উমর ফারুক টিপু:
ধূমপান নির্মল পরিবেশকে দূষিত করে। এর ফলে স্ত্রী-পরিজন, সহযাত্রী, বন্ধু-বান্ধব ও আশে-পাশের লোকজনের কষ্ট হয়ে থাকে।
বাসে, ট্রেনে ও অন্যান্য যানবাহনে প্রকাশ্যে ধূমপান করার ফলে অনেক সহযাত্রী নীরবে কষ্ট সহ্য করে মনে মনে ধূমপায়ীকে অভিশাপ দেন। আবার কেউ প্রতিবাদ করে বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়ে যান। অনেকে প্রতিবাদ করতে গিয়ে অপমানিত হন।
কখনো ধূমপানকারীরা ধোঁয়ালো কন্ঠে বলে উঠে একটা গাড়ী বা ট্রেন কিনে তাতে আলাদাভাবে চলাফেরা করলেই হয়। কেউ কেউ আবার এও বলেন যে, ‘মনে হয় গাড়ীটা উনি নিজেই কিনে নিয়েছেন বা গাড়ীটা মনে হয় তার বাবার’।
জেনে রাখা উচিত, চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে, ধূমপানকারীর প্রতিবেশী শারীরিকভাবে ধূমপায়ীর মতই ক্ষতিগ্রস্থ হন। হাদীসে প্রতিবেশীকে কষ্টদানকারী ব্যক্তি জাহান্নামে যাবে বলে হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করা হয়েছে।
আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلاَ يُؤْذِىْ جَارَهُ ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখেরাতে বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়’ (বুখারী হা/৪৭৮৭; মুসলিম হা/৬৮)।
উল্লিখিত মন্দ দিকগুলো প্রমাণ করে যে, ধূমপান অতীব ক্ষতিকর। এ ব্যাপারে দুনিয়ার সুস্থ বিবেক সম্পন্ন প্রতিটি মানুষ একমত।
আল্লাহ বলেন, وَيُحِلُّ لَهُمُ الطَّيِّبَاتِ وَيُحَرِّمُ عَلَيْهِمُ الْخَبَآئِثَ ‘তিনি তোমাদের জন্য হালাল করে দেন ভাল ও উত্তম বস্তু, আর হারাম করে দেন খারাপ ও ক্ষতিকর বস্তুগুলো’ (আ‘রাফ ৭/১৫৭)।
আলোচ্য আয়াতে ক্ষতিকর বস্তুগুলো হারাম করা হয়েছে। সুতরাং ধূমপানকে ইসলাম অনুমোদন করে না।
আল্লাহ আরো বলেন, وَلاَ تُلْقُواْ بِأَيْدِيْكُمْ إِلَى التَّهْلُكَةِ ‘তোমরা নিজেদের জীবনটাকে ধ্বংসের সম্মুখীন করো না’ (বাক্বারাহ ২/১৯৫)।
এ আয়াতও প্রমাণ করে যে, ধূমপান নিষেধ। কেননা ধূমপান মানুষের জীবনকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়। অধিকাংশ ধূমপানকারী ব্যক্তি মারাত্মক দূরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুমুখে পতিত হয়।
কেউ কেউ বলেন যে, ধূমপানের মাঝে কিছু ভাল দিকও আছে। যেমন সাময়িক চিন্তামুক্তি ও ক্লান্তি দূর করা ইত্যাদি। কিন্তু এই কারণে যদি ধূমপান বৈধ হয়। তাহ’লে মদ, জুয়া ইত্যাদিও বৈধ হবে। কেননা তাতেও রয়েছে কিছু ভাল দিক।
আল্লাহ বলেন,
يَسْأَلُوْنَكَ عَنِ الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ قُلْ فِيْهِمَا إِثْمٌ كَبِيْرٌ وَمَنَافِعُ لِلنَّاسِ وَإِثْمُهُمَا أَكْبَرُ مِن نَّفْعِهِمَا
‘তারা আপনাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। বলুন, উভয়ের মধ্যে রয়েছে মহাপাপ। আর তার মধ্যে মানুষের জন্য উপকারিতাও আছে। তবে উপকারের চেয়ে এগুলোর পাপ বড়’ (বাক্বারাহ ২/২১৯)।
আল্লাহ তাআলার এ বাণী দ্বারা বুঝা যায় যে, মদ-জুয়ার মধ্যে উপকারিতা থাকা সত্ত্বেও তা হারাম করা হয়েছে। ধূমপান তো মদ-জুয়ার চেয়েও জঘন্য। কারণ এতে কোন ধরনের উপকারিতা নেই। বরং ১০০ একশ ভাগই ক্ষতি।
আবার ধূমপানের সাথে জাহান্নামের খাবারের একটা সাদৃশ্য রয়েছে। যেমন- আল্লাহ জাহান্নামীদের খাদ্যের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, لاَ يُسْمِنُ وَلاَ يُغْنِيْ مِنْ جُوْعٍ ‘জাহান্নামের খাবার জাহান্নামীদের পুষ্টিও যোগাবে না ক্ষুধাও নিবারণ করবে না’ (গাশিয়াহ ৮৮/৭)।
ধূমপান তথা বিড়ি, সিগারেট, চুরুট কিংবা তামাক, জর্দা, গুল ইত্যাদিও সেবনকারীর জন্য কোন প্রকার পুষ্টির যোগান দেয় না, ক্ষুধাও নিবৃত্ত করে না।
অতএব আসুন! আমরা সকলে মিলে আমাদের সমাজকে ধূমপান মুক্ত করার আপ্রাণ চেষ্টা করি।
আল্লাহ আমাদের তাওফীক্ব দান করুন- আমীন!!
সমাপ্ত
লেখক: সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও কলামিষ্ট