বিশেষ প্রতিনিধিঃ
চলমান করোনা সংকটে ক্ষমতাসীন দল আ’লীগের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের অনেক নেতাকর্মীকে মাঠে দেখা যাচ্ছে না। অনেক জনপ্রতিনিধি জেলার বাহিরে অবস্থান করছেন। আবার কেউ কেউ এলাকায় অবস্থান করলেও খেটে খাওয়া মানুষের খোঁজ নিচ্ছেন না। একই অবস্থা বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামাত সহ অধিকাংশ দলের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে।
এদিকে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা মাঠে থাকতে প্রধানমন্ত্রী কঠোর নির্দেশ দিলেও অধিকাংশ জনপ্রতিনিধি প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশ আমলে নিচ্ছেন না। মৌলভীবাজারের কয়েকজন সংসদ সদস্যও প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশ অমান্য করে ঢাকায় অবস্থান করছেন ।
জেলার সচেতন মহল বলছেন, এ সংকটপূর্ণ সময়ে নিজের অবস্থার আলোকে দরিদ্র জনগণের পাশে দাড়ানো জনপ্রতিনিধিদের নৈতিক দায়িত্ব ছিল। কিন্তু এটা হচ্ছে না। নির্বাচন আসলেই তাদের দেখা যায়। দরিদ্র মানুষকে নিয়ে তারা ভোটের রাজনীতি করে।
মৌলভীবাজার-১ আসনের বর্তমান এমপি বন, পরিবেশ ও জলবায়ূ পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী শাহাবউদ্দিন আহমেদ। গত নির্বাচনে এই আসনে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী ছিলেন বিএনপি নেতা নাসির উদ্দিন আহমেদ মিঠু। তাদের কাউকেই এলাকায় দেখা যাচ্ছেনা। তবে বড়লেখা আওয়ামীলীগের সূত্রে জানা গেছে। শাহাবউদ্দিন রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যস্থ থাকায় এলাকায় আসতে পারছেন না। তবে তার ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে বড়লেখা এবং জুড়ি উপজেলার ১ হাজার ৭’শ পরিবারকে ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে এবং জেলা সিভিল সার্জন অফিসে এবং নিজ নির্বাচনী এলাকায় ডাক্তারদের জন্য নিজ উদ্যোগে পিপিই দিয়েছেন।
বড়লেখা উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার উদ্দিন জানান, মন্ত্রী রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যস্থ থাকায় আসতে পারছেন না। তবে প্রতিমুহুর্তে প্রশাসন এবং দলীয় লোকদের মাধ্যমে খোজ নিচ্ছনে। উনার নিজের তহবিল থেকে ১ হাজার ৭’শ পরিবারকে চাল, আলু, তেল, ও মসলা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া প্রতিটি ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে আলাদা কমিটি গঠন করে ফান্ড গঠন করা হচ্ছে।
এদিকে সাধারণ মানুষের অভিযোগ মাঠেও নেই ত্রানেও নেই। গত নির্বাচনে বিএনপির পরাজিত প্রার্থী নাসির উদ্দিন মিঠু। তবে ছাত্রদলের পক্ষ থেকে জীবানুনাসক ছিটানো হয়েছে। কিন্তু গরীব জনগন জীবানুনাসক নয় খাদ্য সামগ্রী চায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিএনপি নেতা বলেন, ২০ লিটার পানিতে ২ চামচ ব্লিচং পাউডার মিশিয়ে ২০ জায়গায় স্প্রে করে দ্বায়িত্ব সারা যায়না। এখনই সময় জনগপণর কাছে যাওয়ার। যারা নির্বাচন হলেও এমপি হতে চান তাদের উচিৎ এখনই মাঠে নামার।
এ বিষয়ে নাসির আহমেদ মিঠু জানান, এখনো আমার ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে কোন ত্রান দেইনি। ছাত্রদল প্রতিটি এলাকা জীবানুমুক্ত করার জন্য কাজ করছে। সেই সাথে দলীয় কর্মীদের চাদায় ত্রাণ দেওয়া শুরু হয়েছে। আমাদেরও পরিকল্পনা আছে।
মৌলভীবাজার ২ আসনে গত সংসদ নির্বাচনে নিজ নিজ আদর্শে বিপরীতে গিয়ে জনগনের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচনে করেন ঐকফ্রন্টের প্রার্থী সুলতান মনসুর ও বিকল্পধারার প্রার্থী এম এম শাহিন। এ নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে জয়লাভ করেন সুলতান মনসুর। কিন্তু জনগণের বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষ প্রয়োজনের সময় কাউকেই পাশে পাচ্ছেন না। করোনা আতংকে ঘরবন্ধী নিম্ন আয়ের মানুষ যখন তাদের খুজছেন তখন কেউ আমেরিকা কেউ ঢাকা। গত নির্বাচনে মহাজোটের পরজাতি প্রার্থী এম এম শাহিন বর্তমানে আমেরিকা অবস্থান করছেন।
এম এম শাহিনের ঘনিষ্টজন জানান, ঠিকানা গ্রুপের চেয়ারম্যনা এম এম শাহিন দেশের করোনা পরিস্থিতির ১৫/২০ দিন আগে ব্যক্তিগত কাজে আমেরিকা গিয়ে বর্তমান পরিস্থিতে আটকা পড়েছেন। তবে ঘনিষ্ট জনদের মাধ্যমে তিনি এলাকার খবর নিচ্ছেন এবং সহযোগিতার জন্য একটি তালিকা প্রনয়ন করছেন।
অন্যদিকে নির্বাচিত এমপি সুলতান মনসুর ঢাকায় অবস্থান করছেন। এই সময় তার ঢাকায় অবস্থান নিয়ে ক্ষুব্দ সাধারণ জনগন এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে সুলতান মনসুর জানান, এলাকায় ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে। ব্যক্তিগত উদ্যোগ দেওয়া হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলনে। ব্যক্তিগত কোন আলাদা ফান্ড নেই।
গত নির্বাচনে মৌলভীবাজার-৩ আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হন জেলা আ’লীগের সভাপতি নেছার আহমদ। করোনা সংকটের শুরু থেকেই তাকে মাঠে পাওয়া যাচ্ছে। সরকারি বরাদ্দের পাশাপাশি উনার ব্যক্তিগত তরফ থেকে কিছু ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। উনার প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী ছিলেন জেলা বিএনপির সভাপতি এম নাসের রহমান। কিন্তু করোনা সংকটের শুরু থেকেই তাকে কিংবা জেলা বিএনপি’র নেতাকার্মীদের মাঠে দেখা যাচ্ছে না। খোজ নিয়ে জানা গেছে তিনি ঢাকায় অবস্থান করছেন।
এবিষয়ে জানতে সাবেক এমপি ও মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি এম নাসের রহমান এর ব্যক্তিগত নম্বরে কল দিলে তিনি কেটে দেন। পরে উনার পিএস শাহাদাৎ সিরাজ ফোন করে বলেন, “পৃথক পৃথক ভাবে আমাদের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন এলাকায় ত্রাণ বিতরণ করছেন। কিন্তু ঢাকা থেকে আসতে না পারায় স্যার আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু দিতে পারছেন না”।
মাঠেও নেই ত্রানেও নেই মৌলভীবাজারের অধিকাংশ জনপ্রতিনিধি
