হোসাইন আহমদঃ
মৌলভীবাজার পৌর শহরের সেন্টাল রোডের পিংকি সু ষ্টোরে ভয়াবহ অগ্নিকান্ড ট্রাজেডিতে নিস্তব্ধ পুরো শহর। কেউই এক মিনিটের জন্য এই ট্রাজেডি ভুলতে পারছেন না। ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে কোনো লোকই এই ট্রাজেডি মেনে নিতে পারছেন না। এই অগ্নিকান্ড স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে পুরো জেলাবাসীর কাছে। মঙ্গল ও বুধবার পুরো দিন জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নানা পেশার হাজার হাজার মানুষ এই ট্রাজেডি স্থান একনজর দেখতে আসেন। এদিকে নব বিবাহিত পিংকি বাবা সুভাষ ও ছোট বোন প্রিয়াসহ নিহত ৫ স্বজনের কথা স্মৃতি স্পটে আসা মাত্রই হাও মাও করে কেঁদে উঠছেন। কেউই তাকে শান্তনা দিতে পারছেন না। আগামীকাল শুক্রবার জামাই সুমনকে নিয়ে ফিরা যাত্রায় বাবার বাড়িতে আসার কথা ছিল পিংকির। কিন্তু মঙ্গলবারের ৫মিনিটের আগুনের লেলিহান শিখায় পুরো বাসা ও দোকান পুড়ো ছাই হয়ে গেছে। বাবাও নেই, আদরের ছোট বোনও নেই এবং বাসাও পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। শুক্রবারে কোথায় কার সাথে দেখা করতে আসবেন পিংকি। এ কথা গুলো মনে পড়ার সাথে সাথেই পিংকি বারবার মুর্ছা যাচ্ছেন। কেউই পিংকিকে শান্ত করতে পারছেন না।
মঙ্গলবারের ভয়াবহ অগ্নি ট্রাজেডিতে মারা যান পিংকি স্টোরের সত্ত্বাধিকারী সুভাষ রায় (৬৫), সুভাষ রায়ের ছোট ভাই মনা রায়ের স্ত্রী দিপ্তী রায় (৪৫), সুভাষ রায়ের মেয়ে প্রিয়া রায় (১৫), সুভাষ রায়ের শালক সজল রায়ের স্ত্রী দিবা রায় (৪০) ও শালক সজল রায়ের ৪ বছরের শিশু দিপীকা রায়। সুভাষ রায় ছিলেন পিংকির বাবা। পিংকির নামেই সুভাষ ওই দোকানের নাম করণ করেন। ২২ জানুয়ারী সুভাষ রায়ের মেয়ে পিংকির বিয়ে হয় এবং ২৭ জানুয়ারী বৌভাত সম্পন্ন হয়। বৌভাত উপলক্ষে স্বজনরা পিংকিদের বাসায় আসেন। বৌভাত শেষে ওই রাতে তাদের বাড়িতে থেকে যাওয়ায় ২জন স্বজনও ওই ঘটনায় মারা যান।
জানা যায়, মৌলভীবাজার সদর উপজেলার মোস্তফাপুর ইউনিয়নের পাগুলিয়া গ্রামে নিহত সুভাষ রায়ের বাবা ডা. প্রভাত রায় থাকতেন। ১৯৭১ সালে পাক হানাদার বাহিনীর হাতে ডা. প্রভাত রায় নিহত হন। এই ঘটনার পরেই সুভাষ রায়ের পরিবার ভারতে চলে যায়। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে ফের তারা বাংলাদেশে আসেন এবং পুড়ে যাওয়া বাড়িটিতে বসবাস শুরু করেন এবং পুড়ে যাওয়ার পূর্ব মূহুর্ত পর্যন্ত তারা এই বাড়িতেই ছিলেন। দুতলা বিশিষ্ট এই বাসার নিচের সামনের অংশে সুভাষ রায়ের বড় মেয়ে পিংকির নামে “পিংকি সু ষ্টোর” নামে একটি দোকান ছিল। নিচ তলার পিচনের কিছু অংশে এবং দুতলা সহ পরিবার নিয়ে থাকতে সুভাষ। উপরে উঠার সিড়িটিও ছিল কাঠের।
নিহত সুভাষ রায়ের চাচাতো ভাই সঞ্জিত রায় বলেন, ঘটনার আগের দিন অনুষ্ঠান থাকায় সবাই রাতে দেরিতে ঘুমায়। যার কারণে সকালে ঘুম থেকে উঠতেও তাদের দেরি হয়। সকাল ১০টা ২০ মিনিটের সময় নিহত সুভাষ রায়ের স্ত্রী নিচ তলায় চুলাতে চা বানাচ্চিলেন। এসময় তিনি সামনের অংশে আগুনের ধোয়া দেখতে পান। সাথে সাথেই তিনি নিচে ঘুমিয়ে থাকা স্বজনদের ডেকে তুলে পিছনের দিকে বের করে দেন। তার চিৎকারে দুতলায় ঘুমিয়ে থাকা সুভাষ রায়ের ছোট ভাই মনা, ছোট মেয়ে পাপিয়া ও শালকের ছেলে উঠে আসলেও নিহতরা আসতে পারেননি। কারণ দুতালায় উঠার সিড়ি ছিল কাঠের। আগুন লাগা মাত্রই কাঠের সিড়িটি পুড়ে যায়। যার কারনে উপরের তলার নিহতরা চেষ্টা করলেও নামতে পারেননি। সেখানেই তাদের পুড়ে মরতে হয়।
এদিকে এ ঘটনায় পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি বুধবার থেকে কাজ শুরু করেছে। আগামী ৭ কর্ম দিবসের মধ্যে তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা রয়েছে। এই ঘটনায় মৌলভীবাজার মডেল থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে পৌর শহরের সৈয়ারপুরস্থ শ্মশান ঘাটে তাদের মৃত দেহ দাহ করা হয়।
Post Views:
0