ষ্টাফ রিপোর্টারঃ
বিশ্বব্যাপী পরিবেশ রক্ষায় সোলার প্যানেল ব্যবহারে মানুষকে উৎসাহী করতে ২৭ টি দেশের ৩২ হাজার কিঃ মিঃ বাইক চালিয়ে বাংলাদেশে এসেছেন বেলজিয়ামের নাগরিক এৎবমড়ৎু ষবুিষষরব। পরিবেশ রক্ষায় সচেতনতার লক্ষ্যে বাঁশের তৈরি এবং সোলারের সাহায্যে বিশেষ ধরণের একটি বাইক নিয়ে বয়স ৪৮ বয়সী এই পরিবেশ প্রেমী চষে বেড়াচ্ছেন পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে। এই পরিবেশ প্রেমি ব্রাসেল ইউনিভার্সিটি থেকে টেলিভিশন সাংবাদিকতা বিষয়ে মাস্টার্স শেষ করে বেলজিয়ামের একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ের শিক্ষকতা করছেন। বর্তমানে ৩ দিন মৌলভীবাজারে অবস্থান করে চলে গেছেন ঢাকা। বাংলাদেশ ঘুরবেন ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। ৬ মার্চ বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যাবেন ভুটান তবে ভুটান যাওয়ার আগেই বাইক জাহাজে করে বেলজিয়ামে পাঠিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত রয়েছে তার।
ভ্রমনের ধারাবাহিকতায় ওই পরিবেশ প্রেমি ২৭ জানুয়ারী মৌলভীবাজার এসে ৩০ জানুয়ারী পর্যন্ত অবস্থান করেন। এসময় তিনি জেলার একাধিক দর্শনীয় স্থান পরিদর্শন করেন।
পরিবেশ প্রেমি এৎবমড়ৎু ষবুিষষরব জানান, বিশ্বব্যাপী পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। পরিবেশ নষ্টের কারণে জলবায়ুর প্রভাবে হুমকিতে পড়েছে এই পৃথিবী। এই পৃথিবীর মানুষসহ প্রতিটি প্রাণ বাঁচানোর জন্য পরিবেশ রক্ষার প্রয়োজন। পরিবেশের জন্য বড় একটি হুমকি বিদ্যুৎ। বিদ্যুৎ উৎপাদনের কারণে সরাসরি পরিবেশে আঘাত করে যা জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী। তবে সভ্যতার প্রয়োজনে বিদ্যুৎ দরকার। আর এর সমাধান হচ্ছে সোলার প্যানেল। সোলার প্যানেল বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় হলে বিদ্যুৎতের কারণে পরিবেশের যে দূষণ হয় তা কমে আসবে। বিশ্বব্যাপী সচেতনতার লক্ষ্যে তৃতীয় দাপে ২০১৮ সালের ৩ জুন বেলজিয়াম থেকে শুরু করে ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড, জার্মানি, হল্যান্ড, রাশিয়া, কাজিখাস্তান, চীন , লাওস , ভারত এবং সর্বশেষ বাংলাদেশসহ ২৭টি দেশ বাইকে করে ভ্রমণ করেছেন। বাঁশের তৈরি বাইক নিয়ে ২৭টি দেশ ঘুরতে ৩২ হাজার কিঃ মিঃ পথ পাড়ি দিতে হয়েছে।
চলতি মাসের ১৮ তারিখ তিনি সিলেটের ডাউকি বর্ডার দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন। মধ্যে ডান কাদের ব্যথা পেয়ে ৮ দিন বিশ্রামে ছিলেন।
তার বাহনটি মূলত বাইসাইকেল হলেও এর সাথে সোলার প্যানেলের সাহায্যে ব্যাটারির মাধ্যমে চালানো হয় যা অনেকটা মটর সাইকেলের ইঞ্চিনের কাজ করছে। তবে চার্য চলে গেলে বা ব্যটারির সংযোগ আলাদা করে বাই সাইকেলের মত চালানো যায়।
বিশেষ এই বাইক তৈরিতে তিনি ব্যবহার করেছেন বাঁশ এবং এই প্রযুক্তি তার নিজের। বেলজিয়ামে বাঁশ না থাকায় উগান্ডা থেকে ইম্পোর্ট করে বাঁশ আনিয়েছেন শুধু এই বাইকটি তৈরির জন্য। ৪.২০ মিটার লম্বা এই বাইকের পেছনের দিক অনেকটা টেলা গাড়ীর মত যার প্রস্ত ১ মিটার। মুলত পেছনের এই অংশে রয়েছে দুইটি সোলার প্যানেল যা থেকে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয় আর এর সাহায্যেই চলে বাইকটি।
এবারের রাইডটি তৃতীয় দাপের জানিয়ে তিনি বলেন, সোলার প্রতি সচেতনতা বাড়াতে তিনি এর আগে ২০০৬ থেকে ২০০৯ সাল এবং ২০১৩ থেকে ২০১৪ সালে দুইবার সাধারণ বাইসাইকেল নিয়ে ভ্রমণ করেছেন। এই দুইবারে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, চিলি বুলগেরিয়া,প্যারু , ইকুয়েডর, খাজাকিস্তান, চায়নাসহ বেশ কিছু দেশ ভ্রমণ করেছেন। আগের দুটি রাইড সাধারণ বাইসাইকেলে হলেও ২০১৮ সালের ৩ জুন থেকে সোলার চালিত বাশের তৈরি একটি বাইক নিয়ে বের হয়েছেন। দেশে ফিরে গিয়ে আবারও নতুন সিদ্ধান্ত নেয়ার চিন্তা রয়েছে ওই পরিবেশ প্রেমির।
দীর্ঘ এই পথে অনেক বন্ধু স্বজন পেয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, প্রতিটা দেশে নতুন নতুন পরিবেশ এবং নতুন নতুন মানুষ, সংস্কৃতি আমাকে আনন্দ দেয়। এই আনন্দ এই ভ্রমণের সব থেকে বড় পাওয়া। যেখানেই গেছি সাধারণ মানুষ আমাকে আপন করে নিয়েছে। অনেক সময় ঘিরে ধরেছে আমার বাশের বাইক দেখতে।
তবে দীর্ঘ এই ভ্রমণে দুর্ঘটনায় পরে ২ মাস বিশ্রামে ছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, লাওসে ৮মিটার উঁচু থেকে বাইক নিয়ে পড়ে যান এতে তার ডান কাঁদে মারাত্মক আঘাত পান যার কারণে ২ মাস বিশ্রামে ছিলেন ।
তিনি আহবান জানিয়ে বলেন, প্রতিটি মানুষ জেনো মানুষের অস্তিত্বের জন্য, প্রতিটি প্রাণের অস্তিত্বের জন্য পরিবেশ রক্ষায় এগিয়ে আসে।
এৎবমড়ৎু ষবুিষষরব এর সাথে যখন আলাপ হচ্ছিল তখন উপস্থিত ছিলেন মৌলভীবাজার সাইক্লিং কমিউনিটির মর্ডারেটর ইমন আহমদ ও সৈয়দ রাফিউল ইসলাম। তারা জানালেন, আমরা আমাদের কমিউনিটির পক্ষ থেকে তাকে স্বাগত জানিয়েছি। দুই দিন ধরে তার সাথে আছি। সব সময়ই যে কেউ আসলে আমরা স্বাগত জানাই প্রয়োজনীয় সাহায্য করি কিন্তু এৎবমড়ৎু ষবুিষষরব মানুষ হিসেবে খুবই ফ্রেন্ডলি এবং বন্ধুভাবাপন্ন। সে পরিবেশের প্রতি খুবই সচেতন।
বেলজিয়াম থেকে বাঁশের সাইকেলে ২৭ দেশ পেরিয়ে বাংলাদেশে
