স্টাফ রিপোর্টারঃ ২৭ মে ২০১২ সালের পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের গেজেট বলছে- সংরক্ষিত, রক্ষিত, অর্পিত কিংবা অন্য যেকোন ধরনের সরকারি বন থেকে ১০ কিলোমিটারের মধ্যে করাতকল স্থাপন ও পরিচালনা করা যাবে না। এমনকি সরকারি অফিস-আদালত, শিক্ষপ্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং জনস্বাস্থ্য কিংবা পরিবেশের ক্ষতি করবে এমন স্থানের ২০০ মিটার দূরে করাতকল স্থাপন করতে হবে। উল্লিখিত কোনো স্থানে করাতকল স্থাপন করা হলে ৯০ দিনের মধ্যে মালিক তা বন্ধ করে দেবে। অন্যতায় দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওই করাতকল বন্ধ করার জন্য আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
কিন্তু বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) মৌলভীবাজারে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে ফার্ণিচার ব্যবসার আড়ালে স’মিল চলছে। যার কারণে দূষিত হচ্ছে শিল্প নগরীর পরিবেশ লঙ্গীত হচ্ছে আইন। শিল্প নগরীর ব্যবসায়ীরা একাধিকবার ওই স’মিলটি স্থানান্তরের জন্য আবেদন করার পরেও এখন পর্যন্ত বহাল তবিয়তে। এদিকে পরিবেশ অধিদপ্তরের নীতিমালার মধ্যে রয়েছে পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন স্থানে স’মিল স্থাপন করা যাবে না। কিন্তু ওই স’মিলের মালিক নিষেধাজ্ঞা তোয়াক্কা না করে বীর ধরপে স’মিল পরিচালনা করছেন।
জানা যায়, ১৯৯৬ সালে মর্ডাণ ফার্ণিচার এন্ড স’মিলের নামে ১৫’শতক জায়গা বরাদ্দ নেন শেখ মোঃ আব্দুল আলী। ফার্ণিচার তৈরি ও বিক্রি করার জন্য জেলা বিসিক ভুমি বরাদ্দ কমিটি ওই জায়গা টুকু উনাকে বরাদ্দ দেন। কিন্তু জায়গাটি বরাদ্দ পাওয়ার পর থেকেই ফার্ণিচার ব্যবসার আড়ালে তিনি স’মিল পরিচালনা করে যাচ্ছেন। একটি সূত্র জানায়, ভুমি বরাদ্দের ২৫ বছরের মধ্যে সক্রিয়ভাবে তিনি কখনও ফার্ণিচার ব্যবসা করেননি।
এদিকে বর্ষিজোড়া ইকো পার্কের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে ওই স’মিলের অবস্থান। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের গেজেটের আলোকে মৌলভীবাজার বন বিভাগ ওই স’মিলটির উপর মামলা করে। কিন্তু স’মিলের মালিক ওই মামলার উপর হাই কোর্টে আপিল করেন। বর্তমানেও মামলাটি হাই কোর্টে বিচারাধীন।
স্থানীয় গাছ ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ওই স’মিলে বৈধ গাছের চেয়ে চুরাই পথে আসা গাছ বেশি কাটা হয়। স’মিলের পাশে একাধিক চা বাগান ও সামাজিক বনায়ন কাছে থাকায় রাতের আদারে স’মিলে গাছ নিয়ে আসেন বিক্রেতারা। বিষয়টি বন বিভাগ জেনেও অদৃশ্য কারণে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
সরেজমিন মৌলভীবাজার বিসিক শিল্প নগরীতে গেলে দেখা যায়, শেখ মোঃ আব্দুল আলী ফার্ণিচার ব্যবসার আড়ালে রমরমা স’মিল পরিচালনা করছেন। ফার্ণিচারের কারখানা নেই বললেই চলে। ফার্ণিচার কারখানাটি কোথায় দেখতে চাইলে তিনি স’মিলের পশ্চিম পাশের দুটি রুম একজন শ্রমিক দিয়ে খুলান। এসময় দেখা যায়, রুম দুটিতে কিছু পুরাতন চেয়ার ও টেবিল স্তুপ করে রাখা। কিন্তু এখানে কোনো শ্রমিক নতুন ফার্ণিচার তৈরি করছেন না।
এবিষয়ে জানতে শেখ মোঃ আব্দুল আলী’র সাথে কথা হলে তিনি বলেন, স’মিলটি নিয়ে বন বিভাগের সাথে হাই কোর্টে মামলা চলছে। ফার্ণিচারের আড়ালে স’মিল ব্যবসা করছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মাজে মধ্যে কিছু ফার্ণিচার বানানো হয়।
শিল্প নগরী কর্মকর্তা শাহ নেয়াজ বলেন, ইকো-পার্ক কিংবা বনের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে স’মিল স্থাপনের কোনো বিধান নেই। তার পরেও শেখ মোঃ আব্দুল আলী বিসিকে স’মিল স্থাপন করে ফার্ণিচার ব্যবসার আড়ালে স’মিল চালিয়ে যাচ্ছেন।
এবিষয়ে নাসিব সভাপতি ও বিসিক ভুমি বরাদ্দ কমিটির সদস্য বকশি ইকবাল আহমদ বলেন, জেলা কমিটির মিটিংয়ের সিদ্ধান্তের আলোকে স’মিলটি স্থানান্তরের জন্য একাধিকবার নোটিশ দিলেও তিনি স্থানান্তর করেননি। আমরা এখন আর পারছি না।
পরিবেশ অধিদপ্তর মৌলভীবাজার কার্যালয়ের পরিদর্শক মোঃ ফখর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ওই স’মিলকে নোটিশ করা হয়েছে। কিন্তু উচ্চ আদালতে রিট থাকার কারণে কিছু করতে পারছি না। তবে মামলা শেষ হলে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে।