স্টাফ রিপোর্টারঃ মৌলভীবাজারে বড় অংকের কমিশন পেয়ে শিক্ষার্থীদের নিষিদ্ধ সহায়ক গাইড বই কিনতে বাধ্য করছেন কতিপয় অসাধু শিক্ষক। কমিশন প্রাপ্ত প্রকাশনীর গাইড ছাড়া অন্য প্রকাশনীর গাইড কিনতে দিচ্ছেন না শিক্ষার্থীদের। আবার কেউ কেউ কিনলেও এটা মেনে নিচ্ছেন না কমিশন প্রাপ্ত শিক্ষকরা। বাধ্য হয়ে শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের দেয়া নির্ধারিত প্রকাশনীর গাইড কিনছেন। এনিয়ে অনেক শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। শিক্ষকদের হয়রানির ভয়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ করতে পারছেন না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোনো কোনো বিদ্যালয়ে পাঠদান চলা অবস্থায় অফিসে বসেই শিক্ষকদের সাথে বৈঠক করছেন নিষিদ্ধ গাইড সরবরাহকারী প্রকাশনার প্রতিনিধিরা। আবার অনেক প্রকাশনীর প্রতিনিধিরা সাদা কাগজে নির্ধারিত গাইডের প্রাপ্তি স্থান লিখে শিক্ষকদের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের হাতে হাতে সরবরাহ করছেন।
এদিকে গাইড বিক্রি নিষিদ্ধ হলেও প্রকাশ্যে জেলার প্রতিটি উপজেলা ও বড় বড় বাজারে বিক্রি হচ্ছে। প্রশাসন দেখেও না দেখার বান করছে। জেলার সচেতন অভিভাবকরা বলছেন, প্রশাসন কঠোর হলে এভাবে প্রকাশ্যে লাইব্রেরীতে গাইড বিক্রি হতো না। শিক্ষকরাও শিক্ষার্থীদের হাতে তালিকাও সরবরাহ করতে পারতেন না। অভিভাবকরা বলছেন, অধিকাংশ শিক্ষার্থী ইতিমধ্যে গাইড বইয়ের উপর নির্ভর হয়ে পড়েছে। যার ফলে সরকারের সৃজনশীল পদ্ধতির মহতি উদ্যোগ ভেস্তে যাচ্ছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, জেলার জুড়ী উপজেলার জায়ফরনগর উচ্চ বিদ্যালয়ে পাঠ্যবই সহায়ক তালিকা ২০২০ নামে পপি প্রকাশনীর একটি গাইড বইয়ের তালিকা শিক্ষার্থীদের হাতে হাতে সরবরাহ করছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। ওই তালিকায় গাইড বই প্রাপ্তি স্থানও লেখা রয়েছে। নাম গোপন রাখার শর্তে বিদ্যালয়ের একজন অভিভাবক বলেন, শিক্ষকরা পপি প্রকাশনীর গাইড বই কিনতে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করছেন। এ বিদ্যালয়ে অন্য কোনো প্রকাশনীর গাইড বই চলে না। রাজনগর উপজেলার আশ্রাকাপনে চাইল্ড হেভেন কেজি এন্ড প্রি ক্যাডেট স্কুলে শিক্ষকরাও গাইড বই প্রাপ্তি স্থান হিসেবে মৌলভীবাজার শহরের একটি লাইব্রেরীর নাম সহ নির্দিষ্ট প্রকাশনীর তালিকা শিক্ষার্থীদের হাতে সরবরাহ করছেন। নির্ধারিত প্রকাশনীর গাইড ছাড়া অন্য কোনো প্রকাশনীর গাইড বই ওই বিদ্যালয়ে গ্রহণ যোগ্য নয়। এদিকে লাইব্রেরী ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত মৌলভীবাজার টাউন কামিল মাদ্রাসার এক শিক্ষক উনার লাইব্রেরী থেকে গাইড বই কিনতে অনেকটা বাধ্য করছেন ওই মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের। অভিযোগ রয়েছে বড় অংকের কমিশন পেয়ে ওই শিক্ষক নির্দিষ্ট প্রকাশনীর গাইড কিনতে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের বাধ্য করছেন।
এদিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এক শ্রেণির অসাধু শিক্ষক ও শিক্ষক সমিতির যোগসাজশে গাইড প্রকাশনীর বিক্রয় প্রতিনিধি ও গাইড বিক্রেতা দোকান মালিকরা জেলা জোড়ে গড়ে তুলেছে একটি বড় সিন্ডিকেট। আর শিক্ষকরাও নোট ও গাইড বই কিনতে শিক্ষার্থীদের পরামর্শ দিচ্ছেন।
অভিভাবকদের অভিযোগ, শিক্ষাব্যবস্থা সৃজনশীল হলেও শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তা ও প্রশাসনের নিরবতার কারণে মৌলভীবাজার জেলায় গাইডে সয়লাব। শিক্ষা বছর শুরুর প্রথম থেকেই বাজারে ছাড়া বিভিন্ন প্রকাশনীর চড়া মূল্যের কথিত এ গাইড শিক্ষার্থীদের কিনতে পরামর্শ দিচ্ছেন শিক্ষকরা।
নাম গোপন রাখার শর্তে এক শিক্ষক বলেন, বছরের শুরুতেই গাইড প্রকাশনীর প্রতিনিধিরা শিক্ষকদের বড় অংকের ডোনেশন দেন। পরবর্তীতে শিক্ষকরা ওই প্রকাশনী গাইড কিনতে বাধ্য করেন শিক্ষার্থীদের। এই বাণিজ্যের সাথে প্রায় দুই তৃতীয়াংশ শিক্ষক জড়িত।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এম এ ওয়াদুদ বলেন, কোনো শিক্ষক নিষিদ্ধ গাইড বই বিক্রির সাথে জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মৌলভীবাজারে কমিশন পেয়ে নিষিদ্ধ গাইড বই কিনতে বাধ্য করছেন শিক্ষকরা
