বিশেষ প্রতিনিধিঃ
মৌলভীবাজার সদর উপজেলার আটঘর উচ্চ বিদ্যালয়ের ১১ জন শিক্ষক মানবেতর জীবন যাপন করছেন। অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটছে তাদের। বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে নামমাত্র বেতনে শিক্ষকতা করে আসছেন তারা। সুশিক্ষিত ও দেশপ্রেমিক মানুষ গড়ার প্রত্যয় নিয়েই নিজের জীবন বিসর্জন দিয়ে কাজ করলেও আর্থিক অস্বচ্ছলতায় তারা চলাফেরা করতে পারছেন না।
জানা যায়, মৌলভীবাজার পৌর শহর থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে নাজিরাবাদ ইউনিয়নে ২০০১ সালে আটঘর উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে অনেক শিক্ষক ওই বিদ্যালয়ে চাকুরি করলেও এমপিওভুক্ত হওয়ার আগেই সরকারি/বেসরকারি ভালো বেতনের চাকুরি পেয়ে অনেক শিক্ষক কর্মস্থল পরিবর্তন করেন। পূণরায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিলেও শহর থেকে দূরে থাকায় ভালো শিক্ষকরা আবেদন করতে চাননি। কিন্তু ওই ১১ জন শিক্ষক মানুষ গড়ার কাছে অদ্যবধি নিয়োজিত। তাদের প্রচেষ্টায় ২০১৯ সালে বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত হয়। তখন প্রধান শিক্ষক ও অফিস সহকারীকে এমপিওভুক্তের আওতায় আনা হয়। কিন্তু বাকী শিক্ষকরা এমপিওভুক্তের বাহিরে থেকে যান। বিদ্যালয় ও শিক্ষার্থীদের কল্যাণের বিষয়টি মাথায় রেখে নামমাত্র বেতনে তারা পাঠদান চালিয়ে যাচ্ছেন। চলতি বছরে বিদ্যালয়ে ৬৫০ জন শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছে। এদিকে দীর্ঘ দিন করোনা মহামারিতে বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা নিয়মিত বেতন পরিশোধ করতে পারেনি। তাই শিক্ষকদের বেতন দিতে কিছুটা হিমশিম খেতে হচ্ছে প্রতিষ্ঠানকে।
সম্প্রতি এমপিওভুক্তির দাবিতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে খোলা চিঠি, শিক্ষা মন্ত্রীর কাছে আবেদন সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করেছেন শিক্ষকরা। আবেদনে তারা লিখেছেন, সরকারি চাকুরিতে আবেদন করার মতো তাদের কারোই বয়স নেই। মানবিক দৃষ্টিকোণ বিবেচনায় তাদের চাকুরি স্থায়ী না হলে পরিবার ও সন্তানাধি নিয়ে জীবন যাপন করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়।
শিক্ষকরা সমাজের সম্মানিত ব্যক্তি হওয়ায় লোক লজ্বায় কারো কাছে হাত পাতেননি। যার ফলে এ মহামারির সময় চরম অভাব অনুটনে দিন অতিবাহিত করতে হয়েছে তাদের। সরকারি কিংবা বেসরকারিভাবে তাদের বড় ধরণের কোনো সহযোগীতা করা হয়নি।
এমপিওভুক্ত বঞ্চিত শিক্ষকরা হলেন, আমিন উদ্দিন, মানিক লাল দাস, স্বপন শীল, মোঃ কামাল হোসেন চৌধুরী, শিল্পি রানী ধর, সাবিনা বেগম, রোমেনা বেগম, সায়রা আক্তার, নাহরিন জান্নাত চৌধুরী, ফারজানা খান তানজিয়া ও রেজিয়া বেগম।
সিনিয়র শিক্ষক মানিক লাল দাশ বলেন, যৌবন ও জীবনের সকল শক্তি ও স্বামর্থ দিয়ে বিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য চেষ্টা করেছি। ইতিমধ্যে বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত হয়েছে। এতে আমরা আনন্দিত। কিন্তু আমাদের এমপিওভুক্ত করা হয়নি। যার কারণে অনেকটা মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে আমাদের।
প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ শাহিন মিয়া বলেন, ১১ জন শিক্ষককের দীর্ঘ দিনের পরিশ্রমে বিদ্যালয়টি আজ এপর্যন্ত এসেছে। মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত করা জরুরি।