বিশেষ প্রতিনিধিঃ
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মৌলভীবাজারের ৪টি আসন নিয়েই জয় পরাজয়ের হিসাব কষছেন নৌকা ও ধানের শীষের প্রার্থীরা। ৪টি আসনে নৌকা ও ধানের শীষের ৮জন প্রার্থীসহ মাঠে আছেন বিভিন্ন দলের ১৯ জন প্রার্থী। প্রচারণার শেষ দিকে জয় পরাজয়ের হিসাব নিয়ে ব্যস্থ প্রার্থী এবং তাদের সমর্থকরা। তবে ভোটারদের সাথে কথা বলে এবং বিভিন্ন সংস্থার রিপোর্ট পর্যালোচনা করে দেখা গেছে ৪টি আসনের মধ্যে ২টি আসনে ধানের শীষের প্রার্থী এবং বাকী ২টি আসনে নৌকার প্রার্থী বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর পরেও টার্নিং পয়েন্টে রয়েছেন আ’লীগের প্রার্থীরা। কারণ বিগত আ’লীগের ১০ বছরে জেলার ৪টি আসনই আ’লীগ তথা মহাজোটের দখলে ছিল। কিন্তু আ’লীগের প্রার্থীরা জেলার মধ্যে দৃশ্যমান কোনো উন্নয়ন করতে পারেনি। এনিয়ে সচেতন ভোটারদের মধ্যে নানা আলোচনা-সমালোচনা।
জানা যায়, ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মৌলভীবাজার-১ আসন থেকে আ’লীগ প্রার্থী শাহাব উদ্দিন আহমদ, মৌলভীবাজার-২ আসন থেকে মহাজোট থেকে জাতীয় পার্টি প্রার্থী নবাব আলী আব্বাস খান, মৌলভীবাজার-৩ আসন থেকে আ’লীগ প্রার্থী সৈয়দ মহসিন আলী এবং মৌলভীবাজার-৪ আসন থেকে বিজয়ী হন আ’লীগ প্রার্থী উপাধ্যক্ষ আব্দুশ শহিদ। ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও জেলার ৪টি আসন থেকে একক ভাবে আ’লীগের প্রার্থীরা বিজয়ী হন। তবে গত ১০ বছরে চোখে পড়ার মতো কোনো উন্নয়ন করতে পারেননি তারা। গতানুগতিক জেলা কোটা ব্যতীত এর বাহিরে কিছু করা তাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। যার কারনে ভোটাররা নারাজ। আ’লীগ প্রার্থীদের ওই সব দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হলে উন্নয়নের নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন ধানের শীষের প্রার্থীরা। তবে ভোটের পরে তা কতটুকু বাস্তবায়িত হবে তানিয়ে সংশয়ে নতুন প্রজন্মের ভোটাররা। তবে অনেকেই পরিবর্তনের আশায় ধানের শীষে ভোট দেয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
এদিকে চায়ের রাজধানী খ্যাত মৌলভীবাজারের ৪টি আসনেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের জয় পরাজয়ে চা শ্রমিকদের ভোটই প্রধান ফ্যাক্ট। জেলা নির্বাচন অফিস থেকে জানা যায়, মৌলভীবাজার জেলার ৭টি উপজেলায় ১১৪টি চা বাগান রয়েছে। এর মধ্যে বড়লেখায় ১৫টি, জুড়ীতে ১১টি, কুলাউড়ায় ২১টি, রাজনগরে ১৪টি, সদরে ২টি, কমলগঞ্জে ১৮টি ও শ্রীমঙ্গলে ৩৩টি। ৪টি আসনে মোট চা শ্রমিক ভোটার ১ লক্ষ ৪৫ হাজার ৫শ’ ৫৯ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ৭১ হাজার ৯’শ ৮০ জন এবং পুরুষ ভোটার ৭৩ হাজার ৫’শ ৭৯ জন। এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে চা শ্রমিক ভোটারদের সাথে কথা হলে তারা বলেন, বরাবরের ন্যায় এবারও আমরা নৌকায় ভোট দেব। কারণ ধানের শীষে ভোট দিলেও এরা বিশ্বাস করবে না। জেলার ৪টি আসন মিলে প্রায় ৩ লক্ষ তরুণ ভোটার রয়েছে। এদের অধিকাংশই শিক্ষিত। তরুণ ভোটারদের সাথে কথা হলে তারা বলেন, বিগত ১০ বছলে আ’লীগ নানা প্রতিশ্রুতি দিলেও এক তৃতীয়াংশই বাস্তবায়িত হয়নি। যার কারণে এবার তারা অন্য চিন্তা করছেন।
ভোটরদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মৌলভীবাজার-১ আসনে ভোটের জরিপে আ’লীগ প্রার্থী শাহাব উদ্দিন আহমদ কিছুটা এগিয়ে রয়েছেন। এই আসনটি পুনরুদ্ধার করতে মরিয়া বিএনপির নেতাকর্মীরা। ওই আসনে ধানের শীষের প্রার্থী নাসির উদ্দিন মিঠুকে বিজয়ী করতে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের নেতাকর্মীরা করন কামড় দিয়েছেন। তবে শেষ পর্যন্ত যে ভাবেই হোক আসনটি ধরে রাখতে চায় আ’লীগ। মৌলভীবাজার-২ আসনে ভোটের জরিপে এগিয়ে ধানের শীষ প্রার্থী সুলতান মুহাম্মদ মনসুর আহমদ। তবে প্রচার প্রচারণায় এগিয়ে নৌকার প্রার্থী এম এম শাহীন। গ্রেফতার ও পুলিশি হয়রানির ভয়ে মুখখোলে মতামত জানাতে নারাজ অধিকাংশ ভোটার। তবে সুষ্ট ও নিরপেক্ষ ভোট হলে নিরব বিপ্লব ঘটাতে পারেন সুলতান। অনেক আ’লীগ নেতাও থাকে ভোট দেয়ার কথা বলেন। মৌলভীবাজার-৩ আসনের দিকে চেয়ে আছেন পুরো জেলাবাসী। এখানে বিএনপির জেলা সভাপতি এম নাসের রহমান ধানের শীষ নিয়ে এবং আ’লীগের জেলা সভাপতি নেছার আহমদ নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়ছেন। শক্ত অবস্থানে রয়েছেন উভয় দলের প্রার্থী। ওই আসনে চা শ্রমিকদের তুলনামূলক কম ভোট থাকায় মাইনাসে রয়েছেন নৌকার প্রাথী। ভোটাররা বলছেন শেষ পর্যন্ত অতি অল্প ভোটেই এখানে জয় পরাজয় হবে। মৌলভীবাজার-৪ আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়ছেন একাদারে ৫ বারের এমপি উপাধ্যক্ষ আব্দুশ শহীদ। ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে লড়ছেন সাবেক মুজিবুর রহমান চৌধুরী। আসনে চা শ্রমিক ভোটার ৫১ হাজার ৫’শ ৩ জন। স্বাধীনতার পর থেকে গত নির্বাচন পর্যন্ত প্রত্যেকবারই নৌকার প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়েছে। এবারও নৌকার প্রার্থী বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
Post Views:
0