বিশেষ প্রতিনিধিঃ
মৌলভীবাজার জেলা পরিষদের উপ-নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামীলীগের দলীয় প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মিছবাহুর রহমান। বিজয়ের মালা পড়তে ঘাম ঝরাতে হবে তাকে। রাতদিন জেলার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে দৌঁড়েও সুবিধা করতে পারছেন না । জেলার প্রত্যান্ত এলাকায় খোঁজ নিয়ে এমন খবর পাওয়া যাচ্ছে। এদিকে বিএনপি বা অন্য কোনো দলের প্রার্থী না থাকায় একই ঘরানার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি এম এ রহিম (সিআইপি)। আওয়ামী এন্টি ভোটে তিনি অনেকটা সুবিধাজনক জায়গায় রয়েছেন বলে পরিলক্ষিত হচ্ছে।
আগামী ২০ অক্টোবর মৌলভীবাজার জেলা পরিষদ উপ-নির্বাচন অনুষ্টিত হবে। পুরো জেলায় ১৫টি কেন্দ্রে ৯’শ ৪৪ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। ওই নির্বাচনে আওয়ামীলীগের দলীয় প্রার্থী হিসেবে চশমা প্রতীক নিয়ে রয়েছেন মিছবাহুর রহমান। তার প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী হিসেবে মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে রয়েছেন এম এ রহিম (সিআইপি)।
জানা যায়, গত জেলা পরিষদ নির্বাচনে শাসকদল, বিরোধীদল, স্বতন্ত্র এবং বিদ্রোহী প্রার্থীরা নির্বাচনী মাঠে খেলেছেন। এবার তার ব্যাতিক্রম। আ’লীগের প্রার্থী নেতাকর্মীদের সমন্বয়ে কমর বেঁধে মাঠে নেমেছেন। সকাল থেকে দুপুর, জেলার এক প্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে দৌঁড়াচ্ছেন ভোটারদের ধারে ধারে। রাত কিংবা দিন মিলে বিশ্রাম নেই তার। মাঠ পর্যায়ে ৬৭ ইউনিয়ন, ৫ পৌরসভা ও ৭ উপজেলার সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীরাও কাজ করছেন। অন্যদিক একই ঘরানার অপর প্রার্থী যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি এম এ রহিম (সিআইপি) মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে অস্তিত্বের স্বার্থে চ্যানেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন। জেলা পরিষদের গত নির্বাচনে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন। গ্রুপিং এর কারণে কোনঠাসা এ প্রার্থীর পেছনে রয়েছেন জেলা ও থানা সম্মেলনকালীন অবমূল্যায়িত নেতাকর্মীরা। তলে তলে তারা এম এ রহিমকে বিজয়ের সংকল্পে একাট্টা। আবার অনেকেই আওয়ামীলীগের দলীয় প্রার্থীর প্রচারণায় সময় দিলেও গোপনে ভোট চাচ্ছেন মোটরসাইকেলে। এমন আবাস পাওয়া যাচ্ছে। এমতাবস্থায় আওয়ামী ঘরানার ভোট ব্যাংক বিভক্ত ধারায় প্রবাহিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াত ঘরানার ভোটারাও এম এ রহিমের প্রতি সহমর্মিতা দেখাচ্ছেন। এ ঘরানার অনেকেই এম এ রহিমকে মন্দের ভালো হিসেবে দেখছেন। এ থেকেও তিনি অনেকটা বিজয়ের আশা করছেন।
এনিয়ে সদর, কুলাউড়া ও রাজনগর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের একাধিক ভোটারদের সাথে কথা হলে তারা নিরপক্ষ ভোট নিয়ে সংশয়ের কথা ব্যক্ত করেন।
স্বতন্ত্র প্রার্থী এম এ রহিমের অভিযোগ, প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীর কর্মীরা জেলার বিভিন্ন স্থানে আমার পোষ্টার ও বিল বোর্ড ইতিমধ্যে ছিড়ে ফেলছেন। আমার নেতাকর্মীদের প্রচারণা চালাতে দেয়া হচ্ছেনা। প্রকাশ্যে টেবিলে ব্যালেট পেপার রেখে ভোট দেয়ার কথা বলছেন ভোটারদের। অন্যতায় ওই ভোটারকে কেন্দ্রে ঢোকতে দেয়া হবে না। তিনি আরও বলেন, এ বিষয়গুলো সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও জেলা নির্বাচন কমিশনকে লিখিতভাবে জানিয়েছি। জেলা আইন শৃঙ্খলা সভায়ও আলোচনা করেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো পরিবর্তন দেখতে পারছি না।
এবিষয়ে আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী মিছবাহুর রহমানের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সভাপতি আজমল হোসেন বলেন, টেবিলে রেখে ভোট দিতে হবে এধরনের কথা ভোটারদের আমরা কখনও বলিনি। তবে এলাকায় আমাদের সংগঠনের কেউ বলে থাকলে এটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। এটা দলীয় কোনো সিদ্ধান্ত নয়। আমরা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বিশ্বাস করি এবং সেই আলোকেই ভোট হবে। ভোটে শক্তি প্রয়োগ করার কোনো প্রশ্নই উঠেনা। ভোটের মাধ্যমেই জয়পরাজয় নিশ্চিত হবে।
এবিষয়ে জেলা নির্বাচন অফিসার মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন বলেন, উভয় প্রার্থীই পরষ্পরের বিরুদ্ধে লিখিত ও মৌখিক অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগ গুলো আমরা গুরুত্ব সহকারে দেখছি। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষেও বিষয়টি অবগত করা হয়েছে। তবে অভিযোগের সাথে কেউই কোনো প্রমাণাধি জমা দিতে পারেনি। তবে নিরপক্ষ ভোট গ্রহণের বিষয়ে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।