কমলগঞ্জ প্রতিনিধি:
গত বছরের টানা ভারী বৃষ্টিতে টিলার উপর থেকে নেমে যাওয়া ঢলের পানিতে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভিতর অনেক গাছের গোড়ার মাটি সরে গিয়ে নিচের শিকড় বের হয়ে যায়। এমনিভাবে বিরল আফ্রিকান একমাত্র টিকওক গাছের গোড়ার মাটি সরে নিচের শিকড় বের হয়েছিল। গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে আবারও এ টিকওক গাছের গোড়ার মাটি সরে নিচে ছোট গর্তের সৃষ্টি হয়। বিরল এ গাছটিকে ঝুঁকিমূক্ত করতে খাসিয়া পুঞ্জির ৩০ যুবক স্বেচ্ছ্াশ্রমে বস্তা ভরে মাটি এনে গাছটিকে ঝুঁকিমুক্ত করেন। শনিবার (২ মার্চ) সকাল ১০টা থেকে লাউয়াছড়া খাসিয়া পুঞ্জির তরুন ডিমন খাসিয়া,রিনাল লামিন ও শামীম পাম্পবেটের নেতৃত্বে ৩০ তরুন স্বেচ্ছা শ্রমে বস্তা ভরে মাটি এনে ঝুঁকিপূর্ণ আফ্রিকান টিকওক গাছের গোড়ায় মাটি ভরাট কাজ শুরু করেন। তাদের একটি ভাবনা যে কোন ভাবেই হোক এই বিরল গাছটি যাতে শিকড়শুদ্ধ উপড়ে না পড়ে। এটিকে রক্ষা করতেই হবে। স্বেচ্ছাশ্রমে অংশগ্রহনকারী তরুন ডিমন খাসিয়া বলেন, বন ও পরিবেশ রক্ষা করতে হলে বনে গাছকে রক্ষা করতে হবে। সে চিন্তায় তারা এ গাছের গোড়ায় মাটি ভরাট করেছেন। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ইকো ট্যুর গাইড ও খাসিয়া এসোসিয়েশন কাউন্সিলের প্রচার সম্পাদক সাজু মারছিয়াং বলেন, এ উদ্যানের ভিতের রেলপথ ও বন বিশ্রামাগারের মাঝখানে আগে প্রায় ১০০ ফুট উচ্চতার একটি আফ্রিকান টিকওক গাছ ছিল। সে গাছটিকে সবাই ক্লোরফরম গাছ হিসেবে জানতো। কয়েক বছর আগে এভাবে গাছের গোড়ার মাটি সরে গিয়ে প্রথমে গাছটি হেলে পড়ে গাছটি ভেঙ্গে পড়ে। এ বনে এজাতের মাত্র দুটি গাছ ছিল। এ গাছটি থেকে প্রায় ৫০ গজ দক্ষিণে মসজিদের কাছে অবশিষ্ট একমাত্র আফ্রিকান টিকওক গাছ রয়েছে। গত বছরের টানা ভারী বৃষ্টিতে পাহাড়ি টিলা থেকে নেমে আসা ঢলের পানির ¯্রােতে এ গাছটির গোড়া মাটি সরে শিকড় বের হয়ে যায়। গত মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবারের বৃষ্টিতে আবারও পানির ¯্রােতে এ গাছটির গোড়া থেকে মাটি সরে গিয়ে গোড়ায় গর্তের সৃষ্টি হয়ে গাছটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। লাউয়াছড়া খাসিয়া পুঞ্জির হেডম্যান ফিলা পত্মী বলেন, এ বনে অবশিষ্ট একমাত্র আফিকান টিকওক গাছটিকে রক্ষায় বন্যপ্রানী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তার পরামর্শে লাউয়াছড়া খাসিয়া পুঞ্জির ৩০জন তরুন মিলে স্বেচ্ছাশ্রমে বস্তা ভরে মাটি এনে আফ্রিকান টিকওক গাছের গোড়ায় দেয়। তরুনরা গাছের গোড়ায় মাটি নিয়ে বের হয়ে যাওয়া শিকড় ঢেকে দেয়। এই বনে এ জাতের মাত্র ২টি গাছ ছিল। কয়েক বছর আগে একটি ভেঙ্গে পড়েছে। এখন বাকি রয়েছে এ গাছটি মাত্র। লাউয়াছড়া বনবিট কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন,তরুনরা স্বেচ্ছায় ঝুুঁকিপূর্ণ গাছের গোড়ায় মাটি ভরাট করে। তাদের এ কাজের নির্দেশনা ও উৎসাহ দিয়েছেন বন্যপ্রানী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এম এ মুহিত চৌধুরী ও বন বিভাগ।