ষ্টাফ রিপোর্টার:
মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার টেংরা বাজারে একটি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নাম নিয়ে স্থানীয় দুটি পক্ষের মধ্যে চরম বিরোধ দেখা দিয়েছে। এঘটনাকে কেন্দ্র করে উভয় পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি মামলা হয়েছে। টেংরা বাজার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান টিপু খানের উপর থেকে মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে শনিবার সকালে ইউনিয়ন পরিষদের সামনে বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের ব্যানারে মানববন্ধন করা হয়। এদিকে বিদ্যালয় অবকাঠামো উন্নয়ন কমিটির সভাপতি আবুল ফয়েজ একই দিন দুপুরে চেয়ারম্যান টিপু খানের উপর স্বৈরাচারিতার অভিযোগ এনে মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন।
বিদ্যালয়ের নাম নিয়ে এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। যে কোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দূর্ঘটনা। এঘটনায় বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন। অনেক শিক্ষার্থীরা ভয়ে ক্লাসে যাচ্ছে না।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে উপজেলার টেংরা বাজারে অব্যবহৃত একটি আশ্রয় শিবিরে অস্থায়ীভাবে ‘টেংরা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। এ নামেই ওই আশ্রয় শিবিরে ২০১৯ শিক্ষা বর্ষের পাঠদান কার্যক্রম শুরু হয় এবং ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত ২৫০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। পরবর্তীতে একই ইউনিয়নের শালন গ্রামের আমেরিকা প্রবাসী আরজান খান ভূমি দানের শর্তে ‘আরজান খান আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়’ নামকরনের প্রস্তাব দেয়া হয়। সে আলোকে বর্তমান চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে সভা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হলে আরজান খান বিদ্যালয়ের নামে ৭৫ শতাংশ জমি (৫০৫/১৯ নং দলিলে) দান করেন। পরে বিদ্যালয়ের সাইনবোর্ড পরিবর্তন করে ‘আরজান খান আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়’ নামে লাগানো হয়। এদিকে বিদ্যালয়ের নাম পরির্তন নিয়ে এলাকায় পক্ষে বিপক্ষে দুটি গ্রুপ তৈরি হয়। চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে নতুন নামের বিরোধীতা করে বিদ্যালয়ের আরজান খান নামের নতুন সাইনবোর্ড নামিয়ে দেয় একটি গ্রুপ। আবার একটি গ্রুপ ‘আরজান খান আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়’ নাম থাকার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।
এঘটনায় বিদ্যালয়ের বিভিন্ন আসবাবপত্র ভাংচুরসহ ১০ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবীর অভিযোগ এনে বিদ্যালয় অবকাঠামো উন্নয়ন কমিটির সভাপতি ও ভুমি দাতা প্রবাসী আরজান খানের শ্বশুড় আবুল ফয়েজ ৭ এপ্রিল মৌলভীবাজার আদালতে পিটিশন (নং ১০৪/২০১৯) দায়ের করেন। এ মামলায় টেংরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান টিপু খান ও তার দুই ভাইসহ ৭ জনকে আসামী করা হয়। আদালত অভিযোগের শুনানী শেষে রাজনগর থানার ভারপ্রাপাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) মামলাটি আমলে নিয়ে আগামী ১৫ এপ্রিলের মধ্যে আদালতকে অবহিত করার নির্দেশ দেন।
এদিকে চেয়ারম্যানকে আসামী করায় টেংরা ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের জনসাধারণ ব্যানারে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আছকির খান, ভাইস-চেয়ারম্যান ফারুক আহমদ, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফয়ছল আহমদ, মনসুরনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিলন বখত, রাজনগর সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দেওয়ান খয়রুল মজিদ ছালেক, উপজেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারণ সম্পাদক আকমল হোসেন, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ময়নুল খান, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির ফৌজি, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রুবেল আহমদ, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল সাম্মু সহ ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যবৃন্দ। পরে চেয়ারম্যানের উপর থেকে মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে রাজনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর উপজেলা চেয়ারম্যান আছকির খানসহ ইউনিয়ন চেয়ারম্যানরা একটি লিখিত অভিযোগ দেন। এদিকে আরজান খানের পক্ষে অবকাঠামো উন্নয়ন কমিটির সভাপতি ও আরজান খানের শ্বশুড় আবুল ফয়েজ মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন। এসময় লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, চেয়ারম্যানসহ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সকল সদস্যদের সর্ব সম্মক্রিমে ৩১ জানুয়ারী চেয়ারম্যান টিপু খানের অফিস কক্ষে সভার ২ নং রেজুলেশনে আরজান খান ৭৫ শতাংশ জায়গা বিদ্যালয়ের নামে দেন এবং ৬ ফেব্রুয়ারী ৫০৫/১৯ নং দলিলে বিদ্যালয়ের নামে দান করেন। সে আলোকেই “টেংরা বাজার আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়” থেকে “আরজান খান আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়” নাম করণ করা হয়। কিন্তু বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করার পরে ৫ ফেব্রুয়ারী চেয়ারম্যান ১৫/২০ জন লোক নিয়ে বিদ্যালয়ে প্রবেশ করে আসবাবপত্র ভাঙচুর করেন এবং “আরজান খান আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়” লেখা সাইন বোর্ড নামিয়ে দেন।
এব্যাপারে মামলার বাদী আবুল ফয়েজ বলেন, “চেয়ারম্যান ২৫০ জন শিক্ষার্থীর জীবন নিয়ে চিনিমিনি খেলছেন। আরজান খান চাঁদা না দেয়ায় চেয়াম্যান মিটিং করে বিদ্যালয় ভাংচুর করেন। শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় যাতে কোন ক্ষতি না হয় সেজন্যই মামলা করতে বাধ্য হয়েছি।
টেংরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. টিপু খান বলেন, সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগ এনে আমার উপর মামলা করা হয়েছে। এসময় আমি ঢাকায় ছিলাম। ঢাকা থেকে আসার পর এলাকার লোকজন বিষয়টি আমাকে অবগত করেন। এলাকাবাসীর দাবী টেংরা আদর্শ বিদ্যালয় যেখানে আছে সেখানেই ওই নামে থাকবে”।
রাজনগর থানার ওসি (তদন্ত) আবুল কালাম বলেন, আদালতের নির্দেশে মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। এসআই জাহাঙ্গীর আলম মামলাটি তদন্ত করছেন।