কমলগঞ্জ প্রতিনিধি:
আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজেদের জয় নিশ্চিত করতে আওয়ামীলীগ তাদের ভোট ব্যাংক চা বাগান ধরে রাখতে চায়। আওয়ামীলীগ চা বাগান সমূহের চা শ্রমিক ভোটারের দ্বারে দ্বারে জোর গণ সংযোগ ও প্রচারণা চালাচ্ছে। ভোট ব্যাংক গ্রামাঞ্চল ধরে রেখে চা বাগানে ভাগ বসিয়ে চা বাগান ভোট ভাঙ্গতে চায় বিএনপি। বিএনপি বিগত ৫ বারের নির্বাচন পরবর্তী আওয়ামী প্রার্থীর নানা ত্রুটি বিচ্যূতি তুলে ধরে চা শ্রমিক ভোটারের কাছে গণ সংযোগ ও প্রচারনা চালাচ্ছে বিএনপি। ১৯৭০ সালের জাতীয় নির্বাচন থেকে শুরু করে চা বাগান শ্রমিক ভোটার এখন পর্যন্ত আওয়ামীলীগের প্রতীক নৌকায় ভোট দিয়ে যাচ্ছে। চা শ্রমিকদের ধারণা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই তাদের ভোটাধিকার দিয়েছিলেন। এই বিশ্বাসে চা বাগান শ্রমিক ভোটার হচ্ছেন আওয়ামীলীগের ব্যাংক। কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গল উপজেলায় প্রায় ৯০ হাজারের বেশী চা শ্রমিক ভোট। এ ভোট ব্যাংকের ৯৫ শতাংশই আওয়ামীলীগ পেয়ে থাকে। অবশ্য চা শ্রমিক ইউনিয়ন নির্বাচনে আওয়ামী সাংসদ এম এ শহীদের ভূমিকাসহ নানা কারণে পর্যায়ক্রমে এখন আওয়ামী ভোট ব্যাংক চা শ্রমিকদের প্রায় ১০ শতাংশ নৌকা প্রতীকের বাইরে চলে যাচ্ছে। তাছাড়া এ আসনের সংখ্যালঘু ভোটের প্রায় শতভাগই নৌকার পক্ষে ছিল। এখন এ ভোটে কিছুটা ফাটল ধরেছে বলে মনে হচ্ছে। এ আসনের আওয়ামীলীগের ষষ্ঠবারের প্রার্থী এম এ শহীদ এবার ভোট ব্যাংক চা শ্রমিক ভোটারদের শতভাগ ভোট ধরে রেখে নৌকার পক্ষে নিয়ে নিতে সবচেয়ে বেশী গণসংযোগ ও প্রচারণা চালাচ্ছেন চা বাগান সমূহে। প্রতিবারের ন্যায় এবারও সংখ্যালঘু ভোট ধরে রাখারও জোর চেষ্টা করছেন তিনি। সাথে সাথে গ্রামাঞ্চল থেকে আরও বেশী ভোট নৌকার পক্ষে নিতে সুসংগঠিত দল গঠন করে জোর প্রচারনা চালাচ্ছেন। অন্যদিকে মৌলভীবাজার-৪ আসনে গ্রামাঞ্চলে বিএনপির প্রতীক ধানের শীষের ভোট ব্যাংক। কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গল উপজেলায় সরেজমিন ঘুরে ধারনা করা যাচ্ছে এবার একাদশ সংসদ নির্বাচনে গ্রামে আগের চেয়ে ধানের শীষের ভোট বেড়ে যাবে। বিএনপি ভোট ব্যাংক গ্রামকে ধরে রেখে বিগত ৫ বারের নির্বাচন ও নির্বাচন পরবর্তী আওয়ামীলীগের নানা ত্রুটি বিচ্যূতি তুলে ধরে আওয়ামী ভোট ব্যাংক চা বাগানে ভাঙ্গন ধরাতে চাচ্ছে। চা বাগান এলাকা ঘুরে ভোটারদের সাথে কথা বলে ধারণা করা যাচ্ছে নৌকার ভোট ব্যাংক চা বাগানে ভাঙ্গনটি কিছুটা বড় আকার ধারণ করেছে। এ সুযোগ নিতে মরিয়া হয়ে প্রচারনায় ব্যস্ত বিএনপি। প্রচন্ড শীত উপেক্ষা করে দিন রাত অবিরাম জনসংযোগ,উঠান বৈঠক করে নিজের প্রতীকে ভোটারদের কাছ ভোট প্রার্থনা করছেন আওয়ামীলীগ ও বিএনপির প্রার্থী ও নেতাকর্মীরা। কমলগঞ্জ উপজেলা যুবলীগ যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল মালিক বলেন, ভোট ব্যাংক চা বাগানের ভোট ও সংখ্যালঘুর ভোট ভাঙ্গার কোন সুযোগ নেই। তারা সব সময় নৌকার পক্ষে ভোট দিয়েছে। এবারও নৌকার পক্ষে ভোট দিবে। তিনি আরও বলেন, এবার গ্রামাঞ্চলেও নৌকার ভোট বেড়েছে। বিএনপির প্রার্থী হাজী মুজিবুর রহমান চৌধুরী বলেন, গ্রামাঞ্চলে কমপক্ষে ৭০ শতাংশ ধানের শীষের ভোট রয়েছে। নির্বাচনী প্রচারণার সাথে নৌকার নেতাকর্মীরা যে আচরণ করছেন তাতে গ্রামের ভোটারদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। আর চা বাগানে এবার ধানের শীষের পক্ষে অনেক ভোট বেড়েছে। তবে ভোটাররা আতঙ্কে আছেন। এখন সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ও ভোটাররা বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের ভোটাররা ভোট দিতে পারলে ফলাফল তার পক্ষে আসবে। মৌলভীবাজার-৪(কমলগঞ্জ-শ্রীমঙ্গল) আসনে এবার ভোটের লড়াইয়ে ৫ জন প্রার্থী মনোনয়ন দিলেও একজন মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিলে ৪জন নির্বাচনে ছিলেন। সে হিসেবে ব্যালটেও ৪ জনের নাম ও প্রতীক রয়েছে। অতি সম্প্রতি গণ ফোরমের প্রার্থী অ্যাড. শান্তিপদ ঘোষ সংবাদ সম্মেলন করে কাউকে সমর্থন না জানিয়ে শেষ পর্যন্ত নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। এখন নির্বাচনী মাঠের লড়াইয়ে ৩ জন প্রার্থী প্রতিদন্ধিতা করছেন। তারা হচ্ছে আওয়ামীলীগ থেকে ৫ বারের সাংসদ মো. আব্দুস শহীদ (নৌকা),বিএনপি থেকে আলহাজ্ব মুজিবুর রহমান(ধানের শীষ) ইসলামী আন্দোলনের বাংলাদেশের মাওলানা সালাহ্ উদ্দিন (হাতপাখা)। এই আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৯৮ হাজার ৯৩৫। কমলগঞ্জে ১ লাখ ৭৯ হাজার ৪শ ও শ্রীমঙ্গলে ২ লাখ ১৯ হাজার ৫৩৫ জন। কমলগঞ্জে ৭২ও শ্রীমঙ্গলে ৮০টি ভোট কেন্দ্র রযেছে। আসনটিতে ৩ জন প্রতিদন্ধীতা করলে ও মূল লড়াই হবে আওয়ামীলীগ ও বিএনপির প্রার্থীর মধ্যে। এছাড়া ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মাওলানা মোহাম্মদ সালাহ্ উদ্দীনকে কয়েকজন সমর্থককে সাথে নিয়ে কোথাও -কোথাও প্রচারণার কার্যক্রম চালিয়ে যেতে দেখা গেছে। প্রচন্ড শীত উপেক্ষা করে দিনরাত সমান তালে আওয়ামীলীগ ও বিএনপির প্রার্থী নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছে। তবে শুধুমাত্র আওয়ামীলীগ উঠান বৈঠক ও গন সংযোগের মাধ্যমে নিজের পক্ষে ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করছেন। সর্বশেষ গ্রেফতার আতঙ্কে দলী নেতাকমীদের সাথে রাখতে পারছেন না বিএনপি প্রাথী হাজী মুজিব। তিনি নিজে নিজে প্রচারণা চালাচ্ছেন। করতে পারছেন না কোন উঠান বৈঠক ও কর্মী সভা।
আওয়ামীলীগের ভোট ব্যাংক চা বাগানে বিএনপি হানা দিতে চায়
