স্টাফ রিপোর্টারঃ মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার গোয়ালবাড়ী ইউনিয়নে ছোট-বড় টিলার ঢালে হাজার হাজার কমলাগাছ। সারি সারি গাছের পাতার ফাঁকে উুঁকি দেয় সবুজ আর সোনালি কমলা। হেমন্তের বাতাসে ছড়ায় কমলার ঘ্রাণ।
গোয়ালবাড়ী ইউনিয়নের রূপাছড়া, লালছড়া, হায়াছড়া, শুকনাছড়া, কচুরগুলসহ পাহাড়ি এলাকায় এসব কমলা চাষ হয়। দেশজুড়ে এসব কমলার বেশ সুনাম আছে। এখন কমলার মৌসুম। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত বাগানে ব্যস্ত সময় পার করছেন কমলাচাষি ও শ্রমিকরা।
চাষিরা জানান, জুড়ীতে দুই ধরনের কমলার চাষ বেশি হয়। এর মধ্যে নাগপুরী ও খাসি। তবে খাসি কমলার চাষ এখানে বেশি। ‘নাগপুরী’ কমলাগুলো আকারে বড় আর ‘খাসি’ গুলো তুলনামূলক ছোট।
সরেজমিন বেশ কয়েকটি কমলা বাগান গেলে দেখা যায়, চাষিরা কমলা বিক্রির জন্য পাকা ফল সংগ্রহ করছেন। পরে বাড়িতে নিয়ে এসে উঠানে বিভিন্ন আকার অনুসারে বাছাইয়ের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। এসব কমলা- ঢাকা, ভৈরব, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাঠানোর জন্য পাকা, আধা পাকা, ছোট ও বড় গুলো আলাদা আলাদা করে বাশের তৈরী খাচায় গুছিয়ে রাখছেন।
মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, জেলায় ১৭৮ হেক্টর জমিতে ১৪৬টি কমলা বাগানে রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাষ হয় জুড়ী উপজেলায় ৯২ হেক্টর জমিতে, বড়লেখায় ৬০ হেক্টর, কুলাউড়ায় ২০ হেক্টর জমিতে এই কমলা চাষ। এর মধ্যে কমলা চাষি রয়েছেন ১৪৬ জন। গত বছর প্রতি হেক্টরে কমলার উৎপাদন ছিল চার থেকে সাড়ে চার টন। এ বছর প্রতি হেক্টরে উৎপাদন ৬ মেট্টিক টন।
কথা হয় উপজেলার লালছড়া এলাকার কমলা বাগানের মালিক জয়নুল ইসলামের সাথে। তার বাগানে কমলা গাছ রয়েছে ১২০০ টি। তিনি জানান, এবছর কমলার ফলন ভালো হয়েছে। তবে পোকামাকড়ের আক্রমণে কিছু কমলা নষ্ট হচ্ছে। তিনি বলেন, এ পর্যন্ত প্রায় ২ লাখ টাকার কমলা বিক্রি করেছি। আশা করছি ৪ থেকে ৫ লাখ টাকার কমলা বিক্রি করবো।
ভারতীয় কমলা বন্ধের দাবি জানিয়ে তিনি আরোও বলন, ভারতীয় কমলার জন্য আমরা সঠিক দাম পাইনা। পুরোপুরিভাবে যদি কমলা আসা বন্ধ করা যেতো তাহলে আমরা লাভবান হতাম। ভারতীয় কমলা মিষ্টি হওয়ায় চলে ভালো। কিন্তু সিলেটি কমলা একটু ঠক হওয়ায় অনেকে নিতে চায় না। আমাদের এইগুলো হলো অরিজিনাল, একদম টাটকা মাল।
স্থানীয় আরেক কমলা চাষি জাছির আহমদ বলেন, দেশিও কমলার ঐতিহ্য ধরে রাখতে ভারতীয় কমলা আসা বন্ধ করতে কর্তৃপক্ষকে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। তাহলে আমাদের চাষকৃত কমলা দিয়েই দেশের চাহিদা মেটানো সম্ভব।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মৌলভীবাজার কার্যালয়ের উপ-পরিচালক কাজী লুৎফুল বারী জানান, কৃষক ভাইয়েরা আমাদের পরামর্শ অনুযায়ী যতœ করেছেন। পোকামাকড় রোগবালাই নিয়ন্ত্রণ করেছেন। ফলে এবছর কমলার ফলন ভালো হয়েছে।
ভারতীয় কমলা নিয়ে তিনি বলন, মৌলভীবাজারের কমলা যখন সংগ্রহ শুরু হয় এর আগেই এসব কমলা বাজারে চলে আসে। ওদের কমলাটা আরেকটু আগাম। আমাদেরকে হয়তো ভবিষ্যতে আরো আর্লি বেরাইটি বের করতে হব। নতুন করে লেবু জাতীয় ফসলের সম্প্রসারণ প্রকল্পে (২০১৯-২০২৪ ) বছর মেয়াদি একটি প্রকল্প চালু হবে। সেখানে বারি কমলা-১, ২ ও ৩ দিয়ে নতুন বাগান করা শুরু হবে।
ভারতীয় কমলায় হতাশ চাষীরা!
