স্টাফ রিপোর্টার: মাদক নির্মূল ও মাদক সন্ত্রাসীদের প্রতিরোধে করণীয় শীর্ষক মতবিনিময় সভায় মৌলভীবাজার-৩ আসনের সংসদ সদস্য নেছার আহমদ বলেছেন, সোনার বাংলা গড়তে যে কয়েকটি সমস্যা তার মধ্যে মাদক একটি। এই মাদকের সাথে সংশ্লিষ্ট দূর্নীতি ও জঙ্গিবাদ।
তিনি বলেন, আমরা যারা জনপ্রতিনিধি তাদের কাছে অনেক পিতা-মাতা যায় তাদের মধ্যে এক ধরণের হলো মাদকসেবী সন্তান এবং তাদেরকে পুলিশের কাছে তুলে দিতে বলেন। আরেকটি হচ্ছে পুলিশ ইয়াবা দিয়ে আমার ছেলেকে ধরে নিয়েছে। এই ব্যাপারে আমরা তদবীর করি না।
তিনি আরোও বলেন, সরকার আজ কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করেছে। তারপরও বলা হয় বেকারত্বের কারণে মাদক বাড়ছে।
নেছার আহমদ বলেন, মৌলভীবাজার জেলাকে আমরা মাদকমুক্ত জেলা চাই। মাদক ব্যবসা ও সেবনের সাথে যারা জড়িত তাদের তালিকা পুলিশের কাছে আছে। মাদক নির্মূলে সরকারের যেমন দায়িত্ব আছে তেমনি আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য আছে।
নেছার আহমদ আরোও বলেন, মাদকের সাথে যারা জড়িত তাদের হাত অনেক লম্বা। যার জন্য দরিদ্র পরিবারের অনেক লোক তাদের ব্যাপারে তথ্য দিতে চায় না। মাদকের সাথে যারা জড়িত তাদের বিরোদ্ধে একশ ভাগ কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে পুলিশকে।
তিনি বলেন, পুলিশ কোন মাদক সেবীকে গ্রেফতার করলে ছাড়ার ব্যাপারে রাজনৈতিক কোন নেতা তদবীর করলে তাকেও গ্রেফতার করবেন।
ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ওয়ার্ড ও পাড়ায় পাড়ায় মাদক বিরোধী কমিটি গঠন করুন। দেশকে সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলতে হলে যেখানেই মাদক সেখানে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
সোমবার (০৬ এপ্রিল) দুপুরে মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবের আয়োজনে ও জেলা পুলিশের সহযোগীতায় প্রেসক্লাব সভাপতি আব্দুল হামিদ মাহবুবের সভাপতিত্বে ও সাধরাণ সম্পাদক সালেহ এলাহি কুটির পরিচালনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপরোক্ত কথা বলেন।
মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দা জোহরা আলাউদ্দিন বলেন, আগে মাদক নিয়ে সচেতনতা ছিল না। এক সময় মৌলভীবাজারে মাদকের ভয়াবহতা ছিল এখন তা অনেকটা কমে এসেছে। অনেক সময় কথা উঠে থাকে রাজনীতিবীদরা মাদকসেবীদের ব্যাপারে সুপারিশ করেন। আমরা যতদিন ক্ষমতায় ছিলাম কোন দিন অন্যায় আবদার নিয়ে যাইনি।
তিনি আরোও বলেন, অনেক সময় মাদকের সাথে সরকারি অনেক লোক জড়িত থাকেন। যা মিথ্যা নয়। আমাদের মধ্যে যেভাবে খারাপ লোক রয়েছে তেমনি সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যেও খারাপ লোক রয়েছে। তাই সবার বিরোদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান বলেন, আমরা একটি সংকটের মুখোমুখি হয়েছি। ৭১ এর স্বাধীনতা যুদ্ধের পর বঙ্গবন্ধু দেশে এসে রেসকোর্স ময়দানে গাজা বন্দ করেছিলেন। পরবর্তীতে সারা দেশে মাদককে নিষেধ করা হয়। একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হলে মাদককে নির্মূল করতে হবে। মাদককে নির্মূল করতে হলে জনবিপ্লব করতে হবে। প্রথমেই এ জনবিপ্লবের কাজ করতে হবে পরিবার থেকে।
জেলা প্রশাসক তোফায়েল ইসলাম বলেন, কোন মাদক সেবীকে ছাড় দেওয়া হবে না। সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদে বলা আছে আইনের চোখে সবাই সমান। জঙ্গিবাদ ও মাদকে যারা জড়িত থাকে তারা সুস্থ থাকতে পারে না। মাদক সেবনের ফলে সে তার শরীর ধ্বংস করে দেয়। মাদক ও জঙ্গিবাদ একটি আরেকটির পরিপূরক।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার মাদক মুক্ত করার জন্য কয়েকটি জেলায় কাজ করে যাচ্ছে। তার মধ্যে একটি হচ্ছে জেলার জুড়ী উপজেলা। তার জন্য সেখানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ বিভিন্ন স্থানে মতবিনিময় করা হচ্ছে।
তিনি আরোও বলেন, নায়কোচিত ভাব দেখানোর জন্য অনেক উচ্চ পরিবারের ছেলে মাদকে আসক্ত হয়। শুধু তারা না তাদের দলবল নিয়েও মাদক সেবন করে।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাহজালাল বলেন, আমাদের সকলের দায়িত্ব হচ্ছে মাদকের বিরোদ্ধে কাজ করা। মৌলভীবাজার প্রেসক্লাব যেভাবে মাদকের বিরোদ্ধে এগিয়ে এসছে তেমনি প্রতিটি কাজেও এগিয়ে আসবে।
তিনি বলেন, মাদক একজন গ্রহণ করে অন্যজন মাদক ব্যবসায়ী। এখানে সবাই সচেতন আছেন এ ব্যাপারে। তবে অনেক সময় ভালো কোন পরিবারের সন্তান মাদকের সাথে জড়িয়ে পড়লে আমরা তাদের ভালো হওয়ার সুযোগ দেই। এরকম কিছু ছেলের ব্যাপারে জনপ্রতিনিধিরা সুপারিশ করে থাকেন।
তিনি আরোও বলেন, মাদক ব্যবসা করে মৌলভীবাজারে অনেক পরিবার আঙ্গুল ফুলে কলাগাছে পরিণত হয়েছে। আমরা তাদের বিরোদ্ধে মানি লন্ডারিং মামলা করব।
পুলিশ সুপার জনপ্রতিনিধিদের উদ্দেশ্য করে বলেন, মাদকসেসবী ও মাদক ব্যবসায়ীদের কেউ শেল্টার দিলে তাদের বিরোদ্ধে ব্যবস্থা নেব। আমরা কোন দল বিবেচনা করব না। এসময় তিনি সকলের কাছে মাদকসেবী ও ব্যবসায়ীদের তথ্য দিয়ে সহযোগীতার আহবান জানান।
মতবিনিময় সভায় এছাড়াও বক্তব্য রাখেন মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়র মো. ফজলুর রহমান, জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা সুবোধ কুমার বিশ্বাস, জেলা ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক সিরাজুল ইসলাম, মৌলভীবাজার টাউন সিনিয়র কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ শামসুল ইসলাম, মৌলভীবাজার সরকারি কলেজের রসায়ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান রাফি উদ্দিন, জেলা জাতীয় পার্টি সভাপতি সৈয়দ শাহাবউদ্দিন, জেলা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক মিছবাহুর রহমান, সিনিয়র সাংবাদিক ডা. ছাদিক আহমদ, একাটুনা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আবু সুফিয়ান, নাট্যকার আব্দুল মতিন, সিনিয়র সাংবাদিক ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষক সরওয়ার আহমদ, দৈনিক বাংলার দিন সম্পাদক বকসি ইকবাল আহমদ, মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এস এম উমেদ আলী ও ইমজা সভাপতি শাহ অলিদুর রহমান।
এসময় উপস্থিত ছিলেন মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবের সদস্যবৃন্দ, আইনশূংখলা রক্ষা বাহিনীর কর্মকর্তা, ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও সদস্য বৃন্দ, বিভিন্ন সামাজিক ও সাস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ সহ প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় কর্মরত সাংবাদিকবৃন্দ।