বিশেষ প্রতিনিধিঃ
মৌলভীবাজারে গ্রেফতার আতংকে ঘর বাড়ি ছাড়া বিএনপি’র নেতৃত্বাধীন জোটের নেতাকর্মী। জেলার ৪টি আসনে ধানের শীষের গনসংযোগ করতে স্থানে স্থানে বাঁধা, হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগ করছেন ঐক্যফ্রন্ট মনোনীত ধানের শীষের প্রার্থীরা। এ পর্যন্ত পুলিশ অভিযান চালিয়ে পুরো জেলা থেকে বিএনপি ও জোটের সক্রিয় ৭০ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে। এর মধ্যে বিশেষ ক্ষমতা আইন মামলায় কুলাউড়া উপজেলার ৫ জনকে ১ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। নারী নির্যাতন মামলায় (মামলা নং ১৯) কুলাউড়া উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও জয়চন্ডি ইউপি চেয়ারম্যান কমর উদ্দিন আহমদ কমরুকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এদিকে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার বরাবরে লিখিত আবেদন করেছেন মৌলভীবাজার-৪ (শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ) আসনে ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হাজী মুজিবুর রহমান চৌধুরী।
গ্রেফতার, পুলিশি হয়রানি বন্ধ এবং গায়েবী মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে জেলা বিএনপির সভাপতি ও মৌলভীবাজার-৩ (সদর ও রাজনগর) আসনে ধানের শীষের প্রার্থী এম নাসের রহমান গত ১৩ ডিসেম্বর মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন। এ বিষয়ে তিনি নির্বাচন কমিশন ও জেলা রিটার্নিং অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন।
এদিকে গ্রেফতারহীন ও স্বাধীনভাবে নৌকার প্রার্থীরা জেলা ব্যাপি প্রচারণায় সরব। এপর্যন্ত জেলার কোথায়ও আ’লীগ বা নৌকার কোনো কর্মী গ্রেফতারের খবর পাওয়া যায়নি। অনেকটা ফুরফুরা মেজাজে জেলা ব্যাপি প্রচারণায় নেতাকর্মীরা। এ পর্যন্ত গণসংযোগে কোথায়ও বাঁধার অভিযোগ করেননি নৌকার প্রার্থীরা। তবে মৌলভীবাজার ০২- আসনে কুলাউড়া উপজেলার ডোলি পাড়া বাজারে ১৬ ডিসেম্বর রাত ৮টায় ধানের শীষের সমর্থকরা হামলা চালিয়ে নৌকার প্রার্থী এম এম শাহীনের অফিস ভাঙচুর করার অভিযোগ উঠে। এম এম শাহীনের সমর্থকরা বলছেন এ হামলায় নৌকার ৫ সমর্থক আহত হয়েছেন। ১৬ ডিসেম্বর রাতে ৪০/৫০ জনকে আসামী করে ওই ঘটনায় কুলাউড়া থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে (মামলা নং-১৯)। তবে ধানের শীষের প্রার্থী এ হামলার অভিযোগ অস্বীকার করছেন।
গনসংযোগে বাঁধা ও ভাঙচুরের বিষয়ে জেলা বিএনপি নেতা মোয়াজ্জেম হোসেন মাতুক প্রতিবেদককে জানান, মৌলভীবাজার-৩ আসনের সদর উপজেলার কদুপুর, অলহা, শেরপুর, খলিলপুর, সরকারবাজার এবং রাজনগর উপজেলার খেয়াঘাট, পাঁচগাঁওসহ আরো কয়েক জায়গায় ধানের শীষের পোষ্টার ছিড়ে ফেলেছেন নৌকার নেতাকর্মীরা। এ দিকে মৌলভীবাজার-৪ আসনে ১৭ ডিসেম্বর বিকাল সোয়া ৫টার দিকে নির্বাচনী প্রচারণা শেষ শ্রীমঙ্গল থেকে কমলগঞ্জ ফেরার পথে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান এলাকায় একদল যুবক বিএনপি প্রার্থী মুজিবের ছেলে মুঈদ আশিক চিশতী’র গাড়ীতে হামলার অভিযোগ উঠেছে। ১২ ডিসেম্বর রাত ৮টার দিকে শ্রীমঙ্গল উপজেলার পূর্ব বিরাইমপুরে ধানের শীষের নির্বাচনী সভা শুরুর পূর্ব মূহুর্তে হামলা হয়। বিএনপি নেতাদের দাবি যুবলীগ ও শ্রমিকলীগের নেতাকর্মীরা এ হামলা চালায়। এবিষয়ে মৌলভীবাজার-৪ (কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গল) আসনে বিএনপি প্রার্থী মুজিবুর রহমান চৌধুরী বলেন, ধানের শীষের নির্বাচনী সভায় যুবলীগ ও শ্রমিক লীগের ৪০/৫০ জনের একটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী দল হামলা চালিয়ে মাইক, চেয়ার ও মঞ্চ ভাংচুর করে। তবে এ ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি। আওয়ামীলীগ ও অঙ্গ সংগঠনের কিছু নেতাকর্মীর বাঁধার মুখে একই আসনের কমলগঞ্জ উপজেলায় ১৫ ডিসেম্বর ধানের শীষের ৩টি উঠান বৈঠক পন্ড হয়। তিনি আরোও বলেন, নির্বাচনী প্রচারনায় যাতায়াতের পথে হেলমেটধারী অজ্ঞাত কিছু মটরবাইক তার গাড়ীকে অনুসরন করে যে কারনে তিনি ও তার নেতাকর্মীরা নিরাপত্তীহীনতায় ভুগছেন। তার পোস্টার ছিঁড়ে একই স্থানে প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থী আওয়ামীলীগের পোস্টারও লাগানো হচ্ছে।
জেলা বিএনপি’র নেতারা বলেন, পুলিশ বিএনপি ও জোটের নেতাকর্মীদের বাড়িতে গভীর রাতে অভিযান চালিয়ে বড়লেখা উপজেলা থেকে ৮, জুড়ী থেকে ৭, কুলাউড়া থেকে ১০, কমলগঞ্জ ১, সদর থেকে ১২ এবং শ্রীমঙ্গল উপজেলা থেকে ৩২ জনকে গ্রেফতার করেছে। পরে বিভিন্ন মামলা দেখিয়ে তাদেরকে কারাগারে পাঠানো হয়। এবিষয়ে মৌলভীাজার জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাহ জালাল যুগান্তরকে বলেন, যাদেরকে আটক করা হয়েছে তাদের প্রত্যেকের উপর মামলা আছে। অহেতুক কাউকে হয়রানি করা হচ্ছে না। তবে জেলা বিএনপির অভিযোগ পুলিশ আ’লীগ নেতাকর্মীদের ইশারায় সম্পূর্ণ অন্যায় ভাবে নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করছে।
আটককৃত নেতাকর্মীদের পরিবারের অভিযোগ, অতি উৎসাহি কিছু পুলিশ কর্মকর্তা নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনাকে অমান্য করে মামলা নেই এমন ব্যক্তিকেও গ্রেফতার করছে।
এ বিষয়ে কুলাউড়া উপজেলার পাবই থেকে গ্রেফতার হওয়া জামিল রহমানের বড় ভাই মাহিরুল ইসলাম বলেন, আমার ছোট ভাই মৌলভীবাজার সরকারি কলেজের মাষ্টার্সের শিক্ষার্থী। তার বিরুদ্ধে থানায় কোনো মামলা নেই। তারপরেও রাত ২টায় বাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
এবিষয়ে জেলা বিএনপি’র সভাপতি এম নাসের রহমান বলেন, গ্রেফতার বন্ধের জন্য জেলা রিটানিং অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে এবং পুলিশ সুপারের সাথে দেখা করে বিষয়টি অবগত করেছি।
গ্রেফতার আতংকে বিএনপি ফুরফুরা মেজাজে আ’লীগ
