স্টাফ রিপোর্টারঃ প্রবাসী অধ্যুষিত মৌলভীবাজার শহরে ব্যাঙের ছাতার মতো যত্রতত্র গড়ে উঠেছে অর্ধশতাধিকেরও বেশি চায়নিজ এন্ড বাংলা রেষ্টুরেন্ট। যার কারণে স্কুল ও কলেজ পড়–য়া শিক্ষার্থীরা প্রতিনিয়ত ক্লাস ছেড়ে চায়নিজ রেষ্টুরেন্টে বন্ধু-বান্ধবীদের নিয়ে ভীড় জমাচ্ছে। শিক্ষক ও অভিবাবকদের ফাঁকি দিয়ে রেষ্টুরেন্টে কাঠাচ্ছে ঘন্টার পর ঘন্টা। এসব রেষ্টুরেন্টের দুই তৃতীয়াংশ ক্রেতা শিক্ষার্থীরা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নিয়মীত ক্লাস ও লেখাপড়া না করায় গত ৩ বছর ধারাবাহিকভাবে সিলেট শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে এইচএসসি’র ফলাফলে পিছিয়ে ছিল মৌলভীবাজার জেলা।
সম্প্রতি শহরের একাধিক চায়নিজ ও বাংলা রেষ্টুরেন্ট ঘুরে দেখা গেছে অনেক শিক্ষার্থীরা ক্লাসের সময়ে স্কুল কিংবা কলেজের নির্ধারিত পোশাক পড়েই বয় ফ্রেন্ডের সাথে সময় পার করছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ওই সকল শিক্ষার্থীরা পরবর্তীতে মাদকসহ নানা অপরাধের সাথে সম্পৃক্ত হচ্ছে। হাত খরচের টাকা সংগ্রহ করতে জড়িয়ে পড়ছে অনৈতিক কাজে। ফলে জেলা জুড়ে বাড়ছে খুন, হত্যা, ধর্ষন, চুরি ও ছিনতাইসহ নানা অপকর্ম। রেষ্টুরেন্টগুলো প্রেমিক যুগলের নিরাপদ আশ্রয়স্থলেও পরিণত হয়েছে। প্রেমিক যুগল নিরাপদে ডেটিং করতে রেষ্টুরেন্টে রাখা হয়েছে ছোট ছোট খোঁফ। রয়েছে ফ্রি ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধা।
একটি পর্যালোচনায় দেখা গেছে এসএসসিতে এপ্লাস বা এগ্রেড পেয়ে যে সকল শিক্ষার্থীরা এইচএসসিতে মৌলভীবাজার সরকারি কলেজ কিংবা মহিলা কলেজে ভর্তি হয়েছে তাদের এক চতুর্থাংশও এইচএসসিতে এপ্লাসের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেনি। ২০১৭ সালে মহিলা কলেজে ১৩৯১ জন শিক্ষার্থীর মধ্য থেকে পাবলিক পরীক্ষায় একটিও এপ্লাস আসেনি। এবারও ১৫’শ ৩৩ জন পরীক্ষার্থী অংশ গ্রহণ করে উত্তির্ণ হয়েছে মাত্র ৮’শ ৭৯জন। এর মধ্যে এপ্লাস পেয়েছে ১জন। সরকারি কলেজে ১৪’শ ৭৮ জন পরীক্ষার্থী অংশ গ্রহণ করে উত্তির্ণ হয়েছে ১২’শ ৪৫জন। এর মধ্যে এপ্লাস পেয়েছে মাত্র ৩৭জন। শাহ মোস্তফা কলেজে ৮’শ ৪৬ জন পরীক্ষার্থী অংশ গ্রহণ করে উত্তির্ণ হয়েছে ৩’শ ৫৮জন। এর মধ্যে একটিও এপ্লাস নেই। কাশিনাথ আলাউদ্দিন স্কুল এন্ড কলেজ থেকে ৩’শ জন পরীক্ষার্থী অংশ গ্রহণ করে উত্তির্ণ হয়েছে ১’শ ৩৮ জন। এর মধ্যে একটিও এপ্লাস নেই।
সম্প্রতি সরেজমিন সেন্ট্রাল রোডস্থ মনসুন চায়নিজ রেষ্টুরেন্টে গেলে দেখা যায়, একটা টেবিলে ২জন যুবতী মেয়ে ও ৪জন ছেলে বসে আড্ডা মারছে, পাশের আরেকটি টেবিলে ৭জন মেয়ে ও ১০ জন ছেলে বসে নাস্তা খাচ্ছে, ও আরেকটি টেবিলে আলী আমজদ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৩জন শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ের পোশাক পরিহিত অবস্থায় ছেলে বন্ধুদের সাথে আড্ডা মারছে। এরা সবার বয়েস ১২-২৩ বছরের মধ্যে। পরে শহরের প্রেসক্লাস চত্বরে জিএফসি ফাস্ট ফুড চায়নিজ এন্ড বাংলা রেষ্টুরেন্টে গেলে দেখা যায়, সরকার কলেজের ড্রেস পরিহিত একজন মেয়ে বয় ফ্রেন্ড এর সাথে আড্ডা মারছে। এর পাশে আরোও দু’টি টেবিলে দু’জোড়া যুগল বসে নাস্তা করতে দেখা যায়। একটি দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, জিএফসিতে অনৈতিক কর্মকান্ড হয়ে থাকে। গত রমজান মাসে একাধিক ঘটন ঘটেছে। মৌলভীবাজারের ঐতিহ্যবাহী সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরাও কলেজের নির্ধারিত পোষাক পড়ে জিএফসিতে বসে থাকতে দেখা গেছে। লাজওয়াবেও কয়েকজন যুবতী মেয়েকে বসে থাকতে দেখা যায়।
এভাবে শহরের ওয়েষ্টার্ণ চায়নিজ রেষ্টুরেন্ট, ফায়ার এন্ড আইস, কফি হাউস, স্প্রীং কর্ণার, ট্রেডিশন ক্যাফে, স্মোকি উইনডোতে, বেঙ্গল কাবাব হাউস, পিকনিক ক্যাফে, ক্যাফে লাজাওয়াব, টেনেছি, জাবো, দাওয়াত, ইট এন্ড মিট, ফুড প্যালেস ও কপি হাউজে প্রতিদিন প্রেমিক যুগল ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের আড্ডা মারতে দেখা যায়।
এছাড়াও ফাষ্ট ফুড স্বাদ, বেঙ্গল, রাজমহল, বনফুল, নাইস ওয়ান ও এ-ওয়ানেও শিক্ষার্থীরা বসে যুগলদের নিয়ে আড্ডা মারার অভিযোগ রয়েছে।
এব্যাপারে জিএফসি ফাস্ট ফুড চায়নিজ এন্ড বাংলা রেষ্টুরেন্টে এর পরিচালক হেনা চৌধুরী অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “বিগত কিছু দিন আমি বাহিরে থাকায় কিছু বিশৃঙ্খলা হয়েছে। তবে এখন সুন্দরভাবে চলতেছে।
এবিষয়ে হাফিজা খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাশেদা বেগম বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি অভিবাবকদের আরোও সচেতন হতে হবে। জোসেফ নামে এক অভিভাবক বলেন, সামাজিক অবক্ষয়ের প্রধান কারন এসব চায়নিজ রেষ্টুরেন্টে। তাজুল ইসলাম নামের এক চাকুরিজীবি বলেন, রেষ্টুরেন্ট গুলো নিরিবিলি স্থানে করা হয়েছে যাতে দীর্ঘ সময় বসে আড্ডা মারা যায়।
এবিষয়ে জেলার সচেতন নাগরিক এডভোকেট আব্দুল মতিন চৌধুরী, সৈয়দ শাহাব উদ্দিন আহমদ ও বকশি ইকবাল আহমদসহ আরোও কয়েকজনের সাথে কথা হলে তারা বলেন, প্রশাসন, অভিভাবক, জনপ্রতিনিধি এবং শিক্ষকরা সচেতন না হলে এভাবে মেধাবী শিক্ষার্থীরা চায়নিজ রেষ্টুরেন্টে সময় অপচয় করে ধ্বংস হয়ে যাবে। মেধা শূন্য হয়ে পড়বে আগামী প্রজন্ম।
মৌলভীবাজারে অর্ধশতাধিক চায়নিজ রেষ্টুরেন্ট
