স্টাফ রিপোর্টারঃ মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ব নির্ধারিত মতবিনিময় সভা স্থগিত নিয়ে জেলা জোড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সহ জেলা জোড়ে চলছে আলোচনা সমালোচনা। কেউ কেউ বলছেন জেলা কমিটি করার সময় আত্মীয় করণ করা হয়েছে আবার কেউ কেউ বলছেন পদ পেয়ে কমিটির অনেকই অনিয়ম ও দুর্নীতির সাথে জড়িয়ে পড়েছেন। যার কারণে তারা কেন্দ্রীয় নেতার মুখোমুখি হতে চাচ্ছেন না।
জানা যায়, বুধবার সকাল ১১টায় মৌলভীবাজার পৌরসভা মিলনায়তনে পূর্ব নির্ধারিত জেলা আওয়ামী লীগের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অভ্যন্তরীণ দলীয় কোন্দলের কারণে মতবিনিময় সভা হয়নি। বিভিন্ন স্থান থেকে নেতাকর্মীরা এসে উপস্থিত হলেও সভা না হওয়ায় তাদেরকে বিদায় করে দেয়া হয়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, দীর্ঘ দীর্ঘ দিন যাবত মৌলভীবাজার জেলা আ’লীগে ¯œায়ূ দ্বন্দ্ব চলছে। কমিটিতে এক বলয়ের বেশি লোক থাকায় অন্যান্যদের জিম্মি করে রাখা হয়েছে। উপজেলা পর্যায়ের নতুন কমিটিতেও তাদের অনুসারীদের প্রাধান্য দিয়ে কমিটি গঠন করার অভিযোগ রয়েছে জেলা নেবৃবৃন্দের বিরুদ্ধে। এনিয়ে অনেক নেতাকর্মীরা মুখ খুলে কিছু বলতে পারছেন না। একই বলয়ের আধিপত্য চলছে জেলা আ’লীগে। জেলা পর্যায়ে দলের ত্যাগি অনেক নেতাকেও কমিটিতে স্থান দেয়া হয়নি। এনিয়ে একাংশের নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। এসময় বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চেয়ে ছিলেন জেলার একাংশের নেতাকর্মীরা।
জেলা আ’লীগ সূত্রে জানা যায়, কেন্দ্রীয় সিদ্ধন্তের আলোকে বুধবারের মৌলভীবাজারে মতবিনিময় সভা হওয়ার কথা ছিল। সুনামগঞ্জের সভা শেষ করে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন শফিক ৪০ জনের একটি বহর নিয়ে মৌলভীবাজার আসেন। গ্র্যান্ড সুলতানে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের থাকা ও খাবারের ব্যবস্থা করা হয় এবং অন্যান্য সফর সঙ্গীদের থাকা ও খাবারের জন্য রিসোর্ট বুকিং দেয়া হয়। কিন্তু মঙ্গলবার রাত ১২ টা পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদককে রিসিভ করার জন্য জেলা নেতৃবৃন্দ অপেক্ষায় ছিলেন। কিন্তু পরে কেন্দ্রীয় ওই নেতা হঠাৎ ফোন দিয়ে বলেন, তিনি অন্য জায়গায় রাত্রি যাপন করবেন। সকালে আমাদের সাথে দেখা হবে। পরে অপেক্ষামান জেলা নেতৃবৃন্দ জানতে পারেন তিনি জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক মোঃ কামাল হোসেনর সাথে সমন্বয় করে একটি টি ভ্যালিতে রাত কাটাচ্ছেন।
জেলা আওয়ামীলীরেগ সাধারণ সম্পাদক মিছবাউর রহমান যুগান্তরকে বলেন, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন শফিক আমাদের ভাইপাস করে জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক মোঃ কামাল হোসেনের মাধ্যমে অন্য জায়গায় রাতে থাকেন। যার কারণে জেলা নেতৃবৃন্দের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য আমি ও সভাপতি পরামর্শ করে মতবিনিময় সভা স্থগিত করি। জেলা কমিটিতে দুর্নীতিবাজ ও চাঁদাবাজ রয়েছেন এমন অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন। তিনি আরও বলেন, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ভেল্যিতে গিয়ে নাচ-গান করেছেন।
এদিকে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক যুগান্তরকে বলেন, মৌলভীবাজার জেলা কমিটিতে অনেক সাংগঠনিক দুর্বলতা রয়েছে। কমিটিতে অনেক দুর্নীতিবাজ ও চাঁদাবাজ রয়েছেন। তাদেরকে দমন করে দলকে সু-সংগঠিত করার জন্যই মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। কিন্তু সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দুই মেরুতে অবস্থান করায় সভা স্থগিত করা হয়েছে। কারণ তাদের দু’জনের উপস্থিততেই এসবের সমাধান করতে হবে। ওই জেলা কমিটি গঠনের সাড়ে ৩বছর হলেও এখন পর্যন্ত উপজেলা কমিটিকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দিতে পারেননি।
এক প্রশ্নের জবাবে সাখাওয়াত হোসেন শফিক যুগান্তরকে বলেন, যে যতো বড়ই প্রভাবশালী হোক না কেন। সে এমপি হতে পারে কিংবা মন্ত্রী হতে পারে কাউ কেই ছাড় দেয়া হবে না। বিশেষ করে সভাপতি-সম্পাদক এক সঙ্গে উপস্থিত থাকা জরুরী। সভাপতি-সম্পাদক দু’জনকে নিয়েই সভা করে এখানকার অভিযোগের সমাধান করতে হবে। যেহেতু আজকে সভাপতি অনুপস্থিত, সে কারণে খুব শীঘ্রই আবার সভার আহবান করা হবে।
তবে সভায় যোগদান না করে নাচ-গানে উপস্থিত হয়েছেন এমন অভিযোগ অস্বীকার করে, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন শফিক বলেন, “কোথায় নাচ-গানে অংশ নিয়েছি, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিছবাহকে এসবের তথ্য প্রমাণ দিতে হবে।
মৌলভীবাজার জেলা আ’লীগের সভা স্থগিতের নেপথ্যে
