বড়লেখা প্রতিনিধিঃ
মৌলভীবাজারের বড়লেখায় আবিদা সুলতানা (৩৫) নামে এক নারী আইনজীবীকে হত্যা করা হয়েছে। রোববার রাত আনুমানিক আড়াইটার দিকে উপজেলার দক্ষিণভাগ উত্তর ইউপির মাধবগুল গ্রামের পৈতৃক বাড়ি থেকে পুলিশ তাঁর লাশ উদ্ধার করেছে। রোববার বেলা বারোটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টার যেকোনো সময় তাঁকে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
নিহত আবিদা উপজেলার দক্ষিণভাগ উত্তর ইউপির মাধবগুল গ্রামের মৃত আব্দুল কাইয়ুমের মেয়ে।
খবর পেয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ও বড়লেখা থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এদিকে ঘটনার পর থেকে আবিদার পৈতৃক বাড়িতে থাকা ভাড়াটিয়া তানভীর আহমদকে (৩০) পলাতক রয়েছেন।
থানা পুলিশ, স্থানীয় ও নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার দক্ষিণভাগ উত্তর ইউপির মাধবগুল গ্রামের মৃত আব্দুল কাইয়ুমের তিন মেয়ে রয়েছে। স্ত্রী মানসিক ভারসাম্যহীন। তিনি দ্বিতীয় মেয়ের বাড়ি বিয়ানীবাজারে থাকেন।
আব্দুল কাইয়ুমের তিন মেয়ে বিবাহিত। তাদের মধ্যে আবিদা সুলতানা (৩৫) বড়। আবিদা মৌলভীবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের আইনজীবী। আবিদার স্বামী শরীফুল ইসলাম একটি ওষুধ কোম্পানীতে কর্মরত রয়েছেন। তিনি স্বামীর সঙ্গে মৌলভীবাজারে শহরে বসবাস করতেন।
এদিকে তাদের পৈতৃক বাড়িতে ভাড়াটিয়া হিসেবে উপজেলার চরকোনা গ্রামের মনির আলীর ছেলে তানভীর আহমদ থাকতেন। ২৬ মে রোববার সকাল আনুমানিক সাড়ে ৮টায় আবিদা বিয়ানীবাজারে বোনের বাড়িতে থেকে জরুরী প্রয়োজনে বাবার বাড়িতে যান। বিকেল আনুমানিক চারটার দিকে আবিদার বোন তার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাচ্ছিলেন না।
পরে আবিদার বোনেরা তাকে খুঁজতে বাবার বাড়ি দক্ষিণভাগ উত্তর ইউপির মাধবগুল গ্রামে আসেন। বাড়িতে এসে তারা কাউকে পাননি। এসময় ঘরের একটি কক্ষ তালা দেখতে পেয়ে তাদের সন্দেহ হয়। পরে তারা পুলিশ নিয়ে গিয়ে তালা ভেঙে বোনের লাশ মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখেন।
নিহত আবিদার বোনের স্বামী মারুফ আহমদ বলেন, সকালে আবিদা আপা মৌলভীবাজারে যাওয়ার জন্য সকালে আমাদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েন। দুদিন আগে তিনি আমাদের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন। রবিবার সকালে সেখান থেকে বাবার বাড়িতে যান। এরপর থেকে তার কোনো খোঁজ মিলছিল না।
পরে আমার স্ত্রী খুজতে এখানে (মাধবগুলে) আসেন। এখানে ঘরে প্রবেশ করে একটি কক্ষ তালাবদ্ধ পান। পরে পুলিশ নিয়ে গিয়ে তালা ভেঙে তার লাশ উদ্ধার করেছে।
বড়লেখা থানার ওসি ইয়াছিনুল হক বলেন, নিহতের মাথায় ও গলায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরী করা হয়েছে। তানভিরের মা ও স্ত্রীকে আটক করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
ভাড়াটিয়া পরিবার আটক
মৌলভীবাজারের বড়লেখায় নারী আইনজীবী হত্যাকান্ডের ঘটনায় মাওলানা তানভীর আহমদ (৩৫) নামের একজন কে আটক করা হয়েছে। সোমবার বেলা ১টায় শ্রীমঙ্গলের বরুনা এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়। আটক তানভীর আহমদ বড়লেখা উপজেলার চরকোনা এলাকার ময়নুল আলমের ছেলে। তানভীর বড়লেখা উপজেলার মাদবকুল জামে মসজিদের ইমাম।
শ্রীমঙ্গল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুস সালেক বলেন, বরুনা এলাকা থেকে তানভীর আহমদ আটক করা হয়। পরে তাকে মৌলভীবাজার পুলিশ সুপার কার্যালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। এ ঘটনার পর ভাড়াটিয়া তানভিরের মা ও স্ত্রীকে আটক করা হয়েছিল।
আদালত বর্জন ও বিক্ষোভ
আইনজীবি আবিদা সুলতানা হত্যার প্রতিবাদে ও আসামীদের গ্রেফতার করে শাস্তির দাবিতে সারাদিন আদালত বর্জন, মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে জেলা আইনজীবী সমিতি।
দুপুরে জেলা আইনজীবি সমিতির উদ্যোগে কোর্ট বর্জন, আদালত চত্বরে মানব বন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশে সকল স্তরের আইনজীবিরা অংশ গ্রহন করেন। এসময় বক্তব্য রাখেন- জেলা আইনজীবি সমিতির সভাপতি এডভোকেট এ এস এম আজাদুর রহমান আজাদ, সাধারন সম্পাদক মো: কামরেল আহমেদ চৌধুরী। বক্তারা বলেন- অভিলম্বে আসামীকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। এসময় অপরাধীর পক্ষে কোনও আইনজীবি আইনী লড়াই করবেন না বলেও ঘোষণা দেন।
বড়লেখায় নারী আইনজীবিকে হত্যা, ভাড়াটিয়া পরিবার আটক
