হোসাইন আহমদঃ
তৃতীয় ধাপের আগামী ৩০ জানুয়ারীর মৌলভীবাজার পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলার পদে মনোনয়ন জমাকারী দুই তৃতীয়াংশ প্রার্থী এসএসসি’র গন্ডি পেরোতে পারেননি। এর মধ্যে অধিকাংশই স্বশিক্ষিত। আবার কেউ কেউ পঞ্চম, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণী উত্তির্ণ। প্রার্থীদের এমন নাজেহাল শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে শহরের সচেতন ভোটার ও জনসাধারণের মধ্যে কৌতুহল বিরাজ করছে।
প্রার্থীর গ্রহণযোগ্যতার ক্ষেত্রে তার রাজনৈতিক অতীত, জনসম্পৃক্ততা, জনসেবার পাশাপাশি আমাদের দেশে ‘শিক্ষা’ একটি গুরুত্বপূর্ণ মাপকাঠি। দুর্ভাগ্যবশত যদিও শিক্ষিত ও মেধাবী রাজনীতিকের সংখ্যা দিন দিন কমেই যাচ্ছে। কেবল শিক্ষা ও মেধার ঘাটতি নয়, দেশ ও সমাজের প্রতি অঙ্গীকার, জনসাধারণের প্রতি সমীহ, জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাও কমে যাচ্ছে জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে।
মৌলভীবাজার পৌরসভা নির্বাচনে কাউন্সিলারদের হলফনামা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, মেয়র পদে ৩জন, কাউন্সিলার পদে ২২ জন এবং সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলার পদে ১০ জন প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে মেয়র পদে ১ জন অষ্টম শ্রেণী উত্তির্ণ, কাউন্সিলার পদে ৮ জন স্বশিক্ষিত, পঞ্চম শ্রেণী উত্তির্ণ ৩, সপ্তম ৩, অষ্টম ৯, এসএসসি ১ ও এইচএসসি উত্তির্ণ ৪ জন। বাকী ৩ জন কাউন্সিলর প্রার্থী উচ্চ শিক্ষিত।
মেয়রঃ বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মোঃ অলিউর রহমান মাত্র অষ্টম, ক্ষমতাসীন দলের মনোনীত প্রার্থী বর্তমান মেয়র মোঃ ফজলুর রহমান এইচএসসি ও আওয়ামীলীগ স্বতন্ত্র প্রার্থী সাইফুর রহমান বাবুল বি কম।
সদর উপজেলা নির্বাচন অফিসে দেয়া প্রার্থীদের হলফনামা পর্যালোচনা করে দেখা যায়।
১ নং ওয়ার্ড ঃ এ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী ৫ জন। এদের মধ্যে স্বশিক্ষিত পারভেজ চৌধুরী, মো. ওয়াহিদ ও শহিদ মিয়া। এছাড়া পার্থ সারথী পালের শিক্ষাগত যোগ্যতা এলএলএম ও শাশ্বত ব্রক্ষ্র রণী উচ্চ মাধ্যমিক পাশ।
২ নং ওয়ার্ডঃ আসাদ হোসেন মক্কু বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। তবে তিনি হলফনামায় শিক্ষাগত যোগ্যতা উল্লেখ করেছেন মাত্র নবম শ্রেণী।
৩নং ওয়ার্ডঃ এ ওয়ার্ডে প্রার্থী রয়েছেন দুই জন। বর্তমান কাউন্সিলর মোহাম্মদ নাহিদ হোসেন সপ্তম শ্রেনী ও মো. রুবেল আহমদ স্বশিক্ষিত।
৪নং ওয়ার্ডঃ এ ওয়ার্ডে প্রার্থী রয়েছেন ৩ জন। এদের মধ্যে সালেহ আহমদ- অষ্টম শ্রেনী, সুমেশ দাশ ¯œাতক ও মনবীর রায়- এর শিক্ষাগত যোগ্যতা বি.এ।
৫নং ওয়ার্ডঃ এ ওয়ার্ডে প্রার্থী রয়েছেন ৩ জন। এরা মধ্যে ফয়সল আহমদ স্বশিক্ষিত, দেলওয়ার হোসেন সপ্তম ও মো. আবুল কাশেম অষ্টম শ্রেনী উত্তির্ণ।
৬নং ওয়ার্ডঃ এ ওয়ার্ডে প্রার্থী রয়েছেন ৩ জন। এর মধ্যে বর্তমান কাউন্সিলর জালাল আহমদ সপ্তম, মো. শাহিন মিয়া ও শামীম আহমদের শিক্ষাগত যোগ্যতা অষ্টম শ্রেনী পর্যন্ত।
৭নং ওয়ার্ডঃ এ ওয়ার্ডে প্রার্থী রয়েছেন ৩ জন। এর মধ্যে বর্তমান কাউন্সিলর আনিসুজ্জামান বায়েছ মাধ্যমিক, মো. লাভলু আহমদ স্বশিক্ষিত ও শহিদুল ইসলাম অষ্টম শ্রেনী।
৮নং ওয়ার্ডঃ এ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী ৩ জন। এ মধ্যে সৈয়দ সেলিম হক স্বশিক্ষিত, সাজ্জাদ আহমদ উচ্চ মাধ্যমিক ও সৈয়দ মমসাদ আহমদ পঞ্চম শ্রেনী।
৯নং ওয়ার্ডঃ এ ওয়ার্ডে ২ জন প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিয়ে ছিলেন। পরবর্তীতে ত্রুটিগত কারণে নির্বাচন কমিশন উভয় প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল করে।
১, ২ ও ৩ নং সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ডঃ এ সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৫ জন প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে আসমা অক্তার (সাংবাদিক এ এস কাকন) স্বশিক্ষিত, রুপবান বেগম পঞ্চম, শ্যামলী সুত্র ধর- অষ্টম, নাজমা বেগম উচ্চ মাধ্যমিক ও নুরুন নাহার উচ্চ মাধ্যমিক।
৪, ৫ ও ৬ নং সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ডঃ এ সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ২ জন প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে শ্যামলী দাশ পুরকায়স্থ মাধ্যমিক ও জাহানারা বেগম পঞ্চম শ্রেনী।
৭, ৮ ও ৯ নং সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ডঃ এ সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৩ জন প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে জিমি আক্তার, পারভিন আক্তার ও শিল্পী বেগম তিনজন প্রার্থীই অষ্টম শ্রেণী উত্তির্ণ।
এনিয়ে পৌর শহরের একাধিক ভোটারের সাথে কথা হলে তারা বলেন, সুশিক্ষিত প্রার্থী ছাড়া নির্বাচনী এলাকার উন্নয়ন কোনো অবস্থাতেই সম্ভব নয়। জনগনের সেবক হতে হলে শিক্ষারও প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু মৌলভীবাজার পৌরসভায় কাউন্সিলার প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতার এমন দূরাবস্থা দেখে আমরাই অনেকটা লজ্জিত।
মৌলভীবাজার শিক্ষা ও সামাজিক উন্নয়ন ফোরামের সভাপতি মোঃ আবু তাহের বলেন, আমরা দীর্ঘ দিন যাবত দাবি করে আসছি যারাই নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করবে তাদের নি¤œতম একটি শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ করা প্রয়োজন। কিন্তু সেটা হচ্ছে না। শিক্ষিগত লোক ছাড়া কোনো অবস্থাতেই জনগণের উন্নয়ন সম্ভব নয়। তথ্য প্রযুক্তির এ যোগে শিক্ষা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই শিক্ষিত লোকদের নির্বাচনে অংশ গ্রহণে আগ্রহী করে তুলতে হবে।
শিক্ষাবিদ মোঃ সিতাব আলী বলেন, এটা গণতন্ত্রের জন্য হুমকি স্বরূপ ও অসনী সংক্ষেত। এ ধরনের যোগ্যতা দিয়ে জনগণের সেবক হওয়া যায় না। স্থানীয় নির্বাচনে শিক্ষাগত যোগ্যতা নূন্যতম উচ্চ মাধ্যমিক করার দাবি তুলেন তিনি।
এবিষয়ে নির্বাচনে অংশ গ্রহণকারী পঞ্চম, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণী উত্তির্ণ একাধিক প্রার্থীর সাথে কথা হলে তারা বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাগত যোগ্যতা খুব বেশি না থাকলেও আমাদের বাস্তব অভিজ্ঞতা রয়েছে। সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে জনগণের সেবা করতে পারব।