স্টাফ রিপোর্টারঃ মৌলভীবাজার-আখাউড়ায় রেল লাইন মারাত্ম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। রেলপথ থেকে অব্যাহতভাবে চুরি হচ্ছে ক্লীপ-হুক। রেল লাইনের সাথে সংযুক্ত ক্লীপ-হুক চুরির ফলে দুর্বল হয়ে পড়ছে রেল পথ। মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার বরমচাল এলাকায় উপবন ট্রেন দুঘর্টনার পর রেলের গাফলতি ও ক্লীপ-হুক চুরির ঘটনা ধরা পড়েছে। ভানুগাছ রেলষ্টেশন সংলগ্ন গোপালনগর রেলগেইটের মাত্র ৫শত মিটার এর মধ্যে পাতের সাথে ৪১২টি ক্লীপ নেই। এ রকম হাজারো ক্লীপ চুরির হয়েছে। কিন্তু দেখার কেউ নেই। ফলে ট্রেন চলাচলের সময় যেকোনো মুহূর্তে আরোও বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।
এদিকে সিলেট বিভাগের ১৭৩ কিলোমিটার দেখভাল করার জন্য সরকারি ভাবে ২৯ জন টি ম্যান নিয়োজিত আছেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। মাস শেষে নিয়োজিত টিম্যানরা ঠিকই বেতন নিচ্ছেন। কিন্তু একজনই যথাযথ ভাবে দায়িত্ব পালন করেননি বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
আন্তঃনগর, লোকাল ও মালবাহী মিলিয়ে প্রায় ১০-১২টি ট্রেন ঝুঁকি নিয়েই প্রতিনিয়ত চলাচল করছে। রেল বিভাগের অনেক কর্মকর্তা ও কর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন- চরম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে দেশের অন্যতম পুরনো রেলপথ সিলেট-আখাউড়া। এখন অনেকটাই নড়বড়ে রেল সেতু ও লাইন। দ্রুত মেরামত কিংবা নির্মাণ না হলে ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। সিলেট-আখাউড়া রেলপথের ১৭৩ কিলোমিটারের মধ্যে প্রায় ২৫-৩০টি সেতু ও কালভার্ট চরম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার বরমচাল ইউনিয়নের বাসিন্দা আক্তার, লুৎফুর রহমান রাজু, ফাজ চৌধুরী, রহিম ও ফয়ছল বলেন, দূর্ঘটনার পূর্বে লেইন দেখাশোর কাজে নিয়োজিত টি ম্যানকে আমরা দেখতে পাইনি। কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার বলার পরেও তাদের নামাতে পারিনি। তারা বাড়িতে বসে দায়িত্ব পালন করে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিভিন্ন স্থানে রেলপথের পাথর ছিটকে যাচ্ছে। রেলপথে স্লিপারসমূহে নাট-বল্টু দিয়ে রেল লাইন আটকানো থাকার কথা থাকলেও বিভিন্ন স্থানে ক্লিপ, নাট-বল্টু নেই। প্রতিনিয়ত রেলপথ থেকে এসব যন্ত্রাংশ চুরি হচ্ছে। ভানুগাছ এর গোপালনগর ও ফাজিলপুর এলাকার ৩০২/৭ নং পিলার পর্যন্ত দুই ধারে প্রায় ৪১৬টি ক্লীপ-হুক নেই। দু’লাইনের জোড়া দেয়া স্থানেও ক্লিপ চুরি হয়ে গেছে। দিনের পর দিন ক্লীপ-হুক, নাট-বল্টু ও ফিশপ্লেট চুরি হয়ে যাওয়ায় সেকশনটি অধিকতর ঝুঁকির মুখে পড়েছে। চুরি হওয়া এসব যন্ত্রাংশ দ্রুত লাগানোর নিয়ম থাকলেও বছরের পর বছর তা লাগানো হচ্ছে না। দ্রুত রেলপথের কল, ক্লীপ ও নাট লাগানোর দাবী জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
স্থানীয়রা তারা আরও বলেন, কোনো যন্ত্রের সাহায্য ছাড়া হাত দিয়েই সহজেই খোলা যাচ্ছে নাট। ট্রেন চলাচলের সময় জয়েন্ট পয়েন্টগুলো ফাঁক হয়ে যাচ্ছে। ট্রেনের বগিগুলোও অনেকটা কাত হয়েই ওই স্থান দিয়ে চলে। এমন নাজুক অবস্থায় রেললাইন কোনো রকম জোড়াতালি দিয়ে সচল রাখা হয়েছে।
এ ছাড়া অনেক স্টেশন বন্ধ রয়েছে কিংবা জরাজীর্ণ অবস্থায় কোনোরকম টিকে আছে। এগুলো দ্রুত মেরামত না করলে যেকোনো সময় ভেঙে পড়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। সম্প্রতি সিলেট- আখাউড়া রেললাইনে বেড়ে চলা দুর্ঘটনায় চরম উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় এ অঞ্চলের যাত্রীরা। সিলেটবাসীর জোর দাবি যেন দ্রুত এই জরাজীর্ণ রেললাইনটির (সার্বিক) মেরামত ও নির্মাণ করার।
রেলপথ সিলেট বিভাগীয় প্রকৌশলী মোঃ আহসান জাবিদ যুগান্তরকে বলেন, রেল পথের মেরামত ধারাবাহিক প্রসেস। এক বছর করলে যে শেষ হয়ে যাবে এমন না। তবে দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য আমাদের চেষ্টা অব্যাহত আছে। এজন্য যে জায়গায় যে ভাবে ট্র্রেন চলাচল করা প্রয়োজন আমরা সে ব্যবস্থা করে দিয়েছি। আগামীতে আরও বেশি উন্নত করা হবে।
মৌলভীবাজার-আখাউড়া রেল লাইন মারাত্ম ঝুঁকিতে
