধিনস্থ কিংবা সেবা গ্রহীতারা মুখখোলে প্রতিবাদ করতে পারছেন না। নিজেদের ইচ্ছা মাফিক চালাচ্ছেন দাপ্তরিক কার্যক্রম। বাস্তবায়ন হচ্ছেনা সরকারের লক্ষ্যমাত্রা।
এই সুযোগে অনেকেই আঙ্গুল ফুলে কলাগাছে পরিণত হয়েছেন। গাড়ি-বাড়ি’রও করেছেন কেউ কেউ। আবার কেউ কেউ ছেলে-মেয়েদের বিদেশ পাঠিয়েছেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ আব্দুস সামাদ মিয়া ২০০৯ সালের ৬ ডিসেম্বর যোগদান করেন। টানা ১ যুগ যাবত একই কর্মস্থলে চাকুরি করছেন। তার দায়িত্বর উপজেলার আজমনি বহুপাক্ষিক উচ্চ বিদ্যালয়ে ২০১৪ সালে সহকারী শিক্ষক (বাংলা) হিসেবে স্ত্রী ফাতেমাতুজ জহুরাকে চাকুরিরও ব্যবস্থা করে দেন। স্কুল পর্যায়ে নিয়োগে বড় অংকের টাকা আদায়ের একাধিক অভিযোগ রয়েছে ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। তবে তিনি বলেন, কারো চাকুরি না হলে সে তো আমার বিরুদ্ধে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ তুলবে। এটাই স্বাভাবিক। শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের আমার প্রতি কোনো অভিযোগ না থাকায় দীর্ঘ দিন এখানে চাকুরি করছি এবং এখান থেকেই অবসরে যেতে চাই। জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন মাসুদ ১৯৯৩ সাল থেকে অদ্যবধি একই কর্মস্থলে চাকুরি করছেন। চাকুরিতে যোগদানের পর থেকে তিনি একই কর্মস্থলে। ওই কর্মকর্তা মৌলভীবাজার থেকেই অবসরে যাওয়ার অপেক্ষায়। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কাজী লুৎফুল বারীও দীর্ঘ দিন যাবত মৌলভীবাজারে চাকুরি করছেন। রাজনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ বর্ণালী দাশ টানা ৬ বছর একই কর্মস্থলে। এর আগেও তিনি ওই হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার, আরএমও ও ভারপ্রাপ্ত ইউএইচও হিসেবে একাধিক মেয়াদে কয়েক বছর দায়িত্ব পালন করেন। মেডিকেল অফিসার (হোমিওপাথি) ডাঃ সামছুন নাহার আফরোজ ইভা ৭ বছর, নার্সিং সুপারভাইজার নজরুল ইসলাম খান ৩৮ বছর যাবত চাকুরি করছেন। রাজনগর উপজেলা যুব উন্নয়ন অফিসার নজরুল ইসলাম খান টানা ১২ বছর যাবত একই কর্মস্থলে। তিনি বলেন, বার বার বদলি হওয়ার জন্য চেষ্টা করছি কিন্তু কর্তৃপক্ষ সুযোগ দেয়নি। এদিকে মৌলভীবাজার জেলা পরিষদের উপ-সহকারী প্রকৌশলী সাইদুর রহমান টানা ১৮ বছর যাবত প্রেশনে একই কর্মস্থলে। তবে এ বিষয়ে তিনি বলেন, ২০২১ সালের ৩ জুন আমার বদলির আদেশ হয়। কিন্তু কর্তৃপক্ষ আমাকে না ছাড়ায় যেতে পারছি না। এবিষয়ে জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা খোদেজা খাতুন বলেন, উনার স্থলে ভালো কোনো লোক না থাকায় ছাড়তে পারছি না। তবে খুব শীঘ্রই রিলিজ দেয়া হবে।
খোজ নিয়ে জানা যায়, এভাবে জেলা সদর ও উপজেলা গুলোতে অনেক কর্মকর্তা ১৫/২০ বছর যাবত কর্মরত রয়েছেন।
জেলার সচেতন নাগরিকরা বলছেন, এসডিজি বাস্তবায়ন এবং দাপ্তরিক কাজে গতি আনতে হলে সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী ৩ বছর পর পর বদলি জরুরি।