বিশেষ প্রতিনিধিঃ ছুটিতে আসা মৌলভীবাজারের প্রায় ৩০ হাজারেরও বেশি প্রবাসী করোনা দুর্যোগে আটকাপড়ে চরম দুশ্চিন্তায় সময় পার করছেন। নানা সমস্যায় পড়েছে প্রবাস ফেরত রেমিটেন্স যোদ্ধাদের পরিবার-পরিজন। বিশেষ মানবিক ও সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে সরকারি সহায়তা পেতে ইতিমধ্যে ৫ হাজারের বেশি প্রবাসী মৌলভীবাজার কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসে আবেদন করেছেন। কর্মস্থলে ফেরা নিয়েও চরম সংকটে রয়েছেন তারা। সুনির্দিষ্ট কোনো গাইড লাইন না পাওয়ায় হতাশায় ভোগছেন রেমিটেন্স যুদ্ধারা। আবার অনেকের ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ায় কর্মস্থলে ফিরতে পারছেন না। কর্তৃপক্ষের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করেও আটকেপড়া প্রবাসীরা ভিসার মেয়াদ বাড়াতে পারছেন না।
জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস জানায়, বিশেষ মানবিক ও সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির সরকারি সহায়তার আবেদন পরবর্তী নির্দেশনা না পাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত নেয়া হবে। প্রতিদিনই মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জের প্রবাসীরা আবেদন করছেন। এ পর্যন্ত ৫ হাজারেরও বেশি আবেদন জমা পড়েছে।
জানা যায়, চলতি বছরে বিদেশ থেকে যারা ছুটিতে এসেছেন, তারা আজ দ্বিমুখী অর্থনৈতিক সংকটে জর্জরিত। একদিকে তাদের কর্মস্থলে বাসা ভাড়াসহ আনুষাঙ্গিক খরচ কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। অন্যদিকে দেশে এসে তাদের জমাকৃত অর্থ শেষ হওয়ায় অস্বস্তিকর অবস্থায় কাটাচ্ছেন দিন। তাদের অনেকেই এখন দার দেনা করে চলছেন। কেউ আবার জমি কিংবা পরিবারের স্বর্ণ বিক্রি করে সাংসারিক খরচ চালাচ্ছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কেউই সরকারি কোনো অনুদান পাননি। সমাজে প্রবাসী হিসেবে পরিচিত থাকায় মুখ খোলে কাউকে কিছু বলতেও পারছেন না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে মধ্যপ্রাচ্যের ২/১ দেশ প্রবাসীদের নেয়া শুরু করলেও বেঁধে দিয়েছে কঠিন নিয়ম। অনেকে এই নীতিমালা পূরণ করতে না পারায় বিদেশের কর্মস্থলে যেতে পারছেন না। এটা মরার উপর খড়ার ঘায় পরিণত হয়েছে।
দুবাই থেকে ছুটিতে আসা কুলাউড়া উপজেলার ছকাপন গ্রামের কয়ছর মিয়া বলেন, আকামা ও ভিসার মেয়াদ থাকার পরেও কর্মস্থলে যেতে পারছি না। বিমান অফিস সহ নানা জায়গায় ঘুরেও কোনো সমাধান পাচ্ছি না। কাতার থেকে ছুটিতে আসা সদর উপজেলার বাসিন্দা মোঃ ইমরানের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, “৩ মার্চ দেশে আসি। ২৫ মার্চ আবার চলে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনার কারণে আমার যাওয়া হয়নি। দীর্ঘ দিন দেশে থাকার কারণে এখন আমি চরম অর্থ সংকটের মধ্যে দিন অতিবাহিত করছি। কর্মস্থলে ফেরা নিয়ে দুশ্চিন্তায দিন কাটছে।
কুলাউড়া উপজেলার ভুকশিমইল ইউনিয়নের দুবাই প্রবাসী কাজল আহমদ বলেন, জানুয়ারীর দিকে ছুটিতে এসে ইতিমধ্যে ভিসার মেয়াদ শেষ হয়েছে। ভিসার কাগজপত্র ও টিকেট ঠিক করে কিভাবে কর্মস্থলে যাব তা নিয়ে দুচিন্তায় আছি।
রাজনগর উপজেলার মশুরিয়া গ্রামের আব্দুল করিম জানান, ৩ মাসের ছুটি নিয়ে সৌদিআরব থেকে ফেব্রুয়ারীর মাঝামাঝি সময়ে দেশে আসি। মে মাসে ছুটি শেষ হয়। এখন পর্যন্ত কর্মস্থলে যেতে পারছি না। কবে যেতে পারব তাও ঠিক নেই। প্রবাস থেকে নিয়ে আসা জমাকৃত টাকা ২ মাস আগে শেষ হয়েছে। ঋণ করে সাংসারিক খরব চালাচ্ছি। সরকার থেকে কোনো ধরনের সহযোগীতা পাইনি। এভাবে জেলার একাধিক প্রবাসীর সাথে কথা বললে তারা সবাই একই কথা বলেন।
এবিষয়ে জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের সহকারী পরিচালক মোঃ মোশাররফ হোসেন বলেন, সরকারের নির্দেশনার আলোকে আমরা কোভিট-১৯ এ আটকে পড়া প্রবাসীদের কাছ থেকে সরকারি সহায়তার আবেদন নিচ্ছি। তবে কবে কিংবা কত টাকা তাদের দেয়া হবে সেটা আমরা বলতে পারছি না। আশা করা যায় সরকার প্রবাসীদের সহযোগীতা করবে। আটকেপড়া প্রবাসীদের কর্মস্থলে পাঠানোর জন্য সরকারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।