সরওয়ার আহমদ
দৃশ্যপট ঢেঁকে যায় সময়ের আবরণে
তার বিপরীতে-
স্মৃতির গ্রন্থিশালায় ধূলিম্লান পটভূমি যতো
অবারিত সৌষ্ঠবে দৃশ্যমান হতে চায়
সবাক চিত্রের মতো।
ভাসে ছায়াছবি মানস পটে
ছুটে আছে স্মৃতিময় সেই অবরুদ্ধ একাত্তর
আপন ডানা মেলে।
পিঞ্জিরাবদ্ধ ডাহুকের নিয়তি নিয়ে দেখি-
মেঘলা আকাশে দলবদ্ধ শকুনের উড়াউড়ি
বালুচরে পড়ে থাকা নর কংকাল ঘিরে
কাকের কোলাহল; শির বিচ্ছিন্ন ধর্ষিতার
মাথা চেটে চুল নিয়ে বিজাতি ঈগল
আয়েশী নীড় বাঁধে শিমুলের ডালে।
নিস্তরঙ্গঁ জনপদে দেখি হিজড়ার দাপট
সবুজ জমিনে চাঁদতারার আল্পনা আঁকা
কামিজে গা ঢেকে তারা দাপায় চরাচর এবং
রাতে হয় হায়েনার অনুগত অঙ্কশায়ী।
খাচায় বন্দী ডাহুক আমি-
অপলক নেত্রে হেরি সাদৃশ্যহীন চিত্রকলা,
কান পেতে শুনি বিকট শব্দের স্ফুলিংগ নর্তন।
একসময় রামায়নের শক্তিশেল আর
সুলেমানী ইন্দ্ররথের খেলা জমে উঠে,
রণক্ষেত্র আর চরাচর কেপে উঠে
জয়পরাজয়ের শিঙ্গাঁ বেজে উঠে অবলীলায়।
অত:পর দ্বৈরথের চাকায় পিষ্ট হয়ে
হায়েনাদের ডিভিশন ব্যুহ ত্রাহি ত্রাহি রবে
উদ্বাহু অবনত এবং
তারই সাথে দলবদ্ধ হিজড়াও নিরুদ্দেশ।
আমার খাঁচার জানালা খুলে যায়
ইপ্সিত এক বায়ু তরঙ্গে,
মুক্ত বিহঙ্গ আমি কেবল পালকের জুড়ে
যেনো উঢ়ে বেড়াই মুক্তির আস্বাদে। দেখি
রুদ্ধ আবেগের বিষ্ফোরণে জনপদ কম্পমান,
হাসি আর কান্নার মিশালে জনতার জয়নাদ এবং,
হাজার বছরের স্বপ্নজাল একাকার হয়ে
ভোরের কুয়াশা ঠেলি নব সূর্য্যরে পানে
ধাবিত হয় অবারিত উচ্ছাসে।
মাহেন্দ্র এই ক্ষণে আমিও পালক চালাই-
চলতে চলতে দেখি- জনতার ভিড়ে
বসন পাল্টানো কতিপয় হিজড়া
মৃদঙ্গঁ তালে নাঁচে সমস্বরে নির্ভয়ে।
রুদ্ধ বাক আমি-
তমালের ডালে বসি পাঁচ দশকের পরিক্রমায়
চোখ ভরে দেখিনু যোগ বিয়োগের হরেক
সমাচার। চোখের দূরবীনে ভেসে উঠে
হিজড়ার অবয়ব, হিজড়ার নর্তন
বংশবৃদ্ধির পালাক্রমে।