ষ্টাফ রিপোর্টারঃ পরম যতে মা পানকৌড়ি ছানার মুখে খাবার তুলে দিচ্ছে। অন্য ডালে ময়ূরের পেখম মেলেছে সাদাবক। ছোট বকছানাও আষ্টেপৃষ্ঠে খেলা করছে। ছয় বছর আগে এই বাড়ির কোনো এক গাছে বাসা বেঁধেছিল সাদাবক। এরপর ঝাঁকে ঝাঁকে পাখির আগমন ঘটে। হাজারো পাখির কলতানে পুরো বাড়ি পরিণত হয়েছে পাখিদের রাজ্যে। গাছের ডালে পাখির বাসায় উঁকি দিচ্ছে নানান জাতের পাখি ছানা।
নিরাপদ প্রজনন স্থান হিসাবে বেছে নিয়েছে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার কাউয়াদিঘি হাওর পাড়ের মল্লিকসরাই গ্রামের কয়েকটি বাড়িতে। নিশিবক, সাদাবক, লালবক, জলকুড়াসহ পানকৌড়ি ঘর বেঁধেছে প্রতিটি গাছের ডালে। দিনের প্রতিটি মুহূর্তে পাখির কলতানে মুখর হয়ে ওঠে চারপাশ। বাড়ির বাসিন্দরাও অতিথি পাখিদের সেবা দিচ্ছেন আত্মীয়তার পরশে।
গ্রামের বাসিন্ধা আনোয়ার মিয়া বলেন, পাশেই কাউয়াদিঘি হাওর। হাওর থেকে পাখি বাড়িতে আসে। প্রত্যেক দিনই আসে। আমরাও যতœ করে রাখি। কেই পাখিকে ধরিও না মারিও না। আরেক বাসিন্ধা সাব্বির বলেন, গত কয়েকবছর কম দেখা যেত। ইদানিং বিগত কয়েক মাস ধরি প্রচুর পাখির সমাগম। পাশেই হাওর থাকায় পাখিরা নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে আমাদের বাড়িতেই আশ্রয় নিয়েছে। যত দিন যাচ্ছে পাখির সংখ্যাও বাড়ছে।
পাখি বাড়ি দেখতে আসা এক দর্শনার্থী বলেন, লোকমুখে শুনছি, এবাড়িতে অনেক সুন্দর পাখি অনেক যতœ করে রাখে এরা। এত সুন্দর ভাবে গাছে গাছে পাখি বসেছে দেখে খুব ভাল লাগছে। আরশদ মিয়া বাড়ির বাসিন্ধা জানান, আমাদের বাড়িতে পাখির বসবাস। এই পাখির জন্য আমাদের অনেক ক্ষতি হয়। বাড়ির পুকুরটা ব্যবহার করতে পারতেছি না। গাছপালারও ক্ষতি হয়। কিন্তু তারপরও এই পাখিগুলোর কোন ক্ষতি হোক এরকম কোন কিছু কাউকেই করতে দেই নাই।
এ যেন অন্যরকম পাখির রাজ্য। যেখানে মানুষ ও পাখির বসবাসের সহাবস্থান। চারদিকে কিচিরমিচির কলরব। সবমিলিয়ে নজরকাড়া পরিবেশ। তাই দুর্যোগকালীন সময়ে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় প্রাণ-প্রকৃতির প্রতি এমন দায়িত্বশীল হওয়ার তাগিদ দিচ্ছেন প্রকৃতিপ্রেমীরা।
স্থানীয় ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আবু সুফিয়ান বলেন, মল্লিকসরাই গ্রামের সব বাড়িতেই পাখি খুব বেশী আসা যাওয়া করে। এখানে অনেক লোক দেখার জন্য আসেন। পাখিগুলো রক্ষার জন্য যাতে কোন ভাবে কেউ শিকার করতে না পারেন সেইদিকে এলাকার লোকজন নজর দিচ্ছেন। এভাবে পাখির অভয়াশ্রম করে দিলে পাখি তার বংশ বিস্তার করতে পারবে। আমাদের দেশী পাখিগুলো আরো বেশী প্রজনন করতে পারবে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন মৌলভীবাজারের সমন্বয়ক আ.স.ম সালেহ সুহেল বলেন, পাখি কলতানে এই বাড়িটি ভরে উঠেছে। এভাবে আরো কিছু বাড়ি আমাদের এই জেলায় আছে। পাখিরা এই জায়গাটিকে নিরাপদ মনে করছে এবং এখানে তারা প্রজনন করছে। যেখানেই প্রজনন হয় সেখানেই কিন্তু পাখির সংখ্যা বৃদ্ধি হয়। আশেপাশে হাওর থাকার কারণে পরিযায়ী পাখিরা এখানে আসছে। পরিযায়ী পাখি ও দেশীয় পাখির সম্মিলনে এখানে নতুন একটি সৌন্দর্য ফুটে উঠছে।
Post Views:
0