পর্ব-৫
সরওয়ার আহমদঃ
যে সময়ের কথা লিখছি সে সময়ে যোগাযোগের ব্যবস্থার মধ্যে বাহন ছিলো ট্রেন, বাস এবং নৌকা। ব্রিটিশ শাসনামলে নদীমাতৃক এই উপনিবেশে নৌকা এবং জাহাজ ছিলো মালামাল পরিবহনের নির্ভরযোগ্য বাহন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ে এবং তারও কিছুটা আগে সমতলের পণ্য পরিবহনের সুবিধার্থে ট্রেন লাইন স্থাপন করা হয়েছিলো। কয়লার ইঞ্জিন পরিচালিত ট্রেন লাইন সর্বব্যাপী ছিলোনা তখনও। ট্রেনকে বলা হতো “তালইর” গাড়ী। ভাড়া তুলনামূলক ভাবে কম থাকায় এবং নিকটবর্তী ষ্টেশনে যাওয়া আসার ক্ষেত্রে টিকেট ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতা বেশী থাকায় বোধ হয় এই নামকরণ করা হয়েছিলো। ট্রেন লাইনের পাশাপাশি থানা থেকে মহকুমা পর্যায়ের যোগাযোগ নিশ্চিত করণের জন্য সড়ক পথও স্থাপিত হয়েছিলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কালে। এ সমস্থ সড়কে বাস যোগাযোগ শুরু হয়েছিলো উঠতি ব্যবসায়ীদের উদ্দ্যোগে। শুষ্ক মৌসুমে ধুঁলি উড়িয়ে এবং বর্ষা মৌসুমে কাদা পানি ছড়িয়ে “পথ পথ” ভেঁপু বাজিয়ে বাস চলতো ২০/২৫ মাইল স্পীডে। পথ চারীরা হাঁত উচিঁয়ে ইশারা দিলেই মুড়ির টিন মার্কা বাস থেমে যেতো যাত্রী তোলার জন্য। সেকালের বাস গুলোতে সিটের শ্রেণীভেদ ছিলো। আপার ক্লাসে বসতেন সমাজের বিত্তশালীরা। লোয়ার ক্লাসে ছিলো গরীব ও কৃষক শ্রমিক শ্রেণীর জন্য। লেয়ার ক্লাসে ভাড়া কম থাকায় যাত্রী থাকতো ঠাঁসাটাঁসি। লোয়ার ক্লাস গাড়ীর পেছনের অংশ হিসেবেই চিহ্নিত ছিলো। তাই কাঁচা রাস্তায় গাড়ীর ঝাকুনী ছিলো বেশী। এটিকে বলা হতো “জামঝাকুনি”। তবু ঝাঁকুনী সহ্য করেই যাত্রীদেরকে নিজ নিজ গন্তেব্যে আসাযাওয়া করতে হতো প্রয়োজনের তাগিদে।
যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে সেকালে রেলপথ এবং সড়ক পথের চাহীতে নৌপথের ব্যাপ্তি ছিলো বেশি। মালামাল এবং যাত্রী পরিবহনের ক্ষেত্রে সবকটি নদীতে ছোট নৌকা, গয়না নৌকা এবং লঞ্চের উপস্থিতি ছিলো দৃশ্যমান। প্রতিটি শহর এবং বাজারের পাশে “নাওঘাট” এবং জেটী গড়ে উঠেছিলো। এসমস্থ ঘাটকে আর্মানী ঘাটও বলা হতো। এই ঘাট থেকেই যাত্রী এবং পণ্য বোঝাই নৌযান রওয়ানা হতো নির্দিষ্ট গন্তব্যে। নৌ যোগাযোগের এই বাস্তবতা বারো মাসই ছিলো। নদী ছাড়া হাওর কিংবা নি¤œাচলে নৌকা নির্ভরতা ছিলো জৈষ্ঠ্য মাস থেকে কার্তিক মাস পর্যন্ত। বর্ষার প্লাবীত হাওর এবং নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার পর নৌকার উপস্থিতি বৃদ্ধিপেতো প্রতিটি জন পদে।
(——–চলবে)
লেখকঃ সিনিয়র সাংবাদিক ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষক