মোহাম্মদ আবু তাহের
ঈদ মোবারক দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর সোমবার ২৫ মে বাংলাদেশের মুসলমানরা ঈদ উদযাপন করছেন|ঈদ মানেই আনন্দ|ঈদ মানে খুশির দিন|এবছর বাংলাদেশসহ বিশ্বের মুসলমানরা ভিন্ন প্রেক্ষাপটে ভিন্ন পরিবেশে ঈদ উদযাপন করছেন|বিশ্বের অনেক দেশের মুসলমানদের ঘরেই ঈদের নামাজ পড়তে হচ্ছে|সৌদি আরবের গ্রান্ড মুফতি ঈদের নামাজ ঘরে আদায় করা যাবে বলে ফতোয়া দিয়েছেন| বাংলাদেশের মুসলমানরা এবার ঈদের জামাত ঈদের মাঠে না পড়ার জন্য সরকারি নির্দেশনা রয়েছে| আমরা যারা মসজিদে নামাজ পড়তে যাব আমরা অবশ্যই সর্বোচ্চ সর্তকতা অবলম্বন করবো | মনে রাখতে হবে ঈদের নামাজ বড় জামাতে পড়ার চেয়ে এ মুহূর্তে ঈদের নামাজের চেয়ে জীবন বাঁচানো বড় ফরজ হয়ে দাঁড়িয়েছে| কুলাকুলি, হাত মিলানো (মুসাফা) সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে চলতে হবে, অহেতুক বাইরে ঘুরাঘুরি করা যাবেনা, আত্মীয়স্বজনের বাসায় বেড়াতে না গিয়ে ফোনে বা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তাদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে | বেঁচে থাকলে সবসময়ই বেড়ানো যাবে| এবার ঈদে বেড়াতে না গেলেই অসামাজিক হয়ে যাব না| এবারের ঈদ অন্য বছরের মতো নয় |করোনা ভাইরাসের কারণে গোটা জাতি আজ বিপর্যস্ত | অন্যদিকে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাতে লন্ডভন্ড হয়েছে দেশের লক্ষ কোটি মানুষ | ঈদের আনন্দ একা ভোগ করা যায় না, ধনী দরিদ্র সবাই মিলেই ঈদের আনন্দ করতে হয়| এটা ইসলামের শিক্ষা| এ কারণেই ধনীদের জন্য যাকাত ও ফিতরা আদায় করা অবশ্য কর্তব্য| ঈদ বাংলাদেশের জন্য একটি ধর্মীয় উৎসব হলেও এর একটি বাণিজ্যিক দিক ও রয়েছে | গত বছরের পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে ঈদের অর্থনৈতিক লেনদেন প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা| এ বছর এতো বিশাল অর্থনৈতিক লেনদেনের চিন্তাও করা যায় না |দেশের বড় বড় শপিংমল গুলো বন্ধ রয়েছে| আমাদের মৌলভীবাজারের বিভিন্ন বড় বড় প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে | যেখানে ঈদকে উপলক্ষ করে কোটি কোটি টাকার অর্থনৈতিক লেনদেন হতো| এখন সমাজের মধ্যবিত্ত শ্রেণী ও জীবনজীবিকা নিয়ে মহা চিন্তিত | লাগাতার তিন মাস লকডাউন থাকায় দেশের কোটি কোটি মানুষ কর্মহীন হওয়ার কারণে ঈদের আনন্দ তারা উপভোগ করতে পারবেন না | প্রায় প্রতিদিনই করোণা সংক্রমণ ও মৃত্যুর নতুন রেকর্ড হলেও ঈদের কেনাকাটায় মানুষের ভিড় দেখা গেছে | ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বড় বড় শপিংমল বন্ধ থাকলেও ছোট ছোট বিপণিবিতানগুলোতে ভিড় করছেন বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ | অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় নতুন কাপড় ছাড়া যেন ঈদই হবে না| অথচ সরকার ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বর্তমান পরিস্থিতিতে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে থাকাটা নিরাপদ মনে করছেন না|আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় অনেক মানুষই মুখে মাক্স ব্যবহার করছেন না| বজার রাখছেন না শারীরিক দূরত্ব| এমতাঅবস্থায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে আরও কঠোর ভূমিকা পালন করা দরকার বলে মনে করি| দেশের মানুষের জন্য এমন নিরানন্দের ঈদ কখনো আসেনি |বিশেষজ্ঞরা বলেছেন সবকিছু স্বাভাবিক হতে কমপক্ষে এক বছর লাগবে| এমতাবস্থায় আমাদের আশা নিয়ে বাঁচতে হবে, আল্লাহতালার উপর ভরসা রাখতে হবে, হতাশ হওয়া যাবে না, করোনা বা আম্পান যাই হোক না কেন আমাদেরকে ধৈর্য ধারণ করতেই হবে | সকলকে ধৈর্য্যের পরীক্ষা দিতে হবে| যার যার অবস্থান থেকে অভাবীদের সাহায্য সহযোগিতা ও করতে হবে| ইনশাল্লাহ করোণা ভাইরাসের মহাদুর্যোগ থাকবে না| মহান আল্লাহ তা’আলা সূরা আল-ইমরানের ২০০ নম্বর আয়াতে ঘোষণা করেছেন হে মুমিনরা ধৈর্য্য ধারণ কর, ধৈর্য্য অবলম্বনের প্রতিযোগিতা কর ও সদা প্রস্তুত থাকো, আল্লাহকে ভয় করো যেন সফল হতে পারো|
লেখক, কলামিস্ট, ব্যাংকার ও গবেষক
মুসলমানদের সবচেয়ে বড় উৎসব ঈদুল ফিতর
