সরওয়ার আহমদ
এই হৃদয়ের তারা ঝিলমিল শৈবাল বিলে
পুষ্পিতার সৌরভ নিয়ে তুমিও একদিন যুবতী ছিলে।
শত উৎসের ক্ষীণধারা বিলের বক্ষজুড়ে
একাকার হয়ে খেলিতো ঢেউ বর্ষামঙ্গঁল চরে।
সন্ধ্যা রাতের সপ্তমী চাঁদ মেঘের আবরণ ছিড়ে
উঁকি দিয়ে নিলোৎপল নভে আপন মূর্তি ধরে
যখনই ফেলেছে আখির প্রভা মানস সরোবরে
তখনই তোমার দেহবল্লরী নমিত অনুরাগ ভরে
ছিন্ন করি বসন বন্ধন ঝাঁপ দিয়েছিলো সলিলে।
এই হৃদয়ের তারা ঝিলমিল শৈবাল বিলে
স্বচ্ছ জলের মোহ মন্থনে তোমার অপরূপ কায়া
দুলেছিলো সেথা ভেলার সম, ইন্দ্রজাগানিয়া
সুর লহরিতে তোমার কামাতুর আহব্বান
অক্টোপাশের স্বরূপ ধরি অলক্ষ্যে দিলো টান।
চোখের জানালা খুলে দেখিনু তোমার র্দীঘল কেশ
আলু থালু হয়ে ঢেকে দিয়েছে মোহিনী পৃষ্টদেশ।
উদোম দু’টি নিতস্ব যেনো পর্বতের অহমিকায়
ডাকিতেছে তেনজিং হিলারীকে স্পর্শ লাভের আশায়।
জৈবিক ঢেউয়ে চিৎহলো যখনই দেহ ভেলা
ধরা দিলো সেথায় ঈশ্বরের কারুকাজ নির্জলা।
কপুল যেনো ভরা ভাঁদরের পাঁকা আ¤্রপালি
বুকের দু’টি মন্দির যেনো কমলাবৃত কাচুলী,
নাভিমূল যেনো স¤্রাজ্ঞীর রাজটীঁকার আদলে
ভক্তের অঞ্জলি মাগে মোহ মায়ার কূট কৌশলে।
নিরাভরণ উরুয়ুগল কামাগ্নির তাপ দাহে
ফাঁক হয়ে যায় অবলীলায়, তর নাহি সহে।
তারপর জগতের যত তৃষ্ণা, যত ক্ষুধা, যত উন্মাদনা
সব কিছু নিয়ে তোমার ভেলায় উঠি। নাবিকের ব্যঞ্জনা
নিয়ে ধরি হাল; ভেলা দুলে, আমি দুলি, দুলে চারিধার
উত্তাল তরঙ্গ মাঝে ভেসে উটে আদম হাওয়ায়
যুগলবন্দী আদিম কেলি কলা। মানস পট ছাড়ি
উড়ে যায় জাগাতিক যত উপাচার, সব নাড়ি ভূঁড়ি
ডুবে যায় শৈবাল বিলে। নাই দ্রোহ, নাই ক্ষোভ
নাই লাভ লোকমানের যাতনা, নাই প্রাপ্তি লোভ।
পরকে সংহার করি নিজ উর্দ্ধারোহণ
বিদ্বেষ হানা হানি আর বিত্ত বেশাত লুন্টন
সব ধান্ধা উরে যায় রজত ভেলার নান্দনিক দুলায়।
ভেলা ছাড়ি তীরে উঠি, আবার ভোলার মায়ায়
জলভেঙ্গেঁ চড়ি ভেলায়, এভাবেই সময় আগায়
শৈবাল বিলের অন্ত:শীলা ¯্রােতে। দৃষ্টির সীমানায়
চোখ ফেলেদেখিনু দূর নীল দিগন্তে
প্রাতের দিবাকর যেনো মদ্যাহ্নের সীমন্তে
শেষ চুম্বন রেখা টানি হেলে গোধূলির পানে।
শরত বেলার খন্ডিত শুভ্র মেঘের আবাহনে
যে শঙ্খ বিলের ছিলো মিতালী, সে উড়ন্ত চিল
দৃষ্টির সীমানা ছাড়ি সহসা উধাও। যে আবাবিল
সক্রিয় ডানার মাঝে খুঁজেছিলো জীবনের সন্ধান
সেও বুঝি নিরুদ্দেশ গন্তব্যে হলো ধাবমান।
সময়ের সিঁড়ি ভেঙ্গেঁ প্রেয়সীর যৌবন ডালি
গোধূলির আবরণে মনে হয় যেনো খালি।
ধূসর মেঘের আস্তরণে ম্লান কালো কুন্তল
ওষ্ঠ যুগলের লালিমায় বসে নিদাঘের ছোবল,
দেহের প্রতি ভাঁজে যৌবনের মদির গন্ধ
উবে যায় বাস্পীয় টানে, গতি পায় নিষ্কাম নিবন্ধ।
লগি হাতে ভেলার মাঝি আমি দৃষ্টি ফেলে দেখি
চরাচরে বহে লু হাওয়া, তারই মাঝে চখা আর চখি
নিবিড় বন্ধন ছাড়ি আর্তনাদের ভাষায়
অদৃশ্য ঈশ্বরকে ডাকে পরিত্রাণ লাভের আশায়।
টের পাই শক্ত হাত ক্রমশ হয় শিথিল
গোধূলির ম্লানিমায় ছন্দহীন যেনো শৈবাল বিল।