বিশেষ প্রতিনিধিঃ
মৌলভীবাজার জেলা সমবায় অফিস থেকে নামে বেনামে সমবায় সমিতির অনুমোদন নিয়ে চলছে রমরমা দাদন বাণিজ্য। আবার তালিকাভোক্ত মৎসজীবি না হয়েও জেলার বিভিন্ন এলাকায় মৎসজীবি সমিতি’র রেজিষ্ট্রেশন দেয়া হচ্ছে বড় অংকের টাকার বিনিময়ে। এজন্য উপজেলা সমবায় কর্মকর্তরা অলিখিত ভাবে বড় অংকের একটি ফিও নির্ধারন করে রেখেছেন। সব মিলিয়ে মৌলভীবাজার জেলা সমবায় অফিসে অনুমদিত সমিতি নিয়ে চলছে বাণিজ্য।
সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে রেজিষ্ট্রেশনকৃত সমিতির সদস্যদের জীবনমান উন্নয়নের কথা থাকলেও তাতেও রয়েছে বড় ধরনের গাফলতি। এবিষয়ে সমিতির একাধিক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সাথে কথা হলে তারা বলেন, ভ্রাম্যমান প্রশিক্ষণে কোনো কোয়ালিটি ম্যানটেইন করা হয়নি। সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ ও ব্রাক্ষবাড়িয়ার সমবায়ীদের প্রশিক্ষণের জন্য এজেলায় একটি আঞ্চলিক সমবায় প্রশিক্ষণ ইনিস্টিটিউট রয়েছে। ওই ইনিস্টিটিউটে ৫ দিনের প্রশিক্ষণের জন্য জনপ্রতি সরকারি ভাবে বরাদ্দ থাকে ২ হাজার ৫’শত টাকা। কিন্তু এখান থেকে দুই বেলা খাবার বাবত প্রশিক্ষণার্থীদের কাছ থেকে ১২’শত টাকা কেটে রাখা হয়। খাবারের মান নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন।
জেলা সমবায় অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলা সমবায় অফিসের অনুমদিত সমিতির সংখ্যা ৩ হাজার ৯৮টি। এর মধ্যে সরাসরি জেলা সমবায় অফিসের অধিনে রেজিষ্ট্রেশনকৃত সমিতি ৭৪৩টি, এলজিইডি’র আওতায় ৩৮টি, বার্ড এর আওতায় ৬০টি, মিল্ক ভিটা এর আওতায় ২টি, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আওতায় ১০টি, সমবায় ব্যাংক এর অধিনে ৮টি, কালবভুক্ত এর আওতায় ৭টি, কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধিনে ২৯৬টি, প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধিনে ৫৮টি, মৎস সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধিনে ৮৯টি, ক্ষুদ্র নৃ তাত্ত্বিক জনগোষ্টির জীবন যাত্রার মান উন্নয়নে প্রকল্পে সমবায় সমিতি রয়েছে ১৮টি ও বিআরডিবির অধিনে রয়েছে ১০২৬টি। এর মধ্যে নিস্ক্রিয় রয়েছে ৬৪৯টি সমিতি।
প্রতিবেদক পরিচয় গোপন রেখে রাজনগর উপজেলা সমবায় অফিসে মৎসজীবি সমবায় সমিতির রেজিষ্ট্রশন আনতে যোগাযোগ করলে অফিস স্টাফ বলেন, ৩০/৪০ হাজার টাকা লাগবে। এভাবে টাকার বিনিময়ে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় যারা মৎসজীবি নয় তাদেরকেও সমিতির অনুমতি দেয়া হচ্চে। এনিয়ে প্রকৃত মৎসজীবিদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। রাজনগরের এক সচেতন নাগরিক বলেন, অনুমদিত মৎসজীবি সমিতির প্রায় ৯০ ভাগের উপরে মৎসজীবি নয় কিন্তু টাকার বিনিময়ে তাদের অনুমতি দেয়া হয়েছে।
পরিচয় গোপন রাখার শর্তে জেলা সমবায় অফিস থেকে অনুমদিত একাধিক সমিতির সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক বলেন, সমবায় ব্যাংক থেকে ঋণ তুলার জন্য অনেক টাকা ব্যয় করে এবং সমবায়ের বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করেও ঋণ তুলতে পারিনি। কিন্তু তাদের অভিযোগ জেলা সমবায় ব্যাংক অফিসার মনিরুজ্জামান টাকার বিনিময়ে সমিতির সদস্যদের বাহিরেও অনেক লোককে ঋণ দিয়েছেন।
সদর উপজেলার সরকার বাজার এলাকার একাধিক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, বরাক সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতির নাম ভাঙ্গিয়ে সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমদ দীর্ঘ দিন ধরে রমরমা সুদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। সরকার বাজার এলাকায় রয়েছে তার একক আধিপত্য। অভিযোগ রয়েছে তার কাছ থেকে সুদে টাকা নিয়ে সর্বশান্ত হয়েছেন অনেক। একই ভাবে জেলার রাজনগর উপজেলার পাঁচগাঁও, মুন্সিবাজার, টেংরাবাজার, তারাপাশা ও রাজনগর বাজারেও সমিতির নাম ভাঙ্গিয়ে সুদের ব্যবসা পরিচালিত হচ্ছে। অথচ বিয়টি জানানেই জেলা সমবায় কর্মকর্তা।
এবিষয়ে জেলা সমাবায় অফিসার দৌলত হোসেন বলেন, সমিতির অনুমোদন নিয়ে সুদে টাকা দেয়া হয় এধরনের কোনো অভিযোগ এখনও আসেনি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। সমিতির রেজিষ্ট্রেশন দিতে বাড়তি টাকার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।
মৌলভীবাজারে নামে বেনামে সমিতির অনুমোদন নিয়ে দাদন ব্যবসা
