হোসাইন আহমদ ঃ
শান্তির জেলা মৌলভীবাজার ২০২০ সালের শুরুতেই যেন অশান্ত হয়ে উঠেছে। বছরের প্রথম মাসের মধ্যেই ৬ জন খুন, ভয়াবহ অগ্নিাকান্ডে একই পরিবারের ৫ জন নিহত ও সড়ক দূর্ঘটনায় ৬জন নিহত হয়েছেন। ঘটছে ধর্ষণ, সংঘর্ষ, হতাহত, আত্মহত্যা ও চুরিসহ নানা ঘটনা। এ ঘটনা গুলোর কারণে দেশের মধ্যে অনেকটা নৈতিবাচক আলোচনায় এসেছে মৌলভীবাজার। আতষ্কে রয়েছেন জেলার ২০ লক্ষ মানুষ। জেলাবাসীর মুখে মুখে, চায়ের দোকানে, অফিসে কিংবা ফুটপাতে এঘটনা নিয়ে প্রতিনিয়ত চলছে আলোচনা সমালোচনা।
বছরের প্রথম মাসেই এমন লোমহর্ষক ঘটনায় হতবাক জেলাবাসী। শান্তির জেলা যেনো দিন দিন অশান্তিতে পরিণত হচ্ছে। তবে এজন্য জেলার সচেতন নাগরিকরা যুব সমাজের নৈতিক অবক্ষয়, বিচার হিনতা এবং একদলীয় শাসন ব্যবস্থাকে দায়ী করছেন।
জানা যায়, চায়ের রাজধানী খ্যাত প্রবাসী অধ্যূষিত এ জেলার অধিকাংশ প্রবাসী শীত মৌসুমে বাংলাদেশে বেড়াতে আসেন। কিন্তু বছরের শুরুতেই আলোচিত একাধিক ঘটনার কারণে অনেকেই দেশে আসতে চাচ্ছেন না। আবার কেউ কেউ আসলেও কিছু দিন থেকে চলে যাচ্ছেন।
১ জানুয়ারী থেকে ২১ জানুয়ারী মধ্যে উল্লেখ যোগ্য ঘটনা সমূহের মধ্যে রয়েছে, ৩ জানুয়ারী মৌলভীবাজারের কুলাউড়া পৌর শহরে গৃহপরিচারিকা পরিচয়ে আশ্রয় নেয়া প্রতারক চক্র প্রবীণ শিক্ষকের বাসা লুটপাট করে নিয়ে যায়, পরিবারে অভাব অনটনের কারনে ১১ জানুয়ারী কমলগঞ্জ উপজেলায় মহিবা আক্তার নামে এক যুবতী বিষপানে আত্মহত্যা করে, ১৩ জানুয়ারী জুড়ীতে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে, ১৪ জানুয়ারী শ্রীমঙ্গল ফিনলে চা কোম্পানীর বুড়বুড়িয়া চা বাগান এলাকায় গাছের সাথে বাঁধা অবস্থায় স্কুল ছাত্র ইব্রাহিম মিয়া রকির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ, একই দিন কুলাউড়া-জুড়ী আঞ্চলিক মহাসড়কের আচুরী ঘাট এলাকায় সড়ক দূর্ঘটনায় ২ জন নিহত ও ১ জন আহত হন। ১৬ জানুয়ারী রাজনগর উপজেলা চেয়ারম্যান শাহাজান খাঁন ও উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক মিলন বখতের অনুসারীদের মধ্যে উপজেলা চত্বরে দাওয়া পাল্টা দাওয়ার ঘটনায় ২জন আহত হয়, আপত্তিকর ছবি তোলা ও ইভটিজিং এর প্রতিবাদ করায় ১৭ জানুয়ারী রাজনগর উপজেলায় আলাল নামের এক লোককে আহত করেছে সন্ত্রাসীরা। হাকালুকি হাওরপারের একটি বিলে মাছধরাকে কেন্দ্র করে ১৭ জানুয়ারী দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় উভয় পক্ষের ১০ জন গুরুত্বর আহত হন। একই দিন বড়লেখার সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালকসহ ৩ যুবককে কুলাউড়ায় দুর্বৃত্তদের হামলায় আহত হন। ১৮ জানুায়ারী শ্রীমঙ্গলের সাতগাঁও এলাকায় ট্রেনে ছোড়া ঢিলে দুই বছরের এক শিশু গুরুত্বর আহত হয়। ১৯ জানুয়ারী বড়লেখা উপজেলায় স্ত্রী-শাশুড়ি ও দুই প্রতিবেশীকে হত্যা করে আত্মহত্যা করে ঘাতক নির্মল। এসময় একজন গুরুত্বর আহত হন। উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের পাল্লাতল চা বাগানে এ ঘটনা ঘটে। একই দিন কুলাউাড় উপজেলা থেকে অস্ত্রসহ এক ভারতীয় নাগরিককে আটক করে পুলিশ। ২০ জানুয়ারী মৌলভীবাজার সদর উপজেলার আখাইলকুড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সহ-সাধারণ সম্পাদক মোঃ শামিম আহমদকে জায়গা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে কুপিয়ে গুরুত্বর আহত করে প্রতিপক্ষ। ২১ জানুয়ারী মৌলভীবাজার পৌর শহরের হিলালপুর এলাকায় রাজন আহমদ নামের এক হত্যা মামলার আসামীকে ধরে নিয়ে হত্যা করা হয়। ২২ জানুয়ারী রাতে জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার পতনঊষার ইউনিয়নের বৈদ্যনাথপুর গ্রামে নিজাম উদ্দীনের বাড়িতে ডাকাতি সংঘটিত হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ২৩ জানুয়ারী মৌলভীবাজার সদর উপজেলার মৌলভীবাজার-সিলেট আঞ্চলিক মহা সড়কের থানাবাজার এলাকায় রাস্তা পারাপারের সময় দ্রুতগামি একটি ট্রাকের চাপায় ঘটনাস্থলেই এক মহিলা নিহত হন। ২৩ জানুয়ারী রাতে কমলগঞ্জ উপজেলার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান থেকে ১২টি গাছ কটে চুরি হয়। ২৪ জানুয়ারী রাতে বড়লেখা থানা পুলিশ পৌরশহরের মাইজপাড়ায় রিয়াজ উদ্দিনের বসত বাড়িতে বিশেষ অভিযান চালিয়ে ১১ বোতল বিদেশী মদ, ৭৫০ গ্রাম গাজা ও রেজিষ্ট্রেশন বিহীন একটি মোটর সাইকেল উদ্ধার ও দুই যুবককে গ্রেফতার করে। ২৭ জানুয়ারী কমলগঞ্জে ট্রলি থেকে পড়ে ট্রলির চাপায় এক মাটি শ্রমিকের মৃত্যু হয় এবং একই দিন বড়লেখা উপজেলার নিজ বাহাদুরপুর গ্রামের এক দিনমজুরের ছেলে (৬) মাঠে খেলা করতে গেলে আমির উদ্দিন শিশুটিকে শসা খাওয়ানোর লোভ দেখিয়ে সবজি ক্ষেত পাহারার একটি বাসায় নিয়ে বলৎকার করে। ২৮ জানুয়ারী মৌলভীবাজার পৌর শহরের সেন্টাল রোডের পিংকি ষ্টোরে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে একই পরিবারের ৩জন সহ ৫ জন পুড়ে মারা যান এবং একই দিন সদর উপজেলার মৌলভীবাজার-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের বাউরভাগ এলাকায় সিএনজি চালিত অটোরিক্সা ও পিকআপ ভ্যানের মুখোমুখি সংঘর্ষে ২ জন নিহত হন। ৩১ জানুয়ারী শমশেরনগর চা বাগানের নারায়ণ টিলার এক কিশোরী (১২) পাশের চা প্লান্টেশন এলাকায় প্রাকৃতিক কাজ সারতে গেলে একই এলাকার সজিব মাঝি (২৪) নামের এক লোক কিশোরীকি ধরে নিয়ে নির্জন স্থানে আটকিয়ে ধর্ষণ করে।
এবিষয়ে সম্মিলিত সামাজিক উন্নয়ন পরিষদ মৌলভীবাজারের সভাপতি খালেদ চৌধুরী বলেন, সামাজিক অবক্ষয়ের কারণে এমন ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে। যার কারণে আমাদের পারিবারিক বন্ধন আরও মজবুত করতে হবে। প্রশাসনিক দিক দিয়েও আরও জোর দেয়ার তাগিদ দেন তিনি।
জেলা পুলিশ সুপার মোঃ ফারুক আহমদ বলেন, “আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি বলতে আমরা ডাকাতি, চুরি ও ছিনতাইকে বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকি। তবে এক্ষেত্রে মৌলভীবাজার অনেকটা নিয়ন্ত্রিত। তবে মাঝে মধ্যে দ্’ুএকটি ঘটনা ঘটছে যা দিয়ে পুরো আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি মূল্যায়ন করা যায় না। বাৎসরিক পরিসংখ্যানে মৌলভীবাজার অনেক শান্ত রয়েছে।
মৌলভীবাজার-হবিগঞ্জ আসনের সংরক্ষিত মহিলা সংসদ সদস্য সৈয়দা জহুরা আলাউদ্দিন বলেন, এগুলো আগেও ছিল, এখনও আছে। তবে এগুলোকে সামাজিক অবক্ষয় বলা যায়না। যে কেউ অপরাধী হোক না কেন সবাইকেই আইনের আওতায় আনা হবে।
বছরের প্রথম মাস-মৌলভীবাজারে থামছে না খুন ও ধর্ষণ
