সরওয়ার আহমদ:
অতীত গাঁথা কেউ ভুলে কেউ ভুলে না। ইতিহাসের পাতায় যে কাহিনী লিখা আছে, সময়ের শেওলা কিংবা ধূলিকণায় সে কাহিনী ম্লান হয়ে গেলেও চর্বিত চর্বনের ঘষামাজায় এবং কালের নির্ঘন্টে তাহা অম্লান হয়ে উঠে। ৭১ সনে মৌলভীবাজারে পকিস্থানী হানাদার দল যে নরমেধজ্ঞে মেতেউঠেছিল তার জীবন্ত সাক্ষী বহমান মনুনদী এবং নদীর উপর নির্মিত ব্রীজ। হায়নাদের হাতে নিহত কত লাশ নদী দিয়ে ভেসে গেছে তার হিসাব নেই। শুধু ইতিহাসের পাতায় লেখা আছে মনুব্রীজের প্রদর্শনী হত্যাকান্ড। ২৭ মার্চ তারিখে হানাদার বাহিনীকে চ্যালেঞ্জ প্রদানকারী হাজার হাজার জনতা লাটি বল্লম হাতে শহর ঘেরাওয়ের এক পর্যায়ের মনু ব্রীজ অতিক্রম করে শহরে প্রবেশ করত: কার্ফু ভঙ্গ করেছিল। এসময় হানাদার বাহিনীর এলোপাতারি গুলিতে ব্রীজের এপার সেপারে শহীদ হয়েছিল ১২/১৩জন। দখলীভূত মৌলভীবাজার মহকুমার বিভিন্ন এলাকা থেকে মুক্তিকামী জনতাকে ধরে এনে ব্রীজের উপর গুলি করে ফেলে দিত মনু নদীতে। সে কাহিনী এবং স্মৃতি এখন অনেকটাই ঝাঁপসা। যুদ্ধ বিধ্বস্ত মনুব্রীজ ভেঙ্গে নতুন ব্রীজ স্থাপনের পর পুরাতন ব্রীজ মুখে মুক্তিযুদ্ধের সেই স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য সাবেক পৌর চেয়ারম্যান মরহুম মাহমুদুর রহমান এখানে একটি স্মৃতি স্তম্ভ নির্মানের কাজ শুরু করেছিলেন। তার মৃত্যুর পর প্রায় দের যুগ পর্যন্ত এই অসমাপ্ত স্তম্ভটি অবহেলায় অনাদরে পড়ে রয়েছিল। অত:পর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের প্রচেষ্টায় এবং এলজিইডির তত্ত্বাবধানে ৮৬ লক্ষ টাকা ব্যয়ে এ বছর স্মৃতি স্তম্ভ এবং চত্বর নির্মানের কাজ সম্পূর্ন হলে এলাকাটি দৃষ্টিনন্দন হয়ে ওঠে। কিন্তু এখন দৃষ্টি নান্দনিকতাকে গ্রাস করতে বসেছে দৃষ্টিকটুর হাতছানি। স্মৃতি স্তম্ভের কিনার ঘেষে একটি মহল পূঁজা মন্ডপ স্থাপন করে দূর্গা পূঁজার আয়োজন করেছে। স্মৃতি স্তম্ভের গমন নির্গমণ পথে ঘটাকরে স্থাপন করা হয়েছে গেইট। এমনকি নিজ উদ্যোগে বড় অংকের অর্থ ব্যয়ে কৃত্রিম ফোয়ারাও তৈরী করা হয়েছে (স্থায়ী দখলের পূর্ব লক্ষন)। এমতাবস্থায় বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন জেগেছে-স্মৃতি স্তম্ভ ও চত্বর এলাকা কি দেবোত্তর সম্পত্তির উপর প্রতিষ্টিত? যে কারণে ধারাবাহিকতা রক্ষার্থে চত্বরের ভিতরে পূজার আয়োজন করা হলো? এতে ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া ক্রমশ ডানা মেলছে।
অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উজ্জীবিত মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং ধর্ম নিরপেক্ষতা যেখানে রাষ্ট্রীয় মৌল স্তম্ভ সেখানে মুক্তিযুদ্ধ স্তম্ভ এবং চত্বরে পূজা মন্ডপের অবস্থান কি কোন নতুন দিক নির্দেশনার ইঈিত? গোটা বাংলাদেশে কি এমন নজির কোথাও আছে যে, সেটি অনুসরণ করা হচ্ছে? এ বাস্তবতা কি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ক্ষতবিক্ষত করবে না উজ্জীবিত রাখবে?
জানা গেছে সন্নিকটবর্তী মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমপ্লেক্স নির্মাণকালে আয়োজক চক্র বাধা বিপত্তি সৃষ্টি করেছিল। স্তম্ভ এবং চত্বর নির্মান কালেও তারা ওজর আপত্তি তুলেছিল। এখন এক প্রকার গোঁ ধরে পূঁজার আয়োজন করেছে। তাহলে কি এই জায়গার উপর দখলদারিত্বের কোন মতলব আছে? ধর্ম যারযার উৎসব সবার। এ আলোকে দূগা পূঁজা একটি সার্বজনীন উৎসব। ধর্মের নামে বাড়াবাড়ি করে এই সার্বজনীনতাকে কি প্রশ্ন বিদ্ধ করা হচ্ছে না?
এ প্রশ্নের উত্তর কে দেবে?
